গাজা সংকটে অগ্রগতি, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ সম্পন্নের পথে
ট্রাকের ধাক্কায় গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ পুলিশ ও আসামি নিহত, দগ্ধ ৮
মাদক কারবারিদের ধরতে চট্টগ্রাম গিয়েছিল ঢাকা
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। দুই দিনের
অভিযানে ২২ হাজার পিস ইয়াবাসহ পাঁচ কারবারিকে
গ্রেপ্তার করে তারা। আসামিদের নিয়ে ঢাকায়
ফেরার পথে বুধবার গভীর রাতে ঘটেছে
‘ভয়াবহ দুর্ঘটনা’। গোয়েন্দা পুলিশের ব্যবহৃত
মাইক্রোবাসকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় পেছন
থেকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। তাতেই গাড়ির গ্যাস
সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন
কনস্টেবল আবদুল আজিজ (৩৫) ও আসামি শওকত
(৩০)। এ ঘটনায় দগ্ধ আরো আটজন বর্তমানে ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে
চিকিৎসাধীন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের অতিরিক্ত
মহাপরিদর্শক (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপস) মো.
মোখলেসুর রহমান ও ডিএমপির কমিশনার মো.
আছাদুজ্জামান মিয়া চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের
দেখতে বার্ন ইউনিটে যান। মো. মোখলেসুর
রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিবির টিম একটি
সফল অভিযান শেষে ঢাকা ফিরছিল। পথিমধ্যে এ
মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয় তারা। আমরা আহতদের
সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নিয়েছি।
হতাহতদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। ঘটনাটি
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তবে আমরা এর পেছনে কোনো ধরনের
নাশকতার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। এটা তদন্ত
সাপেক্ষে জানা যাবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া)
মোনতাসিরুল ইসলাম জানান, সোমবার ডিবির পশ্চিম
বিভাগের একটি দল গোপন খবরের ভিত্তিতে
চট্টগ্রামে ইয়াবা কারবারিদের ধরতে যায়। সেখানে
অভিযান চালিয়ে ২২ হাজার ইয়াবাসহ পাঁচজনকে আটক
করে বুধবার রাতে ঢাকায় ফিরছিল দলটি। রাত সাড়ে
১১টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সুজাতপুর
এলাকার আমজাদের বাজার নামে পরিচিত স্থানে একটি
ট্রাক পেছন থেকে মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা
দেয়। মাইক্রোবাসটি রাস্তার পাশে উল্টে গিয়ে
গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। গাড়িতে আগুন
লেগে গেলে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান
পুলিশ কনস্টেবল আবদুল আজিজ। মাইক্রোবাসে
থাকা অন্য চার পুলিশ সদস্য ও পাঁচ আসামি দগ্ধ হন।
তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া
হয়। পরে তাঁদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের
আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন,
দগ্ধদের মধ্যে শওকত নামের একজন সন্ধ্যা ৬টার
দিকে মারা গেছেন। তাঁর শরীরের ৮৭ শতাংশই
পুড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসাধীন আরো পাঁচজনের
অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ দগ্ধ
এসআই আবদুল মালেককে আইসিইউতে, ৩৩ শতাংশ
দগ্ধ আসামি নাজিম, ২৮ শতাংশ দগ্ধ আসামি আবদুর শুকুর,
১৮ শতাংশ দগ্ধ আসামি সাদ্দাম এবং ২৭ শতাংশ দগ্ধ আসামি
জসিমকে এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া
কনস্টেবল শরীফুল ইসলামের শরীরের ৪
শতাংশ, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেনের ৫
শতাংশ এবং কনস্টেবল নূরুল হাসানের ৮ শতাংশ পুড়ে
গেছে। তাঁদের তিনজনকে বার্ন ইউনিটের
পঞ্চম তলায় রাখা হয়েছে।
দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটির চালক কনস্টেবল
আনোয়ার হোসেন জানান, রাস্তায় যানজট ছিল। এ
সময় পণ্যবাহী একটি বড় ট্রাক পেছন থেকে
মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা লেগেই
মাইক্রোবাসটি উল্টে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়।
পাঁচ আসামিসহ পুলিশ সদস্যরা আগুনের মাঝেই
মাইক্রোবাস থেকে বের হতে পারলেও আটকা
পড়েন কনস্টেবল আজিজ।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা বিভাগের পুলিশ সুপার
(এসপি) রেজাউল করিম বলেন, ‘সেনাকল্যাণ সংস্থার
রডবাহী একটি ট্রাক বেপরোয়াভাবে ধাক্কা
দিয়েছে মাইক্রোবাসটিকে। ঘটনার পর চালক
পালিয়ে গেলেও ট্রাকটি আটক করে স্থানীয়
থানায় নেওয়া হয়েছে।’
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁইয়া
বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনাটির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা
চলছে। ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত অথবা নাশকতা কি না, তা-ও
খতিয়ে দেখা হবে।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও
প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মির্জা
মোহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পরই
দগ্ধ ৯ জনকে হাসপাতালে আনা হলে প্রাথমিক
চিকিৎসার পরই তাঁদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’ ঢাকা
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের
উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘দুই দিন আগে
মাদক প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার মাহমুদ
নাসের জনির নেতৃত্বে চট্টগ্রাম গিয়েছিল একটি
দল। মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে তারা
চট্টগ্রামের দুই স্থানে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ
পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা ফেরার পথে
ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশসহ দুজনের মৃত্যুর পাশাপাশি
জব্দ করা ইয়াবাগুলো পুড়ে গেছে। এ ঘটনার
পেছনে অন্য কিছু আছে কি না, তা-ও আমরা
খতিয়ে দেখব।’
নিহত কনস্টেবল আবদুল আজিজের বাড়ি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। তাঁর একমাত্র ছেলের
বয়স এক বছর বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন।
নিহত আসামি শওকতের বিস্তারিত পরিচয় গত রাত
পর্যন্ত জানা যায়নি।
শেয়ার করুন