পুরনো উড়োজাহাজ ক্রয় - যন্ত্রাংশ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে
রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরেএয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজ রয়েছে দুটি।পুরনো এসব উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটিপ্রায় নিয়মিত। তার পরও বহর থেকে বাদযাচ্ছে না এগুলো। এর কারণ হিসেবেবিশেষজ্ঞরা বলছেন, যন্ত্রাংশ বাণিজ্যটিকিয়ে রাখতেই মূলত বহরে রাখা হচ্ছেপুরনো এসব উড়োজাহাজ।সর্বশেষ এয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজেবিজি-০৮৫ ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখাদেয় গত শনিবার। ওইদিন স্থানীয় সময়বিকাল ৪টায় সিঙ্গাপুরের চাঙ্গিবিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর পরইউড়োজাহাজটিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। পরেত্রুটি মেরামতের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়পুনরায় উড্ডয়ন করে উড়োজাহাজটি। ঢাকায়আসার পথে ইঞ্জিনে আগুন লাগার সংকেতপেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে হযরতশাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেউড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করে। এ ঘটনায়আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এয়ারবাস-৩১০উড়োজাহাজে একের পর এক ত্রুটি দেখাদেয়ার পরও এগুলো বহরে রাখার নেপথ্যেরয়েছে বিপুল অঙ্কের যন্ত্রাংশ কেনারবাণিজ্য। যদিও এতে লোকসান গুনতে হচ্ছেসরকারকে। এর আগে ২০১২ সালেএয়ারবাস-৩১০-এর ডি-চেক (হেভিচেক)করাতে গিয়ে বিমানকে ৩১০ কোটি টাকাঅতিরিক্ত গচ্চা দিতে হয়। তারও আগে দুবাইবিমানবন্দরে একইভাবে একটি এয়ারবাসেরইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে সেটি আর দেশেআনা সম্ভব হয়নি। সেখানেই ওই এয়ারবাসটিস্ক্র্যাপ করে বিক্রি করে দিতে হয়। এছাড়াপ্রায়ই উড়োজাহাজে কোনো ত্রুটি দেখাদিলে জ্বালানি তেল ফেলে দিয়ে সেটিজরুরি অবতরণ করাতে হয়। একই ঘটনা ঘটেগত শনিবারও। এতেও বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চাদিতে হয় বিমানকে।বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্যকাজী ওয়াহেদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন,উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশ পরিবর্তনেরনামে বিমান কর্মকর্তাদের কমিশনবাণিজ্যের অভিযোগ বহু পুরনো। এ থেকেবেরিয়ে আসতে হলে বিমানেরব্যবস্থাপনাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।এ বিশেষজ্ঞ বলেন, বিমানের বহরেবর্তমানে যেসব এয়ারবাস-৩১০ রয়েছে,সেগুলো অনেক পুরনো। এ কারণে এগুলোরপরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও অনেকবেশি। তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগেরজনবল যদি পেশাজীবী মনোভাব বজায় রেখেকাজ না করে, সেক্ষেত্রে পুরনো উড়োজাহাজেযান্ত্রিক ত্রুটি থেকে যাওয়ার শঙ্কারয়েছে। এতে যাত্রীসহ উড়োজাহাজদুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।শনিবারের ওই ঘটনা নিয়ে বিমানের পক্ষথেকে গতকাল আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়াহয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ঢাকায় নামারআধঘণ্টা আগে বৈমানিক ২ নম্বর ইঞ্জিনেআগুন লাগার সংকেত পান। ওই অবস্থায় তিনিতাত্ক্ষণিক ঢাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ‘জরুরিঅবতরণের’ বার্তা পাঠান। তবে শেষ পর্যন্তযাত্রীদের নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেউড়োজাহাজটি।অবতরণের পর উড়োজাহাজটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইঞ্জিনে আগুন লাগার কোনোনমুনা পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেছেবিমান কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ফায়ারওয়ার্নিং সিস্টেমের ‘ভুল সংকেত’-এরকারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনকরা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিমান।তবে বিমানের একাধিক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকায়অবতরণের আগে উড়োজাহাজটিতে হাইড্রোলিকলিকেজও ধরা পড়ে। তখন বৈমানিক জরুরিঅবতরণের প্রস্তুতি নেন। এছাড়াউড়োজাহাজটি রানওয়েতে নামার সময় ধোঁয়াদেখা যায়। পাশাপাশি বিমানবন্দরেরঅগ্নিনির্বাপক দলকেও তত্পর দেখা যায়।প্রসঙ্গত, হাইড্রোলিক লিকেজ হলে সাধারণতউড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার আটকে যায়।এক্ষেত্রে চাকা নামানো সম্ভব না হওয়ায়বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।বিমানের বহরে এয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজযুক্ত হয় ১৯৯০ সালে। সে সময় সম্পূর্ণ নতুনঅবস্থায় দুটি এয়ারবাস-৩১০ কেনা হয়। এরমধ্যে একটি উড়োজাহাজ দুবাইয়ে দুর্ঘটনায়পড়ে অচল হয়ে যায়। পরে আরো একটিএয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজ পাঁচ বছরেরচুক্তিতে লিজ নেয়া হয়, পরবর্তীতে যাকিনে নেয় বিমান। এ উড়োজাহাজ উড্ডয়নঅনুপযোগী হয়ে প্রায় দুই মাস সিঙ্গাপুরেরচাঙ্গি বিমানবন্দরে পড়ে ছিল। এছাড়া২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আরেকটিএয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজের বডিতে ফাটলধরে। ওই সময় উড়োজাহাজটিতে বড় ধরনেরক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এটিঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে চলাচল করছে।
শেয়ার করুন