মোশতাক সরকারে জাসদ নয় আ’লীগের অনেক নেতা যোগ দিয়েছিলেন-হাসানুল হক ইনু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যায় জাসদের ভূমিকা
হঠাৎ করে জাসদের বিরুদ্ধে আক্রমণকে একটি চক্রান্ত বলে মন্তব্য করছেন
তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
বিষয়টিকে রহস্যজনক ও বিভ্রান্তিমূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের
স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশেই এমন বক্তব্য দেয়া
হচ্ছে। এতে বিএনপি-জামায়াতসহ জঙ্গিগোষ্ঠীই লাভবান হবে। তিনি জানান, জাতীয়
চার নেতা ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গঠিত খন্দকার
মোশতাক সরকারে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু জাসদের কোনো নেতাকর্মী সেই সরকারে যোগ
দেননি। গতকাল (বুধবার) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন
তথ্যমন্ত্রী।হাসানুল হক ইনু বলেন, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট
পর্যন্ত জাসদ রাজনৈতিক দল হিসেবে কী কর্মকা- করেছে, কী ভূমিকা রেখেছে, জাসদ
নেতাদের কী ভূমিকা ছিল তা পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনে প্রকাশিত ও
প্রচারিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জাসদ সৃষ্টির পর থেকে রাজনৈতিক
দল হিসেবে বিভিন্ন সময় নেয়া পদক্ষেপ ভুল ছিল না সঠিক ছিল, সেটি ইতিহাসই
বিচার করবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জাসদকে জড়ানোর যে অপচেষ্টা
বা ষড়যন্ত্র, এটার কোনো ভিত্তি নেই। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দীর্ঘদিন বিচার
প্রক্রিয়া শেষে বিচারকরা রায় ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সাক্ষীর জেরা থেকে
অভিযোগপত্র কোনো জায়গায় জাসদ সম্পর্কে একটি শব্দও লেখা নেই। তথ্যমন্ত্রী
বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে জাসদ একটি
প্রচারপত্র দেয়। মোশতাক সরকারের ৮৩ দিনের শাসনকালে জাসদের অনেক
নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা
হয়। জাসদের কোনো নেতা মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলায়নি। কারা বঙ্গবন্ধুর রক্ত
মাড়িয়ে মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় হালুয়া-রুটির ভাগের জন্য ভিড়েছিল, তা
সবাই জানে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর মোশতাকের সরকারে বঙ্গবন্ধুর
মন্ত্রিসভার দেড় ডজন সদস্য যোগ দিয়েছিলেন। এদের অনেকেই পরে বিএনপি ও জাতীয়
পার্টিতে সক্রিয় হন। তবে আব্দুল মান্নান, আব্দুল মোমেন, দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ
কয়েকজন ফিরে আসেন আওয়ামী লীগে। তিনি বলেন, এতদিন পর বঙ্গবন্ধু
হত্যাকান্ডের সঙ্গে জাসদকে জড়িয়ে বিএনপির সুরে আওয়ামী লীগ নেতারা কেন এমন
বক্তব্য রাখছেন তা বোধগম্য নয়। এ ধরনের প্রয়াশ ১৪ দলীয় জোটের ঐক্যকে বিনষ্ট
করবে।আওয়ামী লীগ থেকে সমালোচনা হওয়ায় জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন কি না?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটা তো আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক
অবস্থান না। আওয়ামী লীগ ও জাসদ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলন-নির্বাচন এবং
সরকার পরিচালনায় আমরা একসঙ্গে আছি এবং আমরা মনে করি, এই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত
নেয়ার জন্য ঐক্য দরকার।উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক
অনুষ্ঠানে শেখ সেলিমকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে
বলা হয়, স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই
গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ
হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল
রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল।শেখ সেলিমের বক্তব্যের পরের দিন
বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনও সংবাদ সম্মেলনে জাসদের ১৯৭২-৭৫ সময়কার
ভূমিকার তদন্ত দাবি করেন।এরপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
মাহাবুব-উল আলম হানিফ আবার বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে
দায়ী করে বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেন, ইনুরা তখন
অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন।
শেয়ার করুন