জনগনের আকাংখা কেউ পূরণ করলো না
৫ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হলো
সরকারের মন্ত্রিসভা রদবদলে জনগণের প্রত্যাশা অধরাই থেকে গেল। গতকাল সরকারের মন্ত্রিসভায়
আরও ৫ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হলো। এবারও মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ানোর পরেও সাধারণ
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সরকারের যেসব মন্ত্রীর বিরুদ্ধে
দুর্নীতি-গম কেলেঙ্কারীসহ নানা বিতর্কিত কর্মকা- নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সরকার
তাদেরকে বাদ দেবে। কিন্তু সরকার প্রধান তা না করে জনগণের সমালোচনার বাইরে থাকা স্থানীয়
সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন করায় সরকারের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা
আরও বেগবান হয়েছে। গতকাল মন্ত্রিসভায় রদবদলে নতুন করে সমালোচনারও সূত্রপাত হয়েছে।
অভিজ্ঞ একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে আলোচনাকালে তারা এরকম মতামতই প্রকাশ
করেছেন। তারা মনে করেন, জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন ও দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে যাদের
বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে তাদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়ে অভিযোগ তদন্ত হওয়া উচিত।
তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকার প্রধানকেই সে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান
সরকারের একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-গম কেলেঙ্কারীর অভিযোগ নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও
তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই সরকার নেয়নি। ফলে সরকারের সফলতা নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশংসা
কিংবা সমর্থন করছে না। সমালোচকরা মনে করেন সরকারের যেসব মন্ত্রী নেতা দল ও সরকারের
ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করছেন তাদেরকে এখনই দল ও সরকার থেকে বাদ দেওয়া উচিত। তবে একটি
সূত্র জানায়, ঈদের পরে সরকারের সমালোচিত মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন। খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, সরকারের সফলতা মøান করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন সরকারের খাদ্যমন্ত্রী
এডভোকেট কামরুল ইসলাম, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ
মহসীন আলী, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এছাড়া শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো:
নাসিম, পাটমন্ত্রী ইয়াজউদ্দিন প্রামাণিকসহ কয়েকজনের মন্ত্রণালয় চলছে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে।
তাদেরকেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া উচিত। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, সরকার
ও আওয়ামীলীগে এখন আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো হচ্ছে একটি
রোগাক্রান্ত দলের লক্ষণ। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মী জানায়, আওয়ামীলীগে
অতি উৎসাহীদের চাটুকারিতা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে তারা উত্তরণ চান।
তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগে বা যে কোনো সরকারে মন্ত্রিত্বের পরিবর্তন সাধারণ বিষয়। দুনিয়ার
সব দেশে সব সরকারেই তা ঘটে থাকে। কিন্তু আমরা যে রঙ্গভরা বঙ্গদেশের মানুষ। এদেশের
রাজনীতিতে সাধারণ ঘটনা বলে কিছু নেই। যা কিছু ঘটে বা ঘটছে তার পেছনে বা সামনে,
দেখা-অদেখায় রূপালী পর্দার মতো রহস্য আর সন্দেহ। সৈয়দ আশরাফের দপ্তর হারানোর ঘটনাটিও
ব্যতিক্রম নয়। দলের একাধিক শুভাকাক্সক্ষী মনে করেন আওয়ামী লীগে ষড়যন্ত্রকারীর সংখ্যা কম
নয়। তারা সব সময় শীর্ষনেতাদের আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। আস্থাভাজনও বটে। আর যারা এসব
বলছিলেন বা করার চিন্তা করছিলেন তাদের নেটওয়ার্ক কতটা শক্তিশালী সেটা নিশ্চয়ই বলে
বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে না। সে ঘটনাও খুব বেশি দিনের নয়। নিশ্চয় ইন্ধন বা প্ররোচনা আছে
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকারের মন্ত্রণালয় থেকে সরানো এবং মায়া-কামরুলকে বহাল
তবিয়তে রাখা। সরকারী সূত্র জানায়, গত বছর সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এটাই
কার্যতঃ প্রথম রদবদল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায়
আসার পর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। ওই বছর ২৬
ফেব্রুয়ারি এ এইচ মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নজরুল ইসলামকে পানিসম্পদ
মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর গত দেড় বছরে আর কোনো রদবদল আনেননি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্যে হজ নিয়ে বিতর্কিত এক মন্তব্যের কারণে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী
গত বছরের ১২ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েন। ওই পদ এখনও
শূন্য। আর গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে
দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেয়া হয় মন্ত্রিসভারই আরেক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার
খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। তিনি বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়েরও
অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। এদিকে গতকাল বঙ্গভবনে আরও ৩ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী নতুন
করে শপথ নেওয়ার পর বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৩২ জন মন্ত্রী, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর একজন
বিশেষ দূত ও পাঁচজন উপদেষ্টা, ২০ জন হলেন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। গতকাল
শপথ নেওয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, নুরুজ্জামান আহমেদ এবং মন্ত্রী নুরুল
ইসলাম বিএসসি, ইয়াফেস ওসমান এবং আসাদুজ্জামান কামাল। বঙ্গভবনে সন্ধ্যা ৬টায় প্রেসিডেন্ট
অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ তাদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেন
ভূঁইয়া। আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ,
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
শেয়ার করুন