বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী পরিবার আকিজ গ্রুপ
বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী পরিবার আকিজ গ্রুপ
পরিবার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)সর্বশেষ হিসাবে, আকিজ পরিবারের পাঁচসদস্যের নিট সম্পদের পরিমাণ ৭০০ কোটিটাকা।সূত্রমতে, গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজউদ্দিন নিজেই সব সম্পদ ছেলেদের মাঝে ভাগকরে দিয়ে যান। এর মধ্যে আকিজ গ্রুপের মূলঅংশের নেতৃত্বে রয়েছেন পাঁচ ভাই শেখ বশিরউদ্দিন, শেখ জামিল উদ্দিন, শেখ জসিমউদ্দিন, শেখ শামীম উদ্দিন ও শেখ নাসিরউদ্দিন। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী,তাদের প্রত্যেকেই সমান ১৪০ কোটি টাকারনিট সম্পদের মালিক।গ্রুপ-সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, শেখ আকিজউদ্দিনের রেখে যাওয়া ব্যবসা আরোসম্প্রসারিত হয়েছে পাঁচ সন্তানের নেতৃত্বে।২০০৬ সালের পর গ্রুপে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছুপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে আকিজ গ্রুপের রয়েছেদেড় ডজন প্রতিষ্ঠান। আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিলিমিটেড, আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড,আকিজ কম্পিউটার লিমিটেড, আকিজ ফুড অ্যান্ডবেভারেজ লিমিটেড, আকিজ অনলাইন লিমিটেড,আকিজ পার্টিকেল অ্যান্ড হার্ডবোর্ড মিলসলিমিটেড, আকিজ ফার্মাসিউটিক্যালসলিমিটেড, আকিজ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংলিমিটেড, আকিজ রিয়েল এস্টেট লিমিটেড,আকিজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, আকিজজর্দা ফ্যাক্টরি লিমিটেড, ঢাকা টোব্যাকোইন্ডাস্ট্রিজ (সিগারেট) ও ঢাকা টোব্যাকোইন্ডাস্ট্রিজ (লিফ) এর অন্যতম।আকিজ গ্রুপের দাবি, দেশের অর্থনীতিতেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে তারা। এ গ্রুপেকর্মরত প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ওকর্মকর্তা। বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজারকোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিচ্ছেগ্রুপ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশে পাট,বেভারেজ ও টোব্যাকো খাতের নেতৃত্বে রয়েছেআকিজ গ্রুপ। দেশের সবচেয়ে বড় জুট মিলটিওএখন আকিজের। ঢাকা টোব্যাকোও দেশেরঅন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।জানা গেছে, আকিজ গ্রুপের উত্থান মূলত বিড়িদিয়েই। পঞ্চাশের দশকে বিড়ি দিয়ে ব্যবসাশুরু করে ধীরে ধীরে অন্যান্য খাতেও মনোযোগদেন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিন।১৯৬০ সালে যশোরের অভয়নগরে গড়ে তোলেনঅত্যাধুনিক চামড়া কারখানা এসএএফইন্ডাস্ট্রিজ। এর পর ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠাকরেন ঢাকা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ, ১৯৭৪সালে আকিজ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংলিমিটেড, ১৯৮০ সালে আকিজ ট্রান্সপোর্টিংএজেন্সি লিমিটেড ও ১৯৮৬ সালে জেসফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। নব্বইয়েরদশকে অর্থাৎ ১৯৯২ সালে গ্রুপটির অধীন গড়েওঠে আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড, ১৯৯৪সালে আকিজ জুট মিল লিমিটেড, ১৯৯৫ সালেআকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ও আকিজটেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এছাড়া ১৯৯৬সালে গড়ে তোলা হয় আকিজ পার্টিকেল বোর্ডমিলস লিমিটেড, ১৯৯৭ সালে আকিজ হাউজিংলিমিটেড ও ১৯৯৮ সালে সাভার ইন্ডাস্ট্রিজলিমিটেড। গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান আকিজফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড গড়ে ওঠে২০০০ সালে। একই বছর চালু হয় আকিজ অনলাইনলিমিটেড ও নেবুলা লিমিটেড। আর ২০০১সালে আবির্ভূত হয় আকিজ করপোরেশন লিমিটেডও আকিজ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড টেকনোলজিলিমিটেড, ২০০৪ সালে আকিজ এগ্রো লিমিটেডও ২০০৫ সালে আকিজ পেপার মিলস।আকিজ পরিবারের ভাষ্য, আপন মেধা ও যোগ্যতাদিয়েই সবসময় ব্যবসা করেছেন শেখ আকিজউদ্দিন। মেনে চলেছেন রাষ্ট্রীয় সব নিয়ম-নীতি। ব্যবসার মাধ্যমে সবসময়ই তিনিরাষ্ট্রকে কিছু দিতে চেয়েছেন। রাষ্ট্র বাসরকার থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেয়ারনজির আকিজ গ্রুপে ছিল না। এখনো নেই।আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)শেখ বশির উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকেবলেন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুইবাবার অবদান। বাবার শেখানো নিয়ম-নীতিমেনে তারা ব্যবসা করছেন। চেষ্টা করেযাচ্ছেন একে আরো বিকশিত করার।আকিজ পরিবারের এ পাঁচ ভাইয়ের বাইরে অন্যসদস্যদের নেতৃত্বেও রয়েছে বেশকিছুপ্রতিষ্ঠান। আদ-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালকহিসেবে রয়েছেন বড় ভাই ডা. শেখমহিউদ্দিন। এছাড়া শেখ মোমিন উদ্দিন, শেখআফিল উদ্দিন, শেখ আমিন উদ্দিন, আজিজউদ্দিনেরও রয়েছে পৃথক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।আকিজ গ্রুপ বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষকরপোরেট প্রতিষ্ঠান হলেও শুরুটা খুব সহজছিল না। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ১৯৪২ সালেনিজ গ্রাম খুলনার ফুলতলার মধ্যডাঙ্গা ছেড়েজীবিকার অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েন শেখ আকিজউদ্দিন। মাত্র ১৬ টাকা হাতে নিয়ে ট্রেনেচেপে বসেন দুরন্ত এ কিশোর। কলকাতায়পাইকারি বাজার থেকে কমলা লেবু কিনেহাওড়া ব্রিজে ফেরি করা শুরু করেন।কলকাতায় সুবিধা করতে না পেরে এক পরিচিতব্যবসায়ীর সঙ্গে পাড়ি জমান পেশোয়ারে।অল্প দিনে পশতু ভাষা শিখে ফের অল্প পুঁজিনিয়ে শুরু করেন ফলের ব্যবসা। দুই বছর এব্যবসা করে লাভ হয় ১০ হাজার টাকা।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে মা-বাবারস্নেহের টানে ফিরে আসেন নিজ গ্রামমধ্যডাঙ্গায়। এর পর নিজ যোগ্যতায় ব্যবসাকরে গড়ে তোলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ।
শেয়ার করুন