গাজা সংকটে অগ্রগতি, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ সম্পন্নের পথে
বাংলাদেশে মৃত লোককে জীবিত করতে ওঝার তন্ত্রমন্ত্র!
মৃত মাসুদকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে জীবিত করার চেষ্টা
সাপের দংশনে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে দুই দিন
ধরে ঝাড়ফুঁক দিয়ে জীবিত করার আশায় দাফন
করতে দেওয়া হয়নি। চেয়ারে বসিয়ে খালি গায়ে
কোমরে কাফনের কাপড় বেঁধে ওঝা ঝাড়ফুঁক
দেয়। মাথায় থালাবাটি, পায়ে মুরগির বাচ্চা রেখে
মন্ত্র চলে। প্রথম দিন এ তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে 'ফুঁ'
দেওয়া গায়ে পানি ছিটিয়ে এক ওঝা জীবিত করার
চেষ্টা চালালেও পরদিন যোগ দিয়েছে ভোলার
লালমোহনের আরো 'ওস্তাদী' দুই ওঝা। এ
নিয়ে উৎসুক জনতার কাছ থেকে ওঝাদের জন্য
হাদিয়াও তুলেছে কয়েক যুবক। লক্ষ্মীপুরে
সাপের দংশনে মারা যাওয়া মাসুদ আলম (৩৫) নামের
ওই ব্যক্তিকে জীবিত করার নামে এমন লঙ্কাকাণ্ড
ঘটেছে। অবশ্য স্থানীয় সংবাদকর্মীদের
তৎপরতার কারণে বুধবার রাতেই নানা নাটকীয়তার পর
তড়িঘড়ি করে লাশটি দাফন করা হয়।
তবে এ ঘটনাকে জেলার সির্ভিল সার্জন
বলেছেন, মরা মানুষকে জীবিত করার সুযোগ
নেই। এটা শুধু প্রতারণা। এদিকে ওঝা এবং এ ঘটনার
সঙ্গে জড়িত মতলববাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে
এলাকাবাসী।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের
শাকচর গ্রামের তাজুল ইসলামের বাড়িতে মাসুদ
আলমকে জীবিত করতে মতলববাজদের
কুসংস্কারের আয়োজন চলে। মাসুদ ওই গ্রামের
তাজুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায়
চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়,
সোমবার রাতে মাসুদ আলম বাড়ির পাশের খালে মাছ
ধরতে যান। এ সময় বিষধর সাপ তাঁকে দংশন করলে
তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে
এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে
ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতিতে উন্নত
চিকিৎসার জন্য তাঁকে চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে তাঁর
মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ বাড়িতে আনা হলে তাঁকে মৃত
ঘোষণা করে দাফনের পরামর্শ দেন স্থানীয়
ডাক্তার। কিন্তু সাপের দংশনে মাসুদ মারা যাননি, তিনি
বেঁচে আছেন এমন দাবি করে চররমণী এলাকার
ওঝা রৌশন আলী। এরপর থেকে মৃত
ব্যক্তিকে চেয়ারে বসিয়ে রেখে মাথায় থালাবাটি,
পায়ে মুরগির বাচ্চা ও কোমরে সাদা কাপড় বেঁধে
তন্ত্রমন্ত্র দিতে থাকে। প্রথম দিন এ তন্ত্রমন্ত্র
ওঝা রৌশন আলী চালালেও বুধবার এ
তন্ত্রমন্ত্র চালাতে যোগ দিয়েছে ভোলার
লালমোহনের আরো দুই ওঝা।
শাকচর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো.
সেলিম জানান, ওঝা রৌশন আলী দাবি করছে,
মাসুদ এখনো বেঁচে আছেন। সে জন্য দুই দিন
ধরে ঝাড়ফুঁক দেওয়া হচ্ছে। ওঝারা
দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছে।
পরে বুধবার রাত ১০টার দিকে অবস্থা বেগতিক
দেখে তড়িঘড়ি করে লাশটি দাফন করা হয়। মাসুদ
আলম এখনো বেঁচে আছেন দাবি করে ওঝা
রৌশন আলী বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের
জানান, তিনি জীবিত রয়েছেন। সে এবং অন্য
দুইজন তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে স্থানীয়
লোকজন জানায়, বুধবার রাতে কৌশলে ওঝারা
সটকে পড়ে। পরে রাত ১০টার দিকে জানাজা
শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় ওঝা রৌশন আলীর এলাকায়
দেখা যায়নি।
হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আরএন (ফাজিল) মাদ্রাসার
অধ্যক্ষ আবদুল আজিজ মজুমদার বলেন, ডাক্তার
রোগীকে মৃত ঘোষণা করার পর আর জীবিত
হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্রেফ
কুসংস্কারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ
ব্যাপারে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো.
গোলাম ফারুক ভূঁইয়া জানান, সাপের দংশনে মাসুদ
আলমের মৃত্যু হয়েছে বলেই তিনি জানেন। মৃত
ব্যক্তিকে বাঁচানোর কথা বলে ওই পরিবার ও
এলাকাবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে
নেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ
সুপার (সদর) মো. জুনায়েত কাউছার বলেন, ঘটনাটি
কেউ পুলিশকে জানায়নি। মৃত ব্যক্তিকে কেউ
জীবিত করার চেষ্টা করা কুসংস্কার। বিষয়টি খোঁজ
নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেয়ার করুন