পহেলা বৈশাখে টিএসসির সেই নির্মম বিবস্ত্র ঘটনার বর্ণনা
সন্তানের সামনে মাকে করা হয়
লাঞ্ছিত, বিবশ্র স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচাতেজড়িয়ে ধরে থাকেন স্বামী।পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের দিনে দেশের সর্বোচ্চবিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসিএলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েক নারীকেবিবশ্র করে শ্লীলতাহানীর সেই ঘটনা ছিল এককথায় ভয়াবহ।সেখানে এক শিশুর সামনেই বখাটেদের হাতে তারমা যৌন হয়রানির শিকার হয়। এ সময় ওই নারীহাতজোড় করে তার সঙ্গে তার সন্তান রয়েছে বলেমানুষরূপী ওই নরপিশাচদের কাছ থেকে বাঁচতেপারেননি।এর কাছে শত শত মানুষের ভিড়ের প্রকাশ্যে ববিশ্রকরে আরেক নারীর শ্লীলতাহানী ঘটায় হায়েনারদল। এ সময় স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচাতে তার স্বামীতাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।নতুন বছরকে উদযাপন করতে গিয়ে প্রকাশশ্যদিবালোকে শত শত মানুষের সামনেই এভাবেই নারীনির্যাতনের ঘটনা ঘটে দেশের সর্বোচ্চবিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রটিএসসি এলাকায়।এ সব ঘটনা ঘটে তখন কাছেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল।কিন্তু সব দেখেও কিছুই করার ছিল না যেনতাদের।টিএসসি এলাকার ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবারঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশেছাত্র-শিক্ষক জনতার সংহতি সমাবেশে এ সবঘটনার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন ছাত্র ইউনিয়নেরঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি লিটন নন্দী।সমাবেশে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৬টার দিকে ১৭-১৮বছরের একটি মেয়ের জামাকাপড় ছেঁড়া হয়। আমিতখন প্রতিরোধ করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়ে যাই।তখন লাথি, কিল, ঘুষি আর পায়ের পাড়া আমার ওপরপড়ে। সে সময় ওই মেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।আমি তখন ওই হায়েনাদের উদ্দেশ্যে বলি- ভাই দয়াকরে মেয়েটাকে মেরে ফেলেন না।’ওই দিন প্রতিটা জায়গাতেই নারীদের লাঞ্ছিতকরার অভিযোগ করে তিনি বলেন, একজন মহিলাবারবার বলছিলেন, তার শিশু সঙ্গে আছে। তাকেযেন ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই শিশুটির সামনেইওই মাকে লাঞ্ছিত করা হয়।লিটন নন্দী বলেন, ওই দিন সাড়ে ৫টার একটু পরেআমিসহ ছাত্র ইউনিয়নের চার নেতা-কর্মীসোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে জনস্রোতে গিয়েদেখি, যুবকদের দুই থেকে তিনটা দল উদ্যানেরদিকের গেটটা বন্ধ করে রেখেছে। সেখানেবিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে।আমরা তখন দুই হাত উঁচু করে করিডর বানিয়েনারীদের বের করতে থাকি।'সোয়া ৬টার দিকে ভিড়ের ভেতর একজন নারীরচিৎকার শুনি। দৌড়ে গিয়ে মানুষরূপী হায়েনাদেরদৃশ্য দেখি। এ দৃশ্য সভ্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। ২৬-২৭ বছরের একজন নারী প্রায় বিবস্ত্র।তাঁর স্বামী তাঁকে জড়িয়ে ধরে আছেন। এরপর আমারগায়ে পরা এ পাঞ্জাবিটা খুলে তাঁর শরীর ঢেকেদেই। তখন ওই হায়েনার দল ওই পাঞ্জাবিও খুলেনেওয়ার চেষ্টা করে' বললেন লিটন নন্দী।এ সময় পুলিশ সদস্যরা একেবারেই নিস্ক্রিয় ছিলঅভিযোগ করে ছাত্র ইউনিয়নের এ নেতা বলেন, এইন্যক্কারজনক হামলা চলার সময় মাত্র দুজন পুলিশসোহরাওয়ার্দীর গেটে ছিলেন। আর কিছু পুলিশসদস্য মিলন চত্বরে ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তআমরা এভাবে হায়েনাদের প্রতিরোধ করতে থাকি।পুলিশরা এ সময় একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল।লিটন আরো বলেন, ‘সাড়ে ৬টার দিকে ১৭-১৮বছরের একটি মেয়ের জামাকাপড় ছেঁড়া হয়। আমিতখন প্রতিরোধ করতে গেলে লাথি, কিল, ঘুষি আরপায়ের পাড়া আমার ওপর পড়ে। সে সময় ওইমেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিশ্ববিদ্যালয়েরপ্রশাসন যৌন হেনস্তাকারীতে সহযোগী হিসেবেভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যেমন খুনিদের রক্ষা করে, তেমনিভাবেবিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অপরাধীদের রক্ষায় কাজকরে।‘মুখেকুলুপ এঁটে বসে থাকলে হবে না। বর্ষবরণেনারী লাঞ্ছনার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে'বলেও একই সঙ্গে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ।সভায় প্রক্টরের অপসারণ, দায়ী ব্যক্তিদেরগ্রেফতার ও বিচার, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকারসার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যৌননিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ওবাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিও তুলে ধরা হয়।সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তৃতা করেন জগন্নাথবিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব মীর,ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসানতারেক, সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার, ঢাকাউত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থীআবদুল্লাহ আল ক্বাফী, সাংবাদিক সুপ্রীতি ধর,সংগীতশিল্পী সায়ান, বিপ্লবী নারী সংহতিরসমন্বয়ক শ্যামলী শীল প্রমুখ।
শেয়ার করুন