আজ বিশ্ব মা দিবস
“যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!”
আজ রবিবার বিশ্ব মা দিবস। মা কত দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে দশ মাস দশ দিন গর্ভে
ধারণ করে তার সন্তানকে জন্ম দেন। মা শুধু সন্তানের জন্মই দেন না, সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে যে
কোনো কিছু ত্যাগ করতে কালবিলম্ব করেন না। শত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে মা তার সন্তানকে
নিজের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সন্তানকে বড় করে
তোলেন। দুঃখ কষ্টই, সব লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে, জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন সন্তানকে
বড় করে তোলেন। সন্তানের সুখই মায়ের সুখ, সন্তান সুখে থাকলেই মা খুশি। মায়ের ভালোবাসায়
কোনো স্বার্থ নেই, কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা নেই। মা তার সন্তানকে বুকভরা ভালোবাসা, প্রাণঢালা
আদর বিলিয়ে দিয়ে ধন্য হন। তাই মাকে সম্মান জানানোর জন্য আমাদের দেশে
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হলেও বিভিন্ন দেশে বিভন্ন সময় এই দিন
পালন করে থাকে।
মা দিবসের ইতিহাসঃ
কিছু কিছু ইতিহাসবিদের মতে, মা নিয়ে এই দিনটি প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে
সূত্রপাত হয়। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেলের উদ্দেশে পালন করা হত একটি
উৎসব।
মহাবিষ্ণুবের সময়েও এমন একটি উৎসব
পালন করা হত বলে ধারণা করা যায়।
প্রাচীন রোমানদের ‘ম্যাত্রোনালিয়া’ নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরও একটি
বিশেষ দিনের কথা জানা যায়। সেই দিনটিতে সবাই সবার মাকে বিভিন্ন ধরনের উপহার দিত।
ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল
ধরে পালিত মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকায় উল্লেখ
করা রয়েছে। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে, যা কিনা লালেন্টের সময়ে
চতুর্থ রোববার পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার সম্মানে।
এককথায় বলা যায়, খ্রিস্টানদের ক্যাথলিক ধর্মে এই দিনটি বিশেষভাবে ভার্জিন মেরি বা
কুমারী মাতার পূজায় সমর্পিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে সনাতন ধর্মে এই দিনটিকে ‘মাতা তীর্থ আনুসি’
বা ‘এক পক্ষকালব্যাপী মাতৃ তীর্থযাত্রা’ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ইতিহাস থেকে জানা যায়,
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস
সমিতি) গঠন করেন। এমনকি তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রোববার’ আর ‘মা দিবস’ এই
দুটি শব্দের বহুল প্রচারণা চালাতে সক্ষম হন।
বর্তমান বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো ছুটির দিনকেই বিশ্বের অন্যান্য দেশ খুব সহজেই গ্রহণ
করে। আর সে কারণেই হয়ত যুক্তরাজ্যে পালিত মাদারিং সানডে বা গ্রিসের মন্দিরে যিশুর প্রাচীনপন্থী
পূজা-
অর্চণার মতো মাতৃত্বের সম্মানে অনুষ্ঠিত দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তারিখটিকে নির্ধারণ করা হয়।
ক্যাথলিক দেশগুলোতে ভার্জিন মেরি ডে বা ইসলামিক দেশগুলোতে পয়গম্বর মুহম্মদ (স.)-এর
মেয়ের জন্মদিনের মতোই বিশ্বের কিছু কিছু দেশ তাদের প্রধান ধর্ম অনুযায়ী মা দিবসের তারিখটি
পরিবর্তন করে নিয়েছে।
ইতিহাস আরও সাক্ষ্য দেয়, মূলত মা দিবসটি কিছু প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্যস্বরূপ।
যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান,
হিলারিয়ার রোমান উৎসব, যা কিনা গ্রিকের সিবেল ধর্মীয় রীতি থেকে এসেছে। অথবা সিবেল এবং
হিলারিয়া থেকে আসা
খ্রিস্টানদের মাদারিং সানডে উদযাপনের কথাও স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা যেতে পারে।
বিভিন্ন ধর্মে মা ‘র সম্পর্ক এ বলা হয়েছে
ইসলাম ধর্মে র আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু
শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য
করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি
তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।
মহানবী মুহাম্মদ বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ) ।
হিন্দু ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর
রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী
মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন
এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য
আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু
পিতৃন্মাতা
গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫)
অর্থাৎ “ দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ)
অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব
অধিকতর সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”
আমাদের উচিত মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা।
শেয়ার করুন