আজও বলছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে -খালেদা জিয়া
বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে
হাসিনার অধীনে নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে বলে জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, আমরা নির্বাচন চাই, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এটা পরিষ্কার। তিনি বলেন, এটাকে কোনো কোনো পত্রিকায় নানাভাবে অপব্যাখ্যা দিয়েছে। এটা নিয়ে কোনো একটি পত্রিকা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, হাসিনা মার্কা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে না। তাই আজও বলছি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, সেই নির্বাচনেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। আগামীতে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে ‘নতুন ধারা’ রাজনীতির সূচনা করে দেশ পরিচালনা করবে বলে জানান বিএনপি নেত্রী।গতরাতে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।সভার শুরুতে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি নাজমুস সাদাত, সাধারণ সম্পাদক জমসেদ আলী, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেল ২১ জনের মধ্যে ১৭ জন বিজয়ী হন। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। ওই সভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমরা বলছি না তত্ত্বাবধায়ক সরকারই থাকতে হবে, নাম যাই হোক তা নির্দলীয় হতে হবে। গত কয়েকদিনে একাধিক জাতীয় দৈনিক বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্যকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলে। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বিএনপি ‘তত্ত্বাবধায়ক’ অবস্থান থেকে সরে এসেছে। অবশ্য বিএনপির সিনিয়র নেতারা এর অভিযোগ করে বলেছেন, সরকারের তলপিবাহক কিছু মিডিয়া এবং সংস্থা দুরভিসন্ধিমূলকভাবে অপপ্রচার করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্তি কাটাতে বক্তব্য রাখলেন বিএনপি প্রধান।তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, আমরা রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে চাই। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। আমাদের প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি ভুলে যেতে হবে। শহীদ জিয়ার বিএনপি এ ধরনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা চাই উন্নয়নের রাজনীতি, জনগণের কল্যাণ ও সুশাসনের রাজনীতি। সেজন্য আগামী দিনে আমাদের সুযোগ এলে সেই ধারার রাজনীতির সূচনা করব।দেশের জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিভাগ দলীয়করণের জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আওয়ামী লীগের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা ভর করে আছে পুলিশের ওপর ও কিছু প্রশাসনের ওপর। বিচার বিভাগের ওপরও তারা ভর করেছে। এই সরকার তাদেরকে (প্রশাসন ও পুলিশ) ভয় দেখায়, বলে যে, যদি আওয়ামী লীগ না থাকে তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তোমাদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করবে, তোমাদের সবাইকে জেল-জুলুম দিয়ে নানারকম হয়রানি করবে।এ ব্যাপারে খালেদা জিয়া বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, না বিএনপি ক্ষমতায় এলে অন্যায়ভাবে কাউকে কিছুই করা হবে না। কেন চাকরিচ্যুত হবে। তারা যা কিছু করেছে, আওয়ামী লীগের চাপেই করেছে, আমরা জানি, আমরা বুঝি। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে।বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধানবিরোধী কাজ করছে। তারা নাবালককে ভোটার করছে। তাদের লজ্জা থাকলে এখনই পদত্যাগ করা উচিত। আওয়ামী লীগ টিকবে না, তিনি আজীবন প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকবেন না। তার যদি সামান্যতম আত্মসম্মানবোধ থাকে, তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। তা না হলে জনগণ তাকে ছেড়ে দেবে না, তাকে এমনভাবে পাকড়াও করবে, তখন তার কি অবস্থা হবে- আমি জানি না। জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ বাতিল এবং সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান খালেদা জিয়া।খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু পরগাছা জুটেছে। এরা অতীতে বারবার নির্বাচন করেছে, তারা কোনোভাবেই জয়ী হতে পারেনি, জামানতও থাকেনি। এই পরগাছার কথা শুনে আওয়ামী লীগ নিজেকে ধ্বংস করছে। গত তিন মাসের আন্দোলনের যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের জন্য ক্ষমতাসীন দল ও জোট দায়ী অভিযোগ করে তিনি বলেন, কথায় কথায় তারা বলে বিএনপি নাকি পেট্রোলবোমা দেয়। আমরা এই রাজনীতি করি না। আমরা দেখাব এই পেট্রোলবোমা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ দেয়। তাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছে ওই পরগাছারা। পরগাছারাই ওইসব কাজ করেছে। বাসে আগুন কে দেয়? পুলিশ দেয়। পুলিশকে বলা হয়, তাদের বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ এটা নিজেরাও বলেছে, তারও রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। আওয়ামী লীগের লোকজন পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করে, বাসে আগুন দেয়, আর মিথ্যা মামলা দেয় বিএনপির বিরুদ্ধে। এসব অপকর্ম ওই পরগাছারা শিখিয়েছে।স্বাধীনতার পর জাসদের কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, বিএনপি তখন জন্ম হয়নি। এই পরগাছাগুলো দলে ছিল। তারা কত মানুষ হত্যা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে। তখন ইচ্ছেমতো তারা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে বাজে কথা বলেছে, অসম্মান করেছে। এখন যেহেতু নেতা নেই, পারলে জুতাটাকে চুমো দিতে থাকবে। ক্ষমতায় থাকার জন্য জুতাকে বারবার সালাম করবে। পরগাছার জন্য আজ শেষ হতে বসেছে। দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে।মাগুরায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে মা ও মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ঘটনায় দোষীরা এখনো ধরা না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, আজ আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে। সে জন্য মানুষ সুবিচার পায় না। আদালতের কোনো যুক্তিতর্কের ও সত্যের কোনো মূল্য নেই। আওয়ামী হলে যত খুন, চুরি-ডাকাতি যা-ই করুন, সব খালাস। আর বিএনপি না করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হুলিয়া ও জেল-জুলুম। দল পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ করে দলটির চেয়ারপারসন বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। ঢাকা থেকে আর কোনো কমিটি দেয়া হবে না। আপনাদের দায়িত্ব দেয়া হবে। তাই আমার লোক, আমার ভাই এটা দেখে কমিটি করাবেন না। যারা সাচ্চা, সৎ ও যোগ্য উপযুক্ত ব্যক্তি সংগঠনের জন্য তাদের নেতা নির্বাচিত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বে আনতে হবে। বয়স্কদের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করবেন। বন্যায় দেশ ভাসছে অভিযোগ করে ক্ষমতাসীনরা চুরিতে ব্যস্ত বলে মন্তব্য করেন দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। আগামী ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলকে ‘বিভেদ ভুলে’ ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ী করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।এ সময় জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, বোরহান উদ্দিন, মহসিন মিয়া, রাজশাহী জোনে মো. ইসহাক প্রমুখ প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।মতবিনিময় সভায় দলের নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার আমীনুল হক, হারুনুর রশীদ, সদ্য অপসারিত রাজশাহীর সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এরশাদ আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল মুনির, সহ-সভাপতি আবু সাঈদ চাঁন, মোখলেসুর রহমান, নুরুজ্জামান খান মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, জেলার সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শেয়ার করুন