রানা প্লাজার সেই রেশমার খবর কেউ রাখে না
দু’বছর আগে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর
বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা সেই অলৌকিককন্যা রেশমার খবর এখন আর কেউ রাখে না। যেতিনটি সংস্থা রানা প্লাজা নিয়ে কাজ করছে,সেই সিপিডি, টিআইবি ও বিজিএমইএ’র কাছেওরেশমার কোনো তথ্য নেই। অনেকটা আড়ালেইকেটে যাচ্ছে রেশমার দিন। সেই আলোড়নসৃষ্টিকারী দরিদ্র পোশাক শ্রমিক রেশমাআক্তার এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তারপরিবার কোথায়- এসব খবর কেউই জানেন না।অসংখ্য জায়গায় যোগাযোগ করে ও কথা বলে শুধুএতটুকুই জানা গেছে যে, রেশমা এখনও পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনেই চাকরি করছেন এবংভালো আছেন।তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা পোশাক শ্রমিকরেশমার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে।বর্তমানে হোটেল ওয়েস্টিনের লন্ড্রি সেকশনেকাজ করছেন। বাসা গুলিস্তানে। থাকেনপরিবারের সঙ্গে। রেশমার ভাইয়ের মেয়ে সীমাজানান, তার ফুফি এখন খুবই ভালোআছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মাধ্যমে যেঅভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তারপর থেকে অনেকটাইধার্মিক জীবনযাপন করছেন রেশমা। প্রাত্যাহিকজীবনে নামাজ পড়ার সময় পোশাক খাতে কর্মরতমানুষ এবং তার নিহত সহকর্মীদের জন্য নিয়মিতপ্রার্থনাও করেন।দু’বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ১৭দিন পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে রেশমাকে জীবিতউদ্ধারের পর দেশে-বিদেশে তাকে নিয়ে হইচইপড়ে গিয়েছিল। টানা ১৭ দিন অন্ধকারের ভেতরখাবার ও পানি ছাড়াই মৃত্যুকূপে আটকা পড়াঅবস্থায় বেঁচে থাকার পর সুস্থভাবে ধ্বংসস্তূপথেকে রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা পৃথিবীর বুকে জন্মদিয়েছিল আরেকটি অলৌকিক ইতিহাসের। এ ঘটনাশুধু যে দেশের মানুষকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলতা নয়, চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। কারণ যেদুর্ঘটনায় এক হাজার ১৩৮ জন নিহত এবং দুইহাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, সেইদুর্ঘটনার ১৭ দিন পর খাবার ও পানি ছাড়াঅন্ধকারের মধ্যে থেকে বেঁচে ফেরাটা সম্ভব নয়কিছুতেই, অন্তত আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান তো তাইবলে। তাই সেদিন রেশমা পেয়েছিলেন অলৌকিককন্যার আখ্যা।রেশমার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’রসহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন,আমি যতটুকু জানি, তাতে সে ওয়েস্টিনে চাকরিকরে। তবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। রানাপ্লাজা নিয়ে কাজ করছে তিনটি সংস্থা। অন্য দুইগবেষণা সংস্থা সিপিডি ও টিআইবির কাছে রেশমাসম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটিঘটেছিল বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল।রাজধানীর অদূরে সাভারে তৈরি পোশাক উৎপাদক ওরফতানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানানিয়ে বহুতল ভবন রানা প্লাজা সেদিন ধসেপড়েছিল। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সেদিন অসংখ্যপোশাক শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানের মাধ্যমে জীবিতদেরওউদ্ধার করা সম্ভব হয়। এরপর ধ্বংসস্তূপ থেকেবেরিয়ে আসছিল শুধুই লাশ আর লাশ। ভবনটির নিচেচাপা পড়া শ্রমিকদের বেঁচে থাকার আশা ছেড়েদিয়ে তাদের স্বজনরা যখন শুধু প্রিয়জনেরমৃতদেহটি পাওয়ার আশাতে বুক বেঁধেছিলেন, তখনইভেঙে পড়া ভবনটির নিচ থেকে ১৭ দিন পর জীবিতও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রেশমাকে।উদ্ধারের পর উদ্ধারে দায়িত্বে থাকাসেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সুচিকিৎসার পররেশমাকে চাকরি দেন হোটেল ওয়েস্টিনের মালিকব্যবসায়ী ও শিল্পপতি নূর আলী।আর সেই অলৌকিক ঘটনার পর পালটে গেছে রেশমারজীবনও। ওয়েস্টিনে চাকরির সুবাদে কাজের ধরন ওসামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পায় রেশমার। একদরিদ্র পোশাক শ্রমিকের জীবন থেকে রেশমা উঠেএসেছেন সচ্ছল মধ্যবিত্তদের কাতারে। সারা দিনহাড়ভাঙা খাটুনির পর একজন জীর্ণ, বিধ্বস্তপোশাক শ্রমিক থেকে রেশমা জাতীয়ভাবেআলৌকিকভাবে বেঁচে থাকা মানুষ হিসেবেপরিচিতি পায় সবার কাছে। দেশে ও বিদেশেসংবাদপত্রের প্রথম পাতার শিরোনাম হয় রেশমা।দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ওপুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের ক্ষেত্রেলক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি পশ্চিমাব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। ৪ কোটি ডলারের বদলেমাত্র ১ কোটি ৯ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে তারা।তবে সেখান থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ নেননি রেশমা।শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকাপেয়েছেন।
শেয়ার করুন