আপডেট :

        জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে রোববার থেকে