জিহাদী বই বলে বলে কি তারা ইসলাম চর্চা নিষিদ্ধ করতে চান ?
কানাডা প্রবাসী স্থাপত্যবিদ মোহসিন আহমেদ অনলাইনে নিবন্ধ
ও কলাম লিখেন। গত সপ্তাহে তার লেখায় ছিলঅনেক দুঃখ, অনেক খেদ। মোহসিন লিখেছেন,দেশে এখন মুসলমানরা নিরাপদ নয়। নামাজপড়তে ভয়। তাওহীদের বাণী উচ্চারণে ভয়।সুন্নতসম্মত পোশাক পরতে ভয়। দাড়ি রাখা,হিজাব পরা, ইসলামী বইপত্র বহন করা এখনভয়ের বিষয়। ইসলামী বইকে যখন তখনজিহাদী বই বলে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। জানানেই, কোনদিন আবার ঘরে জায়নামাজ, তসবিহ,টুপি থাকায় জিহাদী বাড়ি বলা শুরু হয়।কোরআন শরীফেও তো সত্যের জন্যে জিহাদেরকথা অনেকবার বলা হয়েছে। কে জানে আবারকোরআন শরীফকেই জিহাদী বই বলে আখ্যাদেয়া হয় কিনা!সত্যিই এ আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।দেশে-বিদেশে কোটি কোটি মুসলমান কিতাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে পবিত্র কোরআন,হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ, মাসআলা-মাসায়েল,দুরুদ-ওজিফা, দোয়া-কালাম, মুসলিম ইতিহাস,দর্শন, জীবনী বা জ্ঞান চর্চা করবেন না।ঢালাওভাবে যদি এসবকে জিহাদী বই বলা হয়তাহলে জিহাদী বই কাকে বলা হবে? জিহাদীবই বলে আদৌ কি কিছু আছে? জিহাদী বই নামেএকশ্রেণীর দুর্বৃত্ত গোটা ইসলামকেই কলুষিতকরতে চাইছে না তো!এ বিষয়ে কথাবলেন সাবেক ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তাহোসাইন আহমদ। তার ভাষায়, কোন মুসলমানকোরআন-হাদীস ও ইসলামী বইপত্রকে ‘জিহাদীবই’ বলে বদনাম করতে পারে না। এ কথাটিভারতীয় মিডিয়া থেকে ধার করা হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক অঞ্চলেমুসলমানদের বদনাম করার জন্য যখন জঙ্গীবাদতালাশ করা হয়, তখন ইসলামী জ্ঞান ওসাহিত্যচর্চা রোধ করার হীন উদ্দেশ্যে সববইপত্রকে ঢালাওভাবে বলা হয় ‘জিহাদী বই’।এ শয়তানী কাজটি বুঝে না বুঝে বাংলাদেশেরএকশ্রেণীর আইন-শৃংখলা বাহিনী ও মিডিয়াওকরে যাচ্ছে। একদল সন্ত্রাসী বা বোমাবাজধরা পড়ল দেখবেন তাদের আস্তানায় কিছু বই-পুস্তক পাওয়া যাবেই। মিডিয়ায় দেখা যাবেবই-পুস্তকগুলো দেখানো হচ্ছে আর বলা হচ্ছে‘জিহাদী বই’ পাওয়া গেছে। জিহাদ অর্থ কিপটকা ও জর্দার কৌটা বানানো। বোঝাই যায়,কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসীর কাছে কি পাওয়াগেল সেটা মুখ্য নয়। মূল কথা হলো, যে কোনওসিলায় ইসলামকে হেয় করা। এখন পরিস্থিতিএমন বানানো হচ্ছে যে, মুসলমানরা যেনসবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে। টুপি না পরে, দাড়িনা রাখে, নামাজ না পড়ে, বোরকা, পর্দা বাহিজাব ব্যবহার না করে। নাস্তিক-মুরতাদলোকজন ও ধর্মবিদ্বেষী মিডিয়ার কল্যাণেদেশের পরিস্থিতি এমন হওয়া অসম্ভব নয় যে,নিজেকে শান্তিপ্রিয় ও সুনাগরিক প্রমাণকরার জন্য মানুষকে গলায় ক্রশ পরতে হবে,কপালে রং মাখতে হবে, ঘরে মূর্তি সাজিয়েরাখতে হবে। ছাত্রলীগের গু-াদের হাত থেকেবাঁচার জন্য বিশ্বজিৎ যেমন বলেছিল, আমাকেমারবেন না, আমি বিরোধীদলীয় লোক নই, আমিএকজন হিন্দু। ৫৪টি গুলি খাওয়া ‘গণপিটুনি’তেনিহত একজন লোক হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও কেনমারা গেল, এ নিয়েও মানুষ বিস্মিত হয়েছিল।শুনেছি সরকারের এক প্রভাবশালী উপদেষ্টানিজে বংশানুক্রমে মুসলমান হয়েও সৌভাগ্য ওউন্নতির জন্য হাতের কাছে দেবতার মূর্তিরাখেন। বাংলাদেশের মুসলমান এখন কোনপর্যায়ে আছে তা ভেবে দেখার বিষয়।সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় নারায়ণগঞ্জযচ্ছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আরাবিয়ামাদরাসার একজন সিনিয়র মুহাদ্দিস। সাথেছিলেন বড় এক মুফতি সাহেব। সাইন বোর্ডেপুলিশ তাদের বহনকারী সিএনজি দাঁড় করিয়েতাদের পরিচয় জানতে চায়, হালকা প্রশ্নউত্তর করে ছেড়ে দেয়। ভূঁইগড় পার হলে শহরেরদ্বারপ্রান্তে তাদের আবারো পড়তে হয় জেরারমুখে। একজন সার্জেন্টের নেতৃত্বে কয়েকজনকনস্টেবল সিএনজি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকরছিল। এ দুই আলেমকেও দাঁড় করানো হয়।একজন কনস্টেবল খানিকটা দূরে নিয়ে গিয়েতাদের নামতে বলে। তারা নামার পর বলেপকেট থেকে সবকিছু বের করে দেখান। প্রায়অন্ধকার রাস্তায় পুলিশ সদস্য মুহাদ্দিস ওমুফতি সাহেবদের মুখে ঘন ঘন টর্চ মেরে বিনাকারণে অনেকগুলো ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলে।আলেমদ্বয় তার আচরণে হতভম্ব হয়ে যান।সীমাহীন ধৈর্য ও সহনশীলতা বজায় রেখেতারা বলেন, আপনার দায়িত্বশীল অফিসারকেডেকে আনুন। আমাদের অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়করিয়ে কেন এভাবে অপদস্থ করছেন? আমাদেরচেহারা দেখে কি আপনার মনে হয় যে আমরাঅপরাধী? তাছাড়া আমাদের পকেটে আপনি কীসন্ধান করছেন? এসব শুনে পুলিশ সদস্যটি বলে,আপনাদের পকেটে গাঁজার পুরিয়া আছে কিনাতা দেখতে হবে। তখন দুই মাওলানা বলেন,আপনি কোন দেশের পুলিশ? আপনার ব্যাজেআপনার নাম লেখা নেই কেন। আপনি আমাদেরপুত্রের চেয়েও কম বয়সী হবেন। পিতার বয়সীদু’জন মানুষকে এভাবে অপমান করার শিক্ষাআপনি কোথায় পেয়েছেন? আপনি আমাদেরঅফিসারের কাছে নিয়ে চলুন। এসব শুনে ওইপুলিশ সদস্য আরো দুর্বিনীত হয়ে উঠলে, দুইআলেমও বিস্মিত হন। তারা বলেন, কারো কথায়আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পকেট হাতড়েসব বের করে করে দেখাবো না। যদি দরকারহয় তাহলে থানায় নিয়ে যান। তখন পুলিশসদস্যটি নিজেই তাদের পকেটে হাত দিতেউদ্যত হলে তারা বাধা দিয়ে বলেন, অন্ধকাররাস্তায় একাকী আপনি আমাদের পকেটে হাতদিতে পারেন না। কারণ, পুলিশই গাঁজারপুরিয়া বা মাদকের টেবলেট নিরীহ মানুষেরপকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে পরে মামলা করে বলেআমরা শুনেছি। এ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যটি আরোবাড়াবাড়ি করলে আলেমদ্বয় দৃঢ়কণ্ঠে বলেন,আইন অমান্য, পুলিশের কাজে বাধা বা অন্যকোন কারণ দেখিয়ে যদি আমাদের গ্রেফতারকরার ইচ্ছা থাকে তবে তাই করা হোক। কিন্তুরাজধানীর বিশিষ্ট দুই আলেমকে এভাবে যেনঅপমান করা না হয়। তখন এ পুলিশ সদস্যমন্তব্য করে, আপনারা মনে হয় জঙ্গী, আপনারাকোন মাদরাসার আলেম, নাম, ঠিকানা বলুনআমরা খোঁজখবর নেব, তাছাড়া আপনাদেরওখানে জিহাদী বই আছে কিনা তাও দেখতেহবে। এ পর্যায়ে, আলেম দু’জন দৃঢ়কণ্ঠে বলেন,আমরা কারা, কোন মাদরাসায় আছি বামাদরাসায় জিহাদী বই আছে কিনা, এতসববলার সময় আমাদের নেই, এসব বোঝার মতজ্ঞান-বুদ্ধি যোগ্যতাও একজন পুলিশ সদস্যেরনেই। আপনার যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে আমাদেরকোন অফিসারের কাছে নিয়ে চলুন, নয়তো সময়নষ্ট না করে আমাদের নিজ কাজে যেতে দিন।