৯ বছরের শিশুর লাশ স্যুটকেসে
শিশুটির বয়স ৯ কি ১০ বছর। ছেলে। লম্বা লম্বা চুল, নিষ্পাপ মুখমণ্ডল। কোমল চেহারা। তবে তার সব কোমলতা খুবলে নিয়েছে নিষ্ঠুর পিশাচ কেউ। তার সারা শরীরে নির্মমতার চিহ্ন।
পুলিশ ও মর্গ সূত্র নিশ্চিত করেছে, নির্যাতনেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। লম্পট ঘাতকের বিকৃত লালসার শিকার হয়েছে সে। বলাৎকার করা হয়েছে তাকে, পরে হত্যা। কপাল থেকে পা পর্যন্ত আটটি স্থানে জখম, ছেঁকার দাগ।
নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির মৃতদেহ পাওয়া যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় নার্সিং কলেজের পাশের রাস্তায়; একটি পরিত্যক্ত স্যুটকেসে।
সোমবার মধ্যরাতে কয়েকজন পথচারী কালো রঙের স্যুটকেসটি দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ স্যুটকেস থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে নিয়ে যায়।
গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তার পরিচয় মেলেনি; মেলেনি কোনো সূত্র। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, চেহারা, পোশাক দেখে তাঁরা ধারণা করছেন শিশুটি গৃহকর্মী ছিল। ইস্ত্রি বা এ জাতীয় কোনো লোহার বস্তু দিয়ে তার শরীরে ছেঁকা দেওয়া হয়। পিটিয়ে জখম করার লক্ষণও মিলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কাছাকাছি এলাকায়ই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গতকাল রাতে মর্গ সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে শিশুটিকে বলাৎকার করার লক্ষণ দেখা গেছে। ময়নাতদন্তে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শাহবাগ থানার ওসি আবু-বকর সিদ্দিক বলেন, ‘নির্মমভাবে নির্যাতন করে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যা মামলা দায়ের করেছি। তার পরিচয় ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করেছি। একটি লাগেজ (স্যুটকেস) ছাড়া আর কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।’
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ময়নুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের কাছে ঢাকা নার্সিং কলেজের পাশের রাস্তায় একটি স্যুটকেস পড়ে ছিল। রাত সোয়া ১টার দিকে কয়েকজন পথচারী সেটি দেখে। তারা কৌতূহলবশে স্যুটকেসটির চেইন খুলতে গেলে শিশুটির চুল বেরিয়ে আসে। তখন তারা থানায় খবর দেয়। রাত দেড়টার দিকে স্যুটকেসের ভেতর থেকে ৯-১০ বছরের একটি ছেলেশিশুর লাশ বের করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদন এবং এসআই ময়নুলের বর্ণনায় জানা গেছে, নার্সিং কলেজের গেটের প্রায় ১০০ গজ দূরে জামতলা এলাকায় স্যুটকেসটি পড়ে ছিল। শিশুটির পরনে ছিল গোলাপি রঙের হাফহাতা গেঞ্জি এবং ধূসর রঙের হাফপ্যান্ট। তার কপালে, থুতনিতে জখম এবং বাঁ হাতের কবজিতে দুই ইঞ্চি পরিমাণ ফোলা জখম ছিল। পিঠের বাঁ পাশে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি দীর্ঘ পোড়া জখম ছিল, একই রকম প্রায় তিন ইঞ্চি জখম ছিল পিঠের মাঝখানে; এক ইঞ্চি পরিমাণ ঘাড়ের নিচে পিঠের ডানপাশে এবং কোমরের ওপরে বাঁ পাশে ছিল প্রায় সাড়ে তিন ইঞ্চি ছেঁকার জখম। বাঁ পায়ের হাঁটুর ওপরেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার চুল প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। শরীর ও মুখ শুকনো ছিল। তাকে যে স্যুটকেসে ভরা হয় সেটির দৈর্ঘ্য ৩০ ইঞ্চি, প্রস্থ ২৪ ইঞ্চি। তাতে শিশুটির মৃতদেহ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি।
মর্গ সূত্র জানিয়েছে, সোমবারই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে ছেঁকার চিহ্নগুলো মৃত্যুর দুই-তিন দিন আগের। এতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নির্যাতনেই শিশুটি মারা গেছে। হত্যার আগে তাকে বলাৎকার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘লাশটি হাসপাতালের বাউন্ডারির মধ্যেই পাওয়া গেছে। পাবলিক এরিয়া হওয়ার কারণে বোঝা যাচ্ছে না- কে সেটি নিয়ে এসেছে।’
শেয়ার করুন