‘বিধি ভঙ্গ’ করে আনিসুলের সভা, প্রধানমন্ত্রীর নামে স্লোগান
কার্যত নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে কমিউনিটি
সেন্টারে সভা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটিকরপোরেশনে সরকারি দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীআনিসুল হক, যাতে আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয়নেতাও ছিলেন।সোমবার মোহাম্মদপুরের রিং রোডে সূচনাকমিউনিটি সেন্টারে এই সভায় আওয়ামী লীগসভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারনামেও স্লোগান ওঠে, যা স্থানীয় সরকারপ্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচনের সঙ্গে বিধিমালাবিরোধী।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কর্মকর্তাবলেন, “কোনোকমিউনিটি সেন্টারে নির্বাচনী সভা করাআচরণবিধির লঙ্ঘন। প্রচারণাতে কোনো বাধানেই, তবে সভা বা বৈঠক বিধিপরিপন্থি।”তবে আনিসুল হকের দাবি, তিনি কমিউনিটিসেন্টার ভাড়া নিয়ে সভা করেননি, ফলে তাতেবিধি লঙ্ঘন হয়নি।এ বিষয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তামো. শাহ আলম বলেন, তার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।কমিউনিটি সেন্টারে সভার বিষয়ে তিনি বলেন,“বৈঠক যদি ঘরোয়া হয়, তাহলে কোনো সমস্যানেই। প্রার্থীদের তো প্রচারের সুযোগ দিতেহবে।”আনিসুল হক বলেন, “আমি কমিউনিটি সেন্টারের বারান্দায়পথসভা করেছি। সেখানে মাত্র ১০ মিনিটছিলাম। আচরণবিধি মেনেই এ প্রচারণা চালানোহয়েছে।”কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া কিংবা শোভাযাত্রাবা মিছিল না করায় তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নিবলে দাবি করেন তিনি।২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ‘টেবিল ঘড়ি’প্রতীকের প্রার্থী আনিসুল সোমবার সকালেজনসংযোগ করেন মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেনসিটি, পিসি কালচার এলাকা, তাজমহল রোড,জাকির হোসেন রোড, মোহাম্মদপুর বাজার ওলালমাটিয়া এলাকায়।রিং রোডে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে সভার পরতার এই জনসংযোগ শুরু হয়। সভায় আওয়ামী লীগেরদুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী দীপুমনি এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীরনানক ছিলেন।সভা শুরুর আগে থেকে কমিউনিটি সেন্টারেরভেতরে ও বাহিরে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা প্রচারণার জন্যরিকশায় মাইক লাগিয়ে আসেন, অনেককেই দলীয়স্লোগান দিতে দেখা যায়।স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় স্লোগাননিষিদ্ধ হলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখহাসিনার নামে স্লোগান ছিল আনিসুল সমর্থকদেরমুখে। এর মধ্যে একটি স্লোগান ছিল- ‘শেখহাসিনার সালাম নিন, টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোটদিন’।মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আনিসুলের পক্ষে প্রচারে সক্রিয়রয়েছেন।মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিকসম্পাদক হাসান মাহমুদ শামীম বলেন, তারা কয়েকটিভাগে ভাগ হয়ে দিনের বিভিন্ন সময়েনির্বাচনী প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।ব্যবসায়ী আনিসুল হক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরসমর্থন পাওয়ার পর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীসমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন,যা নিয়ে আলোচনা উঠেছিল।২৮ এপ্রিল তিনি সিটি করপোরেশনে ভোটের আগেআগে নির্বাচনী বিধিমালা পালনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক থাকারনির্দেশ দেওয়ার খবর প্রকাশের এক দিনেরমধ্যে রাজধানীতে আনিসুলের এই সভা হল।সপ্তাহ খানেক আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশননির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিতপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের একটিনির্বাচনী বৈঠকে এক মন্ত্রী ও দুইপ্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনাউঠেছিল।এরপর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেমন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়ে এই বিষয়েসতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেরোববার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামেগিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ যেন নাহয়, সেজন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সতর্কথাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।মোহাম্মদপুরে আনিসুল হকের সভার খবর পেয়েমিরপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় থাকাতার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাবিথ আউয়ালসাংবাদিকদের কাছে এনিয়ে প্রতিক্রিয়াজানান।বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ বলেন, “সরকারদলীয় প্রার্থী একটি কমিউনিটি সেন্টারব্যাবহার করে নির্বাচনী সভা করেছেন।নির্বাচন কমিশন যে একেবারেই লেভেল প্লেইংফিল্ড বাস্তবায়ন করতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা, এটা তারই একটা উদাহরণ।”আচরণবিধি পালন নিশ্চিত এবং সব প্রার্থীদেরসমান সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি করতে নির্বাচনকমিশনকে আহ্বান জানান এই মেয়র প্রার্থী।সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের ওই সভায় আনিসুলহক বলেন, “আমি মনে করি, জনগণের উন্নয়নেরজন্য একজন জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন, যে জনগণেরভালো করবে, জনগণের দিকে তাকাবে।“আমি আগামী ৫ বছরের জন্য আমাকে জনগণেরসেবা করার জন্য উৎসর্গ করেছি। আমি আমারপরিবার, আমার বাবার কাছ থেকে এজন্য সময়নিয়েছি।”
শেয়ার করুন