নিহতের লাশ থেকে বের করা গুলি এমপি পুত্র রনির
নিহত সিএনজি চালক ইয়াকুব আলীর লাশ থেকে বের করা গুলিটি এমপি পুত্র বখতিয়ার আলম রনির লাইসেন্সকৃত পিস্তলের। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়না তদন্তের সময় চিকিত্সকরা ইয়াকুবের লাশ থেকে গুলিটি উদ্ধার করেন। ঐ গুলিটি পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়। রনির বাসা থেকে জব্দ করা সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ ক্যালিবারের পিস্তলের ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সিআইডি পিস্তল ও গুলিটি পরীক্ষা করে দেখতে পায়, জব্দ করা গুলিটি রনির পিস্তল থেকে বের হয়েছিল।
গত ১৩ই এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে ৪/৫ রাউন্ড গুলি ছুড়লে দৈনিক জনকণ্ঠের অটো রিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ই এপ্রিল রাতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নামে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। একপর্যায়ে প্রযুক্তির সহায়তা ও অন্যান্য সোর্সের মাধ্যমে রনির ব্যবহৃত গাড়িটি সনাক্ত করা হয়।
( খুনি মাতা পিনু খান, এমপি)
গত ৩১ মে সেই গাড়ির চালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই ইমরান ফকির পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা দেন। পরে বখতিয়ার আলম রনিকে একই দিন ধানম্লি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রনি মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য পিনু খানের পুত্র। পুলিশ রনি ও ইমরান ফকিরকে একসঙ্গে আদালতে পাঠায়। এতে ইমরান ফকির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তবে রনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে অস্বীকার করলে রিমান্ড আবেদন করে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে। কিন্তু রিমান্ড হওয়ার পরপরই এমপিপুত্র রনি অসুস্থতার ভান করে। পরে তাকে প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিত্সা দেয়া হয়। চিকিত্সা শেষে মঙ্গলবার থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শুক্রবার তার চার দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। রবিবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দীপক কুমার দাস।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে বখতিয়ার আলম রনি তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ান কথা স্বীকার করছে। তবে সেসময় সে মদ্যপান অবস্থায় ছিল বলে তার দাবি। এছাড়া গাড়িতে তার সঙ্গে রনির আরো তিন বন্ধু ছিল। পুলিশ ওই তিন বন্ধুকে আটকের চেষ্টা করছে।
সূত্র জানায়, ঘটনাটি পরিকল্পিত না হলেও কেন সে গুলি করলো এবং এর পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রনির তিন বন্ধুকে আটক করতে পারলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। তারা হত্যার জন্য দায়ী না হলে তাদের স্বাক্ষী বানানো হতে পারে বলেও ঐ সূত্র জানিয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার জানান, ঘটনাটি ছিল পহেলা বৈশাখের আগের রাত ছিল। তাই মধ্যরাতেও রাস্তায় কিছুটা যানজট ছিল। হোটেল সোনারগাঁও থেকে রনিসহ ৫ জন মদ পান করে মাতাল অবস্থায় মগবাজারে এক বন্ধুকে নামিয়ে দিতে যান। নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফেরার সময় যানজটের কবলে পড়েন। ঐ সময় তিনি ছিলেন মদ্যপ। তাই নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। রাস্তায় গুলি ছুড়েন। মুহূর্তেই রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে চলে যান তিনি। নিজে জানতেনও না তার ছোড়া গুলিতেই নিভে গেছে দুইজন নিরীহ ব্যক্তির প্রাণ।
শেয়ার করুন