যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে “নো কিংস” বিক্ষোভের আগে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন
পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের সম্মিলিত হামলা
সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনকারী দের উপর হামলা নির্যাতন
ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক
রামপাল ও ওরিয়ন গ্রুপের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র
স্থাপনের প্রতিবাদে সিপিবি ও বাসদের ঢাকা
থেকে বাগেরহাট ‘সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’
কর্মসূচি সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ
হয়েছে। গতকাল বাগেরহাটে এ কর্মসূচি
শেষ করা হয়। অপরদিকে ঢাকা থেকে
সুন্দরবন যাওয়ার পথে বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার
লংমার্চে পথে পথে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
মানিকগঞ্জে পুলিশের লংমার্চে অংশ নেয়া
জনতাকে লাঠিপেটা করার পর গতকাল মাগুড়ায়
মোর্চার কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের
সংঘর্ষ হয়েছে। অতঃপর পুলিশ কার্যত কর্ডন
করে লংমার্চ যশোরের দিকে নিয়ে যায়।
ইনকিলাব প্রতিনিধিরা জানান, ১৩ অক্টোবর সিপিবি-
বাসদ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
সমাবেশ করে সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা শুরু
করে। পাঁচ দিনব্যাপী সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’র
কর্মসূচিতে মানিকগঞ্জ, গোয়ালন্দ, ফরিদপুর,
মধুখালী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, দৌলতপুর ও
খুলনায় সমাবেশ করে। গতকাল এই অভিযাত্রা
দলটি খুলনা থেকে বাগেরহাটের
উদ্দেশে রওনা দিয়ে প্রথমে
ফকিরহাটের কাটাখালী মোড়ে সমাবেশ
করে। এরপর দুপুরে বাগেরহাট শহরে
এসে পুরাতন কোর্ট চত্বরে
সমাবেশের মধ্য দিয়ে সুন্দরবন রক্ষা
অভিযাত্রা কর্মসূচি শেষ করে। সমাবেশে
সিপিবির বর্তমান উপদেষ্টা কমরেড মঞ্জুরুল
আহসান খান, রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাজ্জাত
জহির চন্দন, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, বাসদের
সমন্বয়ক কমরেড খালেকুজ্জামান প্রমুখ
বক্তব্য রাখেন। এদিকে ঢাকা থেকে
সুন্দরবনমুখী গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার
রোডমার্চ র্যালীতে মাগুরায় পুলিশের
লাঠিচার্জ সমন্বয়ক সাইফুল হকসহ ১০
নেতাকর্মী আহত হবার ঘটনা ঘটেছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল ও সুন্দরবন রক্ষার
দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা শনিবার
সকালে মাগুরায় লংমার্চ র্যালী বের করলে
পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে সমন্বয়ক সাইফুল
ইসলামসহ কমবেশী ১০ জন আহত হয়। সকাল
সাড়ে ১১টার দিকে বাম মোর্চার লংমার্চের
গাড়ী বহর মাগুরার ঢাকা রোড বাসস্টান্ড এলাকায়
পৌঁছায়। সেখানে বাম মোর্চার
সমন্বয়ক সাইফুল হক, বাম গণতান্ত্রিক
আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েত সাকি,
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী মোশরেফা মিসুর
নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীরা
মহাসড়কে লংমার্চের র্যালী বের
করে। এ সময় মাগুরা একদল পুলিশ র্যালীতে
বাধা দেয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে
র্যালীটি মাগুরা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসের
সামনে পৌঁছালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে
বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, কমরেড
সুদাংশ চক্র, ফকরুদ্দিন আজিজসহ ১০
নেতাকর্মীকে আহত করে বলে
জুনায়েত সাকি দাবি করেছে। পরে ঝিনাইদহ
এর উদ্দেশে লংমার্চের গাড়ী বহর দুপুর
১২টার দিকে মাগুরা ছেড়ে যায়। অন্যদিকে
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুন্সী
আসাদুজ্জামান জানান, পূর্ব অনুমতি ছাড়া হঠাৎ করে
বাম মোর্চার র্যালী মহসড়কে যানবাহন
চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি এবং সরকারবিরোধী
শ্লোগান দিলে তাদেরকে ছত্র ভঙ্গ করা
হয়েছে। কোন লাঠিচার্জের ঘটনা
ঘটেনি। এদিকে পুলিশ প্রহরায় অজানার
উদ্দেশে নেয়া হচ্ছে বলে
অভিযোগ করেছেন মোর্চার অন্যতম
নেতা জোনায়েদ সাকি। আর মোর্চার
সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেছেন, মাগুরায় পুলিশ,
আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ
সম্মিলিতভাবে তাদের ওপর হামলা করেছে।
এতে তিনিসহ অন্তত পাঁচজন আহত
হয়েছেন। দুপুরে বাম মোর্চার রোড
মার্চটি যশোর শহরের প্রবেশমুখ
পালবাড়িতে এসে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে
উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে মোর্চার
সমন্বয়ক সাইফুল হক অভিযোগ করেন, মাগুরায়
তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ বাধা
দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বাম
নেতাকর্মীদের ওপর। পুলিশের
সঙ্গে এই হামলায় অংশ নেয় আওয়ামী
লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের
ক্যাডাররাও। হামলায় সাইফুল হক নিজেসহ মোর্চার
অন্তত পাঁচজন কর্মী আহত হন। সাইফুল হক
অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু মাগুরায়ই নয়,
পথে পথে বাধা দেয়া হচ্ছে শান্তিপূর্ণ এই
কর্মসূচিতে। রোডমার্চে
অংশগ্রহণকারীদের ঝিনাইদহে দুপুরের
খাবার গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ সেখানে
তাদের খাবার খেতে দেয়নি। যশোর
শহরের ওপর দিয়ে খুলনার দিকে যাওয়ার কথা
থাকলেও পুলিশ জোর করে বাইপাস সড়ক
ধরিয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ
দেশে আইনের শাসনের নামে
একদলীয় স্বৈরশাসন চলছে। এ সময়
বামমোর্চার অন্যতম নেতা জোনায়েদ
সাকি অভিযোগ করে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ
কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সরকার তাদের
মুখোশ উন্মোচন করেছে।’ তিনি
অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ থেকে তারা
মূলত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।
পুলিশ তাদের অজানা গন্তব্যের দিকে নিয়ে
যাচ্ছে। ‘পুলিশের উদ্দেশে কী আমরা
জানি না’ বলেন বামপন্থী এই তরুণ নেতা।
রোডমার্চের আগমন উপলক্ষে শহরের
প্রবেশপথ পালবাড়িতে পদস্থ কর্মকর্তাদের
নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।
রোডমার্চ শহরের বাইপাস সড়ক হয়ে চাঁচড়া
অভিমুখে যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের পিছু
নেয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। পালবাড়ি
মোড়ে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাদের
মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম
আরিফুল হক, সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা,
কোতয়ালী থানার ওসি শিকদার আক্কাছ
আলী প্রমুখ। জানতে চাইলে সহকারী
পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, ‘আমরা
রোডমার্চে বাধা দিচ্ছি না। রোডমার্চে অংশ
নেয়া নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করছি। শহরের মধ্যে ঢুকলে নিরাপত্তাজনিত
সমস্যা হতে পারে আশঙ্কায় বাইপাস সড়ক
ধরে রোডমার্চটি খুলনার দিকে যাবে।’
শেয়ার করুন