যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে “নো কিংস” বিক্ষোভের আগে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন
বাংলাদেশে দুধ খাওয়ায় খুন্তির ছেঁকা !
গোপালগঞ্জের বড়ফা গ্রামের ১০ বছরের
মেয়ে লিয়া। সংসারে তীব্র অভাবের কারণে
তাকে গৃহকর্মীর কাজ করতে ঢাকায় পাঠানো
হয়েছিল। সেখানে তাকে গুঁড়ো দুধ চুরি করে
খাওয়ার অপবাদ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম
খুন্তির ছেঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রুটি
বেলার বেলন দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া
হয়েছে তার চারটি দাঁতও। নির্যাতনের প্রায় একই
ধরনের বীভৎস বিবরণ দিয়েছেন ঝালকাঠির রাজাপুর
উপজেলার প্রতিবন্ধী গৃহকর্মী তাসলিমা বেগম
(৩০)। গৃহকর্ত্রী তাঁর শরীরে চুলা থেকে
ফুটন্ত মাংসের হাঁড়ি ছুড়ে মারেন। তাঁর দোষ ছিল,
কাজ শেষে বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি চেয়েছিলেন।
গোপালগঞ্জ : লিয়াকে কয়েক দিন আগে মা-বাবার
কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মেয়েটিকে
গত শুক্রবার গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট
জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে
গিয়ে দেখা গেছে, নির্যাতিত মেয়েটির গায়ে
এখানো আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। মুখ, হাতসহ
শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা। মুখের ভেতরের
দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাও বোঝা যাচ্ছে।
বড়ফা গ্রামের রহমান মীনার মেয়ে লিয়াকে ছয়
মাস আগে একই গ্রামের গ্রাম ডাক্তার শাহাবুদ্দিন
মীনা ও তাঁর স্ত্রী ঢাকার খিলগাঁর গোরান এ/পি ৪১৭
নম্বর বাসায় মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে কাজের
জন্য দিয়ে আসেন।
নির্যাতনের শিকার শিশু লিয়া হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে
সাংবাদিকদের বলেছে, 'কোরবানির ঈদের পরের
দিন বাড়ির বড় মেয়ে ছোট মেয়ের জন্য কিনে
আনা গুঁড়ো দুধ খেয়ে ফেলে। কিন্তু নজরুল
ইসলাম (গৃহকর্তা) ও তার স্ত্রী তিম্মি আমাকে চুরি
করে দুধ খাওয়ার অপবাদ দেয়। তখন তিম্মি খুনতি
পুড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়।
বেলুন দিয়ে পিটায়। এ সময় আমার চারটা দাঁত ভেঙে
যায়। তখন আমি জোরে জোরে চিৎকার করলে
পার্শ্ববর্তী শাহনাজ নামে এক খালা খিলগাঁও থানা
পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার
করে এবং নজরুল ও তিম্মিকে থানায় নিয়ে যায়। পরে
তাদের ছেড়ে দেয়। এরপর আমাকে বাসায়
রেখে চিকিৎসা করানো হয়। গত বুধবার রাতে নজরুল
ইসলাম আমাকে তার শ্বশুর শাহাবুদ্দিন ডাক্তারের
বাড়িতে রেখে যায়। পরে মাকে ডেকে তাঁর
সঙ্গে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।'
নির্যাতনের শিকার লিয়ার মা মর্জিনা বেগম বলেন,
'আমার মেয়েকে তিম্মির ছোটো মেয়েকে
দেখাশোনার জন্য ছয় মাস আগে দেড় হাজার টাকা
বেতনে ঢাকার বাসায় নিয়ে যায়। পরে মাইরা আধমরা
কইরা ফিরায় দিসে। অসুস্থ মেয়েকে হাসপাতালে
ভর্তি করসি। গ্রামের মাতুব্বররা টাকা দিয়ে আমাদের
মুখ বন্ধ করতে চাইসে। আমরা এখন ভয়ে আছি।
তার পরও বলব আমরা টাকা চাই না- এই ঘটনার উপযুক্ত
বিচার চাই।'
লিয়ার বাবা রহমান মিনা বলেন, 'গত শনিবার রাতে সাবেক
চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মিনা, জাফর মিনা, আবু মিনা,
কামরুল মিনা, শাহাবুদ্দিন মিনা, ফারুক মিনাসহ ১০-১২ জন
গ্রামের মাতুব্বর ফারুক মিনার বাড়িতে সালিস করতে
বসে। সেখানে আমাকে ডেকেছিল। তারা
মেয়ের চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ বাবদ এক লাখ ১০ হাজার
