দুই শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র
আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরও পূর্ণ হবে এদিন। রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি এদিন শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাঙালি জাতির জন্য এই দিবসটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার। অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। যে কোন জাতির জন্য সবচেয়ে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার হচ্ছে মৃত্যুর উত্তরাধিকার-মরতে জানা ও মরতে পারার উত্তরাধিকার। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে।
মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করো হবে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সকল উপাসনালয়ে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসাথে সর্বোচ্চ ২ জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্পবক অর্পণ করতে পারবেন। শহীদ মিনারের সকল প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক পরা ব্যতিরেকে কাউকে শহিদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
এদিকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। দেশের প্রায় ৪০ হাজার স্কুল-কলেজ ও ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিবসটি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দিবসটি পালনে সব স্কুল-কলেজকে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, ছড়াপাঠ, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন করে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি সব সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। সুর্যোদয়ের সময় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং সূর্যাস্তের সময় তা নামাতে হবে। পতাকা অর্ধনমিত রাখতে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। পতাকার সঠিক মাপ ও উত্তোলনের নিয়ম মেনে পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে।
দিবসটি পালনে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সংগতি রেখে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি উদযাপনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সব জেলা-উপজেলা সদরে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জাতীয় কর্মসূচির সাথে সংগতি রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন করবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ৫জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উপলক্ষ্যে সব স্কুল-কলেজকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, ছড়া পাঠ, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সব প্রাইমারি স্কুলগুলোকে দেয়া নির্দেশনায়ও দিবসটি পালনে জাতীয় পতাকা যথাযথভাবে অর্ধনমিত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নির্দেশনা অনুসারে, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ৫ জনের সমন্বয়ে পুস্পস্তাবক অর্পণ নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে শহীদ মিনার নেই সেসব স্কুলের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের অনুষ্ঠানে পুস্পস্তাবক অর্পণ করতে হবে।
দিবসটি পালনে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সংগতি রেখে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআইয়ে দিবসটি পালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তথ্য অফিস থেকে পোস্টার সংগ্রহ করে তা বিতরণ ও প্রাইমারি স্কুলগুলোতে সাঁটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বিদেশের বিভিন্ন মিশন ও দূতাবাসে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।
এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/বি
শেয়ার করুন