ছাত্রলীগ নেতা আরজু হত্যার অভিযোগ র্যাগব-২ অধিনায়কসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার আসামি ছাত্রলীগ নেতা মো. আরজু মিয়াকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে র্যা ব-২ এর অধিনায়কসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন তার বড় ভাই মাসুদ রানা। আরজু এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজুর বড় ভাই গতকাল রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগ দাখিল করেন।যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে র্যা ব-২ এর অধিনায়কের নামও মাসুদ রানা। তিনি একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। বাকি তিন আসামি হলেন- উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাহেদুর রহমান, পরিদর্শক মো. ওয়াহিদ ও রাবের সোর্স রতন।বাদীর আইনজীবী আজিম উদ্দিন বলেন, “মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মোহাম্মদ আদনান আবেদন শুনেছেন। বিষয়টি আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।”বাদী আরজিতে বলেছেন, র্যা ব আরজুকে ‘সুপরিকল্পিতাভাবে তুলে নিয়ে’ ১৭ অগাস্ট বিকাল থেকে পরদিন ভোরের মধ্যে কোনো এক সময় হাজারীবাগ পার্ক ও শিকদার মেডিকেলের মাঝামাঝি এলাকায় নিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধের নামে’ গুলি করে হত্যা করে।” পরদিন মর্গে গিয়ে মাসুদ রানা ভাইয়ের লাশ পান বলে আরজিতে উল্লেখ করেছেন। এর আগে হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসও ওই ঘটনাকে হত্যাকা- বলেছেন, যদিও র্যা বের দাবি, আরজুর মৃত্যু হয়েছে বন্দুকযুদ্ধে।মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ তুলে গত ১৬ অগাস্ট মোহাম্মদ রাজা নামে এক কিশোরকে হাজারীবাগের গণকটুলী এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই কিশোর আরজুর প্রতিবেশী। আরজুই ওই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অভিযোগ তুলে রাজার বোন মামলা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজারীবাগের বড়ইখালী এলাকায় কথিত সেই বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে র্যালবের দাবি।লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ রানা সে সময় বলেছিলেন, মামলা হওয়ার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারীবাগ পার্কের পানির পাম্পের কাছ থেকে আরজুকে আটক করেন তারা। পরে তাকে নিয়ে বাকি আসামিদের ধরতে অভিযানে নামেন র্যাকব সদস্যরা। “রাত সাড়ে ৩টার দিকে বেড়িবাঁধের বাড়ুইবাড়ি এলাকায় মান্নান প্রিন্সিপালের বাড়ির সামনে ওঁৎ পেতে থাকা আরজুর সহযোগীরা র্যাাব সদস্যদের দেখে গুলি শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য র্যািবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আরজুর গায়ে গুলি লাগে। পরে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।” পরদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে র্যািব গুলিবিদ্ধ আরজুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর গত ১৯ আগস্ট আরজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের নেতারা। থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক হামিদ সাজু বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটিকে ‘কল্পকাহিনী’ আখ্যায়িত করে জড়িত র্যািবের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, “হাজারীবাগ এলাকা বিএনপির ঘাঁটি। গত নির্বাচনের পর এলাকায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একটি পক্ষ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উদীয়মান ছাত্রনেতা আরজুকে হত্যা করেছে।” আর মোবাইল চুরির অভিযোগে ‘গণপিটুনিতে’ রাজার মৃত্যু হয় বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের এই নেতা। অন্যদিকে রাজার বোন রেশমা বেগমের দাবি, তার ভাইকে আটকের পর বেধড়ক পেটান আরজু। তিনি মাফ চেয়ে ছেড়ে দিতে বললেও দেননি। ওই সংবাদ সম্মেলনের আরজুর বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, “আমার ভাইকে সন্ত্রাসী বলবেন না। তার অপরাধ, সে বড় নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সে সব সময় মানুষের সেবা করত।”
শেয়ার করুন