আশরাফকে সরিয়ে দেয়ার নেপথ্যে
দুদিন ধরে চলা গুঞ্জনের মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে
দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি
করা হয়।
সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশি
মনোযোগী করতে সিদ্ধান্ত নিয়েই তাকে ফ্রি করা হয়েছে। তাদের আরও দাবি, সৈয়দ আশরাফুল
ইসলাম নিজেই মন্ত্রিত্বের ব্যাপারে ছিলেন অনাগ্রহী। তার আগ্রহ ছিল সাংগঠনিক বিষয়ের দিকে।
তবে ঘনিষ্ঠদের এ দাবি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।
তাদের অভিযোগ, মন্ত্রিত্ব এবং কাউন্সিলে ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সৈয়দ
আশরাফ দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে সোনার হরিণে পরিণত হন। তাকে ফোনে বা সাক্ষাতে পাওয়াটা
হয়ে দাঁড়ায় রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় এবং সারা দেশে
আওয়ামী লীগের নেতারা তার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ছিলেন। অভিযোগের পর অভিযোগ যেতে শুরু করে
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে। সৈয়দ আশরাফ সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে
যেতেন কালেভদ্রে। দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকতেন। মন্ত্রিসভা ও
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আশরাফ সম্পর্কে কথা উঠলে খোদ প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, অন্তত আমার ফোনটা ধরো।
এ অবস্থাতেও তার প্রতি শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থার তেমন ঘাটতি হয়নি। তাই দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দল পুনরায়
ক্ষমতায় এলে আবারও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে
বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ-হরতালের সময় নীরব থাকেন আশরাফ। তখন শোনা যায়, শীর্ষ
নেতৃত্বের ইচ্ছার বাইরে সারা দেশে সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী
ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এতে তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে বেশ অসন্তোষ
দেখা দেয়। ওই সময় ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালকে
দু-আনার মন্ত্রী বলে কটাক্ষ করে সমালোচনার ঝড় তোলেন। আশরাফের এ মন্তব্যে প্রভাবশালী
দেশটি প্রকাশ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না জানালেও ভেতরে-ভেতরে ক্ষমতাসীন দলের ওপর ক্ষুব্ধ
হয়। ওই সময় সৈয়দ আশরাফকে সতর্কও করেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের মন্তব্য আর না করেন এবং নারীদের সম্পর্কে সম্মান রেখে কথা বলেন, সে
ব্যাপারেও সৈয়দ আশরাফকে পরামর্শ ও হুশিয়ার করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর থেকেই সৈয়দ
আশরাফ অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। মাঝে মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে তাকে
দেখা যায়। তবে নিজের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন বৃত্ত থেকে আর বের হতে পারেননি। সর্বশেষ গত
মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে উপস্থিত না থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভৎসনার শিকার হন। ওই দিনই তাকে
সংসদ ভবনে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের বিরক্তির কথা স্পষ্ট করে দেন।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আশরাফকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা মত
রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন তিনি মেধাবী। তবে অধিকাংশ নেতাকর্মী সাংগঠনিক প্রয়োজনে না
পাওয়ায় তার ওপর ক্ষুব্ধই রয়েছেন। সৈয়দ আশরাফের জীবনযাপনের ধারা এবং দীর্ঘ সময় ধরে
অফিসে না যাওয়া নিয়ে একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমে বিদ্রুপের
শিকার হয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও নিজস্ব স্টাইলেই চলাফেরা অব্যাহত ছিল তার।
সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে,
প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতাবলে এটি করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ
হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, মন্ত্রীদের দায়িত্ব পুনঃবণ্টনের ক্ষেত্রে কখনও কারণ ব্যাখ্যা করা হয় না।
তবে সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করার বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকের
কাছেই বিস্ময়কর ঘটনা বলে মনে হয়েছে। তারা এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ দেখার অপেক্ষা করছেন।
শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফ কি দফতরবিহীনই থাকবেন, নাকি অনুজপ্রতিম সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের মতোই অভিমানের পথে হাঁটবেন- এই প্রশ্নই এখন প্রতিধ্বনিত
হচ্ছে আওয়ামী রাজনীতির অন্দরমহলে।
শেয়ার করুন