ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ব্লগে না লেখার আহ্বান জানালো আইজিপির
‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, এমন কোনো লেখা ব্লগে লিখবেন না। কোনো ধর্মকে কটাক্ষ করে দেশবাসীর মনে আঘাত দেবেন না।’ আবার এ ধরনের কাজের জন্য কাউকে হত্যা করাও গুরুতর অপরাধ। কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখালেখি করলে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করার সুযোগ আছে। এ আইনে ১৪ বছর পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল ৫টায় পুলিশ সদর দফতরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক ব্লগার হত্যাকারী ও ব্লগারদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা মুক্ত মনে লেখালেখি করুন। কিন্তু ধর্মকে বাদ দিয়ে লিখুন।’ হত্যাকারীদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, কেউ যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, তাহলে তার নামে মামলা করুন। প্রচলিত আইনে তাদের শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু তা না করে ব্লগারদের হত্যা করা আইনে নেই, এমনকি ইসলামেও নেই।’সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর শিশু ও ব্লগার হত্যা মামলাসমূহের তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠক হয়েছে। আইজিপি বলেন, ব্লগার নিলয়সহ অন্যান্য ব্লগার হত্যাকা-ের অগ্রগতি সম্পর্কে সভায় বিস্তারিত আলোচনা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করা হয়। ব্লগার এবং মুক্তমনা লেখকদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটকে নির্দেশ দেন । তিনি ব্লগারদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় আরও বাড়িয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।সভায় সিলেটের সামিউল আলম রাজন, খুলনার রাকিব, বরগুনার রবিউল ইসলাম, চাঁদপুরের সুমাইয়া আক্তারসহ চাঞ্চল্যকর শিশুহত্যা মামলা এবং ঢাকার সুখী বেগমের চোখ উৎপাটন মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।পর্যালোচনা সভায় বলা হয়, এ সকল মামলার ইতোমধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসামি গ্রেফতার হয়েছে এবং আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। সামিউল হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। এ মামলার মোট ১৩ জন আসামির মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া রাকিব, রবিউল ও সুমাইয়া হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সুখী বেগমের চোখ উৎপাটন মামলার তিনজন আসামির মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পর্যালোচনা সভায় জানানো হয়। এ মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আইজিপি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে মামলাসমূহের চার্জশিট দেয়ার নির্দেশ দেন।আইজিপি বলেন, শিশু হত্যা এবং শিশু নির্যাতন কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিশু হত্যা ও নির্যাতন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে সকল ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।সভায় এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সিআইডি ডিআইজি সাইফুল আলম, ডিআইজি (অপারেশন্স) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) হেলাল উদ্দিন বদরীসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ার করুন