টাকা দেওয়ার কথা বলেন। মাতুব্বরদের কথায় আমি
রাজি হলেও মেয়ের মা রাজি না। মাতুব্বরদের
বিরুদ্ধে গেলে গায়ে টিকা কঠিন। তবু আমি এর বিচার
চাই।'
বিষয়টিকে ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে জালালাবাদ
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মিনা
বলেন, সালিস করেছিলাম মেয়েটি যাতে
আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
গৃহকর্ত্রী তিম্মির বাবা ও নজরুল ইসলামের শ্বশুর
শাহাবুদ্দিন মিনা বলেন, 'আমার জামাই লিয়াকে আমাদের
বাড়িতে দিয়ে ভালো-মন্দ কিছু না বলে আবার ঢাকায়
চলে গেছে। এরপর থেকে তার মোবাইল
ফোন বন্ধ রয়েছে। কী কারণে কী
হয়েছে তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে এ
ঘটনার নিন্দা জানাই।'
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীর
তিম্মির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ
করার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ থাকায় কথা বলা
সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে গোপিনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের
ইনচার্জ এসআই ইদ্রিস আলী ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা সেলিম রেজার সঙ্গে কথা হলে তারা
জানান, ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। অভিযোগ সেখানেই
করতে হবে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে
সেই পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা
(আরএমও) আবুল খায়ের রাসেলের স্ত্রী সুমা
আক্তারের বিরুদ্ধে এক প্রতিবন্ধী গৃহকর্মীর
শরীরে রান্না করা মাংস নিক্ষেপের অভিযোগ
পাওয়া গেছে। এতে গৃহকর্মী তাসলিমা বেগমের
(৩০) শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। তাসলিমা
বেগম রাজাপুর শহরের বাজার রোড এলাকার দিনমজুর
বাবুল হাওলাদারের স্ত্রী।
নির্যাতিত গৃহকর্মী তাসলিমা বেগম অভিযোগ
করেন, ওই বাড়িতে তিনি তিন বছর ধরে কাজ
করছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে তিনি রান্না
শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য ডা. রাসেলের
স্ত্রী সুমা আক্তারের কাছে অনুরোধ করেন। এ
সময় সুমা আক্তার রাগান্বিত হয়ে চুলার ওপরে থাকা
রান্না করা অবস্থায় মাংসের পাত্র তাঁর শরীরে
নিক্ষেপ করেন। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থান
ঝলসে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করলে তাঁর
স্বামীসহ অন্য কর্মচারীরা এগিয়ে আসেন। এ
সময় ডা. রাসেলও বাসায় ফিরে এ অবস্থা দেখে
হতভম্ব হয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে ডা. রাসেল ওই
গৃহকর্মীর শরীরের পোড়া অংশে সামান্য ওষুধ
লাগিয়ে এবং খাওয়ার জন্য কিছু ওষুধ দিয়ে গৃহকর্মী
তাসলিমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এ কথা কারো কাছে
প্রকাশ না করার জন্য তাসলিমাকে ভয়ভীতিও দেখান
ডা. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী। তবে তাঁর শারীরিক
অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তাঁর পক্ষে রাজাপুর স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে যাওয়াও সম্ভব নয়। কারণ ডা. রাসেল
সেখানেই কাজ করেন।
এ বিষয় নির্যাতিতা তাসলিমার স্বামী দিনমজুর মো. বাবুল
হাওলাদার বলেন, 'এখন প্রতিদিন ১৮০ টাকার ওষুধ
তাসলিমাকে খাওয়াতে হয়। আমরা গরিব মানুষ কিভাবে
তার চিকিৎসা করব? আমরা এই নির্যাতনের বিচার চাই।'
এ ব্যাপারে ডা. রাসেল বলেন, 'গৃহকর্মীকে
নির্যাতনের কোনো ঘটনা আমাদের বাসায় ঘটেনি।
তাসলিমা আমার বাসায় কাজ করত। অনেক দিন আগে
সে কাজ ছেড়ে চলে গেছে।'
শেয়ার করুন