হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ জোরদারে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) তৃতীয়
টার্মিনাল নির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এবং ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের সামলাতে দ্রুতগতিতে কাজ শেষ
করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, দ্বিতীয় রানওয়ে
এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টারপ্লান বিষয়ে
প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাওয়ার পয়েন্টে প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। একটি
আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা যাচাই ও মাস্টারপ্লান তৈরি করেছে। বৈঠকের পর
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় শেখ হাসিনা
উল্লেখ করেন যে, দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশে অবশ্যই একটি আধুনিক ও
বৃহৎ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকবে। তিনি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে
যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে। ‘এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে’। এ ব্যাপারে দেশের বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য তিনি তার
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন এবং বলেন, তার সরকারই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, তার সরকার সিলেট ওসমানি এবং
চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করেছে। শেখ হাসিনা বলেন,
কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে
এবং ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের আরো উন্নয়ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে
বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদারে এসব বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।সরকারি সূত্র জানায়,
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা প্রায় ৮ মিলিয়ন। চলতি অর্থ বছরে
৬.৭ মিলিয়ন যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে এবং যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৯.৫ শতাংশ। সূত্র
জানায়, ২০১৫ সালে এই বিমানবন্দরে যাত্রী সংখ্যা ৮ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। এজন্য ক্রমবর্ধমান
যাত্রীদের সামলাতে ২০১৯ সালের মধ্যে একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে।তারা বলেন,
বিমানবন্দরের বার্ষিক কার্গো হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা ২ লাখ টন, বর্তমানে এই বিমান বন্দরের মাধ্যমে
২.৩৭ লাখ টন কার্গো পরিবহন করা হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমানে বিমানবন্দরের সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত
১৮ শতাংশ কার্গো হ্যান্ডেলিং করছে। ক্রমবর্ধমান যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের প্রয়োজনীয়
অবকাঠামো নির্মাণে একটি মাস্টারপ্লান তৈরিতে কোরিয়ার ইয়ুসহিন, সিঙ্গাপুরের সিপিজি এবং
বাংলাদেশের ডিডিসির সমন্বয়ে একটি যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১০
মাসের মধ্যে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও একটি নতুন মাস্টারপ্লান তৈরি
করে।মাস্টারপ্লান অনুযায়ী দু’টি পর্যায়ে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হবে। মাস্টারপ্লানে
প্রথম পর্যায়ে দ্বিতীয় রানওয়ে বাদে সকল অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে,
তৃতীয় টার্মিনাল, কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স এবং অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল। প্রথম পর্যায়ের
কাজ এ বছরেই শুরু হবে এবং শেষ হবে ২০১৯ সালে। প্রথম পর্যায়ের কাজে ব্যয় হবে ১০,৭০০
কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় রানওয়েসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এতে ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ২,৩০০ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রথম
পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়ন পুনঃমূল্যায়ন
করা হতে পারে। সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে
এইচএসআইএ সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি। সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ (সিএএবি)
সমীক্ষা রিপোর্টের আলোকে যথাসম্ভব দ্রুত প্রথম পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে।
সিএএবি মনে করে, এইচএসআইএ সম্প্রসারণের প্রথম কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি এখনই
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ শুরু করা উচিত। বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ
খান মেনন, মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী এবং সিএএবি চেয়ারম্যান এযার ভাইস
মার্শাল এম সানাউল হক এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ
সহায়তার চেক প্রদানপ্রধানমন্ত্রী গতকাল তার কার্যালয়ে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য
এবং উত্তরসূরিদের কাছে চেক হস্তান্তর করেন। দুই বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এবং হামিদুর
রহমানের পরিবারের সদস্য ও উত্তরসূরিরা এবং ৬ বীরপ্রতীক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার চেক গ্রহণ করেন।
শেয়ার করুন