বিএনপি চায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পুনঃতদন্ত
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের পুনঃতদন্তের দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতা এমকে আনোয়ার ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদসহ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার সরকারের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ’ বলে অভিযোগ করেছে দলটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এই দাবি জানান।গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের দিন মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন ‘ইন্ডিপেন্ডেট টিভি’তে প্রচারিত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করীম সেলিম ও তৎকালীন সেনাপ্রধান ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা কেএম শফিউল্লাহর দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ওই টেলিভিশনে সেদিন আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা যে কথোপকোথন প্রচারিত হয়েছে, তা থেকে অনুমান করা যায়, সেদিনের সেনাবাহিনী প্রধান কেএম শফিউল্লাহ ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই অভিযোগ করেছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতা শেখ ফজলুল করীম সেলিম। এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পুনঃতদন্ত করা হউক। এটা হলে সেনাবাহিনীর প্রধানের কি ভূমিকা ছিল, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ শেখ সেলিম সাহেব তুলেছেন তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। যিনি অভিযোগ তুলেছেন, তিনি শাসক দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, নিহত শেখ মুজিবের ভাগিনা। এটাকে হালকা করে দেখার বিষয় নয়।একই সঙ্গে ওই হত্যার সঙ্গে তৎকালীন উপ-সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করেন রিপন।তিনি বলেন, আমাদের দেশে মিডিয়ার একটি অংশ কখনো কখনো ১৫ আগস্টের ঘটনার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে তার চরিত্র হনন করার জন্য অসত্য মিথ্যা কাল্পনিক তথ্য দিয়ে থাকেন। আমরা সব সময় উল্লেখ করেছি জিয়াউর রহমান খুন-হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেননি। তিনি চাকরি জীবনে একজন রয়েল ও ডিসিপলিন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিকভাবে বিএনপি আজকে প্রধান বিরোধী দল, বার বার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা বলতে চাই, ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বলে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এজাতীয় মনগড়া অভিযোগ তোলা হয় বলে আমি মনে করি, শেখ মুজিবুবর রহমানের রুহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যাবে না। তার প্রতি সম্মান দেখাতে হলে প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করতে হবে। যারা ওই নির্মম হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।পুনঃতদন্তের কারণ ব্যাখ্যা করে রিপন অভিযোগ করে বলেন, আমরা মনে করি, ১৫ আগস্টের ঘটনায় জড়িত অনেকে বিচারের আওতার বাইরে রয়েছেন। নতুন করে তথ্য বেরিয়েছে, তৎকালীন সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে। তাই সরকারকে বলব, নিজের ঘর থেকে আগে পুনঃতদন্ত শুরু করুন। কেএম শফিউল্লাহ এখন আওয়ামী লীগের লোক। সুতরাং শফিউল্লাহ থেকে শুরু হউক। আশা করি, সরকার আমাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবেন।নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, পত্র-পত্রিকায় এসেছে ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারা যুক্ত ছিলেন। কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ওই হত্যাকা-ে ইন্ধন দিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করা উচিৎ। শেখ আবদুল আজিজসহ বিভিন্ন বইয়ে বলা হয়েছে, ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের বিষয়টি আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রীদের কাছে জানানো হয়েছিল। অভ্যুত্থানে অ্যাপুচ করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া। সে সমস্ত নেতারা তখন কেন নিশ্চুপ ছিলেন? রক্ষীবাহিনী ও তার প্রধান তোফায়েল আহমেদ সাহেব কেন নিশ্চুপ ছিলেন, তার কেন ভূমিকা ছিল নাÑ এসব বিষয় পুনঃতদন্ত করে দেখা উচিৎ।১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না দাবি করে রিপন বলেন, তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের হাতে কোনো কমান্ড ছিল না। ওই পদের কোন গুরুত্ব ছিল না বলেই পরবর্তী সরকার ওই পদটি বিলুপ্ত করে দেয়। বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল গঠন করায় আওয়ামী লীগের নেতারা জিয়াউর রহমানকে কটাক্ষ করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অথচ তারা তৎকালীন সময়ে জেনারেল চিফ অব স্টাফ খালেদ মোশাররফ, ৪৪ ব্রিগেডের প্রধান সাফায়াত জামিলসহ অন্যান্যদের আক্রমণ কিংবা দোষারোপ করে না। অথচ খালেদ মোশাররফ ওই সময়ে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে সেনাপ্রধানকে অন্তরীণ করে নিজে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে যাদের খুনি বলা হয়, ফারুক বলেন, রশিদ বলেন, তাদের সবাইকে বিদেশে চলে যেতে সাহায্য করেছেন। খুনিদের বিচারের সম্মুখীন করা কিংবা আটক করতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা (খুনীরা) ৩ নভেম্বর দেশত্যাগ করেছিল।এমকে আনোয়ার ও শওকত মাহমুদ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ড. আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করেন, উচ্চ আদালতের জামিনে থাকা আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার ও কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক মঙ্গলবার দুটি আলাদা আদালতে হাজির হলে তাদের জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা দুঃখজনক, উদ্বেগের। দলের চেয়ারপারসনে উপদেষ্টা ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে যে প্রক্রিয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ আটক করা হয়েছে, আমরা এই আটকের নিন্দা জানাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিরোধী দলের নেতারা আটক হচ্ছেন, মামলার মুখে পড়েছেন ও কারাগারে যাচ্ছেন। সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব, প্রতিহিংসার পথ পরিহার করুন, সুস্থ রাজনৈতিক ধারার সূচনা করেন।রিপন বলেন, এমকে আনোয়ার একজন প্রবীণ নাগরিক, সৎ রাজনীতিক। ৮৩-৮৪ বছর বয়স্ক মানুষের জেলে থাকা খ্বুই কষ্টকর। বিষয়গুলো আদালত বিবেচনায় নিলে আমরা খুশি হতাম। যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে এবং রাজনৈতিক নেতারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যখন নিজেদের সমর্পণ করেন। তখন আদালত তাদের জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।আমরা আদালতের কাছে প্রত্যাশা করব আমাদের অসুস্থ বন্দি নেতাদের প্রতি সুবিচার করবেন। তাদের জামিন দিলে তারা বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধার কারণ হবেন না। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশী। যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, আবুল কালাম আজাদসহ বন্দি নেতাদের মুক্তি দাবিও জানান দলের
শেয়ার করুন