তাহলে সেনাবাহিনী কোথায় থাকে?
তিন সিটি নির্বাচনে
সেনা মোতায়েন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেরপরিবর্তিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সর্বত্র আলোচনাবিতর্ক হচ্ছে। বলা যায়, রাজধানী ঢাকা এবংবন্দরনগরী চট্টগ্রামে ইসির এ সিদ্ধান্ত টকঅব দ্যা টাউন। আসলেই কি নির্বাচনে সেনামোতায়েন হচ্ছে? -এ প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তনিয়ে ইসি বলছে, সেনাবাহিনীক্যান্টনমেন্টে থেকেই স্ট্রাইকিং ফোর্সেরদায়িত্ব পালন করবেন। তাহলে সেনাবাহিনীকোথায় থাকে? ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীসব সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স। ক্যান্টনমেন্টেরেখেই তিন সিটি নির্বাচনে সেনামোতায়েনের মাজেজা কী?বিশিষ্টজন, প্রার্থী এবং ভোটারদের দাবিরমুখে নির্বাচন কমিশন তিন সিটিতে ভোটেরসময় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। এসিদ্ধান্তকে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সাহসীবলে অভিহিত করেন। নির্বাচনে সেনামোতায়েনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীরপ্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার বরাবর মঙ্গলবারপাঠানো ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলমস্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রতি সিটিকরপোরেশন এলাকায় এক ব্যাটালিয়ান করেসেনাবাহিনীর সদস্য আগামী ২৬ থেকে ২৯এপ্রিল চারদিন স্ট্রাইকিং এবং রিজার্ভফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।রিটার্নিং অফিসার ডাকলেই তারাপরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন।’ এ চিঠিপাঠানোর কয়েক ঘণ্টা পর চিঠির ভাষাপরিবর্তন করে পুনরায় চিঠি পাঠায় ইসি।দ্বিতীয় চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রতি সিটিকরপোরেশন এলাকায় এক ব্যাটালিয়ান করেসেনাবাহিনীর সদস্য আগামী ২৬ থেকে ২৯এপ্রিল চারদিন দায়িত্ব পালন করবেন। তারামূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরেই রিজার্ভ ফোর্সহিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিংঅফিসারের অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্সহিসেবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন।’নির্বাচন কমিশনের এ চিঠি নিয়ে ভোটারএবং বিশিষ্টজনদের মধ্যে শুরু হয় বিতর্ক।কেউ বলেন, এটা ইসির সাংবিধানিকচালাকী। কেউ বলেন রাজচালাকি। সুজনসম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতে, এটাজনগণের চোখে ইসির ধুলা দেয়ার নামান্তর।মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় চ্যানেলআই-এর পত্রিকার ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানেসাংবাদিক গোলাম মুর্তোজা বলেন,সেনাবাহিনীর স্থান হলো ক্যান্টনমেন্ট। যেকোনো দুর্যোগ এবং ক্রান্তিকালে স্বল্পসময়ের মধ্যে তারা এসে মানুষের পাশে এসেদাঁড়ান। কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ারসার্ভিস আর দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীরসদস্যরা স্বল্প (এক/দুই ঘণ্টা) সময়ের মধ্যেএসে উদ্ধার কাজে লেগে যান। সেনাবাহিনীরসবসময় প্রস্তুতি থাকে। তারা সবসময়স্ট্রাইকিং। কিন্তু ইসি নির্বাচনে সেনামোতায়েনের ঘোষণা দিয়ে আবার তাদেরক্যান্টনমেন্টে থাকার কথা বলে ভোটারদেরসঙ্গে তামাশা করছেন। সেনাবাহিনীরকর্মস্থল ও আবাসস্থল ক্যান্টনমেন্টে, তারাসেখানেই থাকবে। ইসি কি জনগণকে বোঝাতেচায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা অন্য কোথাওথাকে? সেনাবাহিনী নিয়ে ইসির এইসিদ্ধান্ত ও বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।নানা মন্তব্য করা হচ্ছে ইসির ভূমিকা নিয়ে।এসব বিতর্কের মধ্যে ইসির সিদ্ধান্তেরব্যাখ্যা দেয়া হয়। নির্বাচন কমিশনার মো.শাহনেওয়াজ গতকাল বলেন, ক্যান্টনমেন্টযেহেতু ঢাকা সিটি করপোরেশনের মধ্যেইআছে, তাই সেনাবাহিনীকে বাইরে বের করারদরকার নেই। সেনাবাহিনী রিজার্ভ ফোর্সহিসেবে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরেই থাকবে।নির্বাচনকালে রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনমনে করলে সেনাবাহিনী মাঠে নামবে।চট্টগ্রাম সিটিতেও একইভাবে সেনাবাহিনীক্যান্টনমেন্টেই থাকবে। প্রয়োজন হলেইতারা মাঠে নামবে। সেনাবাহিনীমোতায়েনের বিষয় নিয়ে ইসির দু’রকমসিদ্ধান্ত কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নেরউত্তরে শাহনেওয়াজ বলেন, জনগণের মধ্যেবিভ্রান্তি দূর করতেই সেনাবাহিনীমোতায়েনের বিষয়ে পরিষ্কার করা হলো। সুজনসম্পাদকের ভাষায় জনগণের চোখে ইসির এইধুলা দেয়ার মাজেজা কী? নির্বাচন কমিশন কিমনে করে সেনাবাহিনী সব সময় স্ট্রাইকিংফোর্স হিসেবে থাকে না? সামরিকবিশেষজ্ঞদের মতে সেনাবাহিনী বহিঃশক্রএবং দেশের সংকট মোকাবিলায় (প্রাকৃতিকদুর্যোগ এবং অন্যান্য) সবসময় স্ট্রাইকিংফোর্স হিসেবে প্রস্তুত থাকে। স্বল্প সময়েরমধ্যেই তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।ইসি যদি সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনকেস্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করতে চায়তাহলে সে দায়িত্ব দেয়া উচিত। জনগণেরচোখে ধুলা দেয়া উচিত নয়।
শেয়ার করুন