অস্ট্রেলিয়ার দাবনলের প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ল বাংলাদেশে
আগুন লেগেছে অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে। দাবানলে দাউ দাউ করে জ্বলছে মহাদেশটি। সে আগুনের উষ্ণতা ছড়াচ্ছে ঢাকায়। আগুনের আঁচে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। দাবানলের প্রভাবে ঢাকায় প্রতি কেজি ডালের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, আমাদের দেশে যে ডাল আমদানি হয় সেগুলোর বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়া থেকে আসে। অস্ট্রেলিয়ায় দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও বেড়েছে। যদিও বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশী ডালের দামও বেড়েছে সমান তালে।
রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি অস্ট্রেলিয়ান মসুরের ডাল বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ ডাল বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। আর দেশী ডাল হিসেবে পরিচিত সরু দানার মসুর ডাল গতকাল ১১০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হলেও এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯৫ থেকে ১১০ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বছরে মসুর ডালের চাহিদা পাঁচ লাখ টনের মতো। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মসুর ডাল আমদানি হেেয়ছে দুই লাখ ৬১ হাজার টন। দেশে উৎপাদিত হয়েছে দুই লাখ ৫১ হাজার টন। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহ ছিল।
অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা না হলেও লাগাম হারিয়েছে ভোজ্যতেলের দাম। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১১২ টাকায়। আগের সপ্তাহে দাম ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি পাম অয়েল গতকাল বিক্রি হয় ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। এক মাস আগে এ দাম ছিল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের করকাঠামোকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মে মাসে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি মূল্য ছিল ৬৫৪ ডলার। এতে ভ্যাট দাঁড়াত আট হাজার ৭০০ টাকা, প্রতি লিটারে আট টাকা ৭০ পয়সা। গত ২০ ডিসেম্বর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম টন-প্রতি ৭৯৪ ডলারে উঠেছে। এ দরের ওপর নতুন বাজেটের ভ্যাট-কাঠামো ও অগ্রিম কর বিবেচনায় নিলে সরকারের রাজস্ব দাঁড়ায় লিটারে ১৪ টাকা ৮৫ পয়সা, যা মে মাসের তুলনায় লিটারে প্রায় ছয় টাকা বেশি।
এ দিকে ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা তিনটি সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সরকার উৎপাদন ও ব্যবসায়ীপর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করতে পারে এবং সরবরাহ ও খুচরাপর্যায়ে কমিশনের হার লিটার-প্রতি যথাক্রমে তিন ও পাঁচ টাকা নির্ধারণ করতে পারে। দ্বিতীয় সুপারিশ হিসেবে অগ্রিম কর তুলে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় সুপারিশে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, আমদানি মূল্যে শতকরা হারের পরিবর্তে টন-প্রতি নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট আরোপ করা যেতে পারে। কমিশন বলছে, আমদানিকারকরা যে দামে ঋণপত্র খুলছেন, সেই দামে ভোজ্যতেল এলে বোতলজাত করা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়াবে ১২৪ টাকা, যা এখন ১১০ টাকার মধ্যে। দুই পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, অগ্রিম কর প্রত্যাহার এবং সরবরাহ ও খুচরাপর্যায়ে কমিশন যৌক্তিক করলে সয়াবিন তেলের দাম লিটার-প্রতি ১১০ টাকা রাখা যাবে বলে কমিশন মনে করে।।
ঢাকার বাজারে গতকাল দেশী পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, মিসরের পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা এবং চায়নার পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহের শুরুতে ঢাকার বাজারে দেশী নতুন পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকায় উঠেছিল। তবে দুই দিন পর তা কমে আবার ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় নেমেছে। যদিও এর আগে খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজের কেজি ছিল ১২০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৮০ টাকা, দেশী মুরগি ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। গরুর গোশতের কেজি ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ডজন এবং দেশী মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালিদরে।
বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মলা মাছ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, তাজা পুঁটি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশী চিংড়ি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শেয়ার করুন