তারা আরো বললেন, সরকার আপনাদের যেআস্কারা দিয়েছে তাতে ইচ্ছে করলে গুলি করেআমাদের পঙ্গু করে দিতে পারেন কিংবা খালিহাতে বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়েছি বলে প্রচারদিয়ে হত্যাও করতে পারেন। তবে দুঃখ হলোএই, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে, আমরা কিনিজ দেশে বাস করছি? এ পুলিশ কি আমাদেরপুলিশ। আমাদের মত ব্যক্তির কাছে পুলিশ যখনগাঁজার পুরিয়া তালাশ করে, যখন আলেমদেরদেখে বলে জঙ্গী, কোরআন-হাদীসের গ্রন্থকেবলে জিহাদী বই তখন আর আমাদের বেঁচে থেকেকী হবে। এ পর্যায়ে দু’একজন পথচারী এসেজমা হলে পুলিশ সদস্যটি আলেমদের সিএনজিটিছেড়ে দেয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের এঘটনাটি সংশ্লিষ্ট মুফতি সাহেব এপ্রতিনিধির নিকট স্বয়ং বর্ণনা করেছেন।এ ধরনের ঘটনা দেশজুড়েই ঘটছে। পুলিশ, র্যাবও আইন-শৃংখলা বাহিনীর বহু সদস্য সুযোগপেলেই আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ,ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ ও ইসলামী সংস্কৃতিতেবিশ্বাসী তরুণ-তরুণীদের বাড়তি হয়রানিকরছে বলে প্রতিদিন সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।একশ্রেণীর মিডিয়া এসব বিষয়কে ফুলিয়েফাঁপিয়ে রং মেখে প্রচার করছে। কিন্তু এরাকেউই বুঝতে পারছে না যে তারা এ দেশ,জাতি ও সমাজের কত বড় ক্ষতি করে ফেলছে।শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিরুদ্ধে এ ধরনেরষড়যন্ত্র আখেরে কী ফল বয়ে আনবে।এ বিষয়ে কথা হয় দেশের বিশিষ্ট আলেম, চারতরিকার পীরে কামেল শায়খুল হাদীস আল্লামারোকনুজ্জামান ওসমানীর সাথে। তিনি খুবস্পষ্ট ভাষায় সকলকে সতর্ক করে বলেন, ইসলামও মুসলমানের প্রতিটি বিষয় নিয়ে একধরনেরতামাশা শুরু হয়েছে, দীন-ঈমান ও ইসলামনিয়ে এক শ্রেণীর লোক মনে হয় ইচ্ছাকৃতভাবেচক্রান্তে মেতে উঠেছে। আল্লাহ মাফ করুন।নয়তো তাদের উপর বিরাট গজব নেমে আসবে।যেখানেই কোন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে প্রকৃতদোষীদের না ধরে নিরীহ লোকদের ধরাহচ্ছে। কারণে অকারণে নিরপরাধ মানুষকেহেনস্থা করা হচ্ছে। যে কোন মামলায় জঙ্গীনাম দিয়ে সমাজের ভাল মানুষদের হেয় করাহচ্ছে। দুর্বৃত্তদের যখন নিষিদ্ধ জিনিসসহআটক করা হয় তখন সেখানে কিছু বইপত্রওদেখানো হয়। কোথাও ইসলাম শব্দটি পাওয়াগেলেই বলা হয় এসব জিহাদী বই। আমি আমারপরিচিত ও ভক্ত অনেকের মুখে শুনেছি, ঢাকাথেকে তুলে নিয়ে অনেক নিরীহ ব্যক্তিকেআরেক জেলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তারকাছে কিছু না পেয়েও নিষিদ্ধ বস্তু ধরিয়েদিয়ে গ্রেফতার করা হয়। বেধড়ক জুলুম ওমারপিট করা হয়। যে কোন জঙ্গী গ্রেফতারেরসময় কিছু বই-পুস্তক পাওয়া যেন নিয়ম হয়েদাঁড়িয়েছে। বোমা ও অস্ত্র তৈরির আড্ডায়যদি কোন নির্দেশিকা বা ম্যানুয়াল পাওয়াযায়, তাহলে সেটি তো নিষিদ্ধ বই। কিন্তুযদি কারো কাছে সাধারণ ধর্মীয় বই কিংবাঅন্য বিষয়ের বই পাওয়া যায় তাহলে সেলোকটি অপরাধী হওয়ার ফলে কি নির্দোষবইপত্রগুলোও দোষী হয়ে যাবে? কেন বিনাকারণে ইসলামী বইপত্রকে ‘জিহাদী বই’ বলেপ্রচার করা হবে? কেন জিহাদী বই কথাটিবলে ইসলামী জ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে ভীতিছড়ানো হচ্ছে। সুযোগ পেলেই একশ্রেণীর লোকআলেম-উলামা ও ইসলামী জ্ঞান-সাহিত্যেরবিরোধিতা করছে। অবস্থা দেখে মনে হয়,তারা জিহাদী বইয়ের নামে দেশে ইসলামচর্চাই নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছেন। এ সবেরপরিণতি তো ভাল হতে পারে না। সময় মতসংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই।
শেয়ার করুন