আপডেট :

        ধর্ষকের শাস্তি সবার সামনে হোক: সোহম

        বায়ার্নের দাপটে বিদায় ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গো, পিএসজির মুখোমুখি কোয়ার্টারে

        ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদনগরে রাজনৈতিক উত্তেজনা: কে দায়ী?

        ইরানের কঠোর হুঁশিয়ারি: ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি

        এশিয়া কাপের সম্ভাব্য সূচি জুলাইয়ে প্রকাশিত হবে

        সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ: জুলাই সনদ প্রকাশ করবে এনসিপি - নাহিদ ইসলাম

        রথযাত্রার উৎসবে বিপর্যয়: উড়িষ্যায় ভিড়ে পিষ্ট হয়ে ৩ মৃত, ১০ জন আহত

        মনু মিয়ার শেষ বিদায়ে অভিনেতা খায়রুল বাসারের মানবিকতার জয়

        মেসি-রোনালদো: সময় পেরিয়েও অপ্রতিরোধ্য ফুটবলের দুই কিংবদন্তি

        মুরাদনগরের অশান্তির জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতারা দায়ী: আসিফ মাহমুদ

        ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে পাকিস্তানে দুইবার কাঁপল ধরিত্রী

        হিরো আলমের যত্নে রিয়া মনি, প্রকাশ করলেন তার শারীরিক অবস্থা

        হাছিনা নয় শেখ হাসিনা নয়, তবুও বারবার বদলাচ্ছে স্কুলের নাম

        জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বাজেট: ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২৩ কোটি টাকা

        কোকেন উৎপাদনে ঐতিহাসিক উচ্চতা, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উদ্বেগ

        ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক জোরদারে প্রস্তুত পুতিন, নতুন যোগাযোগের আভাস

        স্বর্ণের বাজারে ধস: এক মাসে সর্বনিম্ন দামে পৌঁছাল হলুদ ধাতু

        সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, ৩০০ গাড়ি অপেক্ষায়

        ট্রাম্পের দাবি: খামেনির প্রাণ বাঁচিয়েছি, ধন্যবাদ পাইনি

        এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা: কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে নতুন নিয়ম

গ্রাম শীতল ঢাকা উষ্ণ

গ্রাম শীতল ঢাকা উষ্ণ

রাজধানী ঢাকার সকালটা ছিল অন্যরকম। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় চারপাশ। বাড়তে থাকে শীতের অনুভূতি। এমন অবস্থা গত ১৫ ডিসেম্বরের। কিন্তু এমন পরিবেশ স্থায়ী হয়নি দু'দিনও। আবার বেড়ে যায় তাপমাত্রা। এখন ঢাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কিছুটা শীত। হিমেল হাওয়া। এর পর সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের তেজ। অথচ এখন বাংলায় পৌষ মাস। শীত যেন কোথাও লুকিয়ে আছে।

কিন্তু রাজধানীতে যখন উধাও, তখন উত্তরাঞ্চলসহ গ্রামাঞ্চলে কাঁপন ধরিয়েছে শীত। প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা যে কোনো গ্রামের সঙ্গে রাজধানীর দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ঢাকায়ও একেক এলাকায় একেক রকম শীত অনুভূত হচ্ছে। কোথাও ঠান্ডা বেশি কোথাও কম। এরই মধ্যে রাজধানীর বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ এতই বেড়েছে যে, তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ঢাকার বাতাস ছিল বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক থেকে শীর্ষে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতি ধ্বংস করে নগরায়ণ এবং প্রকৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভবন তৈরির কারণেই তাপমাত্রার এই পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া ভয়াবহ দূষণ, বিপুল যান চলাচল ও সুউচ্চ ভবনের কারণে ঢাকার বুকে শীত জেঁকে বসতে পারছে না। ঢাকার বাড়িগুলোর ছাদে গাছ লাগানো, শহরে সবুজ এলাকা বাড়াতে বৃক্ষরোপণ, যে ক'টি জলাভূমি টিকে আছে, তা রক্ষা করা এবং ড্যাপ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল: পৌষের শুরু থেকেই উত্তরের জেলাগুলোতে শীত জেঁকে বসে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপামাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছেন। তার ওপর উত্তরের হিমেল হাওয়া বইছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবার ঢাকার মধ্যে একেক এলাকায় একেক রকম শীত অনুভূত হচ্ছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে যখন বিকেলে শীত নেই বললেই চলে, তখন ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে শীতল হাওয়া। আবার মতিঝিল, কারওয়ান বাজারসহ ব্যস্ততম এলাকার সঙ্গে মিরপুর চিড়িয়াখানা এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংসদ ভবন এলাকার লেকে শীতের অনুভূতি ভিন্ন। দূরত্ব সামান্য হলেও তাপমাত্রার পার্থক্য কমপক্ষে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই ধরনের পার্থক্য রয়েছে মতিঝিলের সঙ্গে সোনারগাঁয়ের আর গাবতলীর সঙ্গে সাভারের।

ঢাকা শহরের জলবায়ু ও আবহাওয়া নিয়ে করা বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য দ্রুত কমে আসছে। বিশেষ করে শীতকালে এ পার্থক্য বেশি অনুভূত হচ্ছে। গবেষণাটিতে দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ঢাকার গড় তাপমাত্রা দেশের অন্য যে কোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে পৌনে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কে শীতকাল ধরা হয়।

এ সময়ে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। শীতে কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেখানে শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে বলে বলা হয়। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতকালে ছয় থেকে দশটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঢাকায় গত ছয় বছরে শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। শীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি থাকছে। আর আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

গত ৩০ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। কিন্তু গত ৬ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা নিলে তা কোনোভাবেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, এ মৌসুমেও ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, দিনের বেলা তো দূরের কথা, রাতেও যে শীত নামে, তা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নামছে না। গত দুই যুগে ঢাকার সবুজ এলাকা ও জলাভূমি কমে গিয়ে বেশিরভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। ফলে সেখানে দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। ফলে রাতেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না। গত ১৬ বছরে ঢাকায় গড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে বলে জানান তিনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মনিটরিংয়ে দেখা যায়, গত ১০০ বছরে দেশের তাপমাত্রা দশমিক ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়লেও ঢাকায় বেড়েছে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকায় বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর তৈরি করে রেখেছে দূষণ। ধুলাবালি ও ধোঁয়ার সঙ্গে কুয়াশা মিলিত হয়ে একটি স্তর তৈরি হয়েছে, যা ভেদ করে সূর্যের আলো যতটুকু নিচে আসা দরকার ততটুকু আসে না। ফলে তাপামাত্রা বেশি থাকলেও আলো পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ঢাকা শহরে সবুজ এলাকা ও জলাভূমি দ্রুত কমছে। পাশাপাশি নীতিমালা না মেনে কাচ ও অ্যালমুনিয়ামের তৈরি ভবন নির্মাণ হওয়ার কারণেও ঢাকা উষ্ণ হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার থেকে ফের শৈত্যপ্রবাহ: আগামীকাল শনিবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে, তারপর আগামী মঙ্গলবার থেকে ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের মধ্যাঞ্চল এবং তার পাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও এর পাশের এলাকায় অবস্থান করছে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হলেও আমাদের দেশে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় আজ শুক্রবারও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। পরশু থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। তবে স্বাভাবিক ঋতুচক্র অনুযায়ী আগামীকাল শনিবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত