ষড়যন্ত্র করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশ ও দেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সব নাগরিককে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখনও এ দেশে একাত্তরের 'শকুনি' এবং পঁচাত্তরের হায়নাদের বংশধররা সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ষড়যন্ত্র করে আর তাঁদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ৫২তম মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, আমাদের বিজয়ের ৫১ বছর পূর্ণ হলো। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্টেম্নর দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পঁচাত্তরের পর ২৯ বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন- আসুন, এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেই, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। ভাষণের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার জাতীয় নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ভারতসহ মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিভিন্ন দেশ এবং সেসব দেশের জনগণ, ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় স্বাধীনতা ও উন্নয়নবিরোধী একটি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আরেকটি দল, যার জন্ম ও লালনপালন সেনানিবাসে, সেই দলটির হাতে শুধুই রক্তের দাগ। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থ পাচার, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন? দেশের মানুষের ওপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে। পাচার করা অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে। টানা তিন মেয়াদে গত ১৪ বছরে তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না; উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত না। তিনি বলেন, এখন জনগণকেই বেছে নিতে হবে তাঁরা কী চান- উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা, নাকি বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিষহ জীবন?
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। অযথা গুজবে কান দেবেন না। ব্যাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে বিপদ ডেকে আনবেন না। আমাদের বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এ জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ কোনো জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করব।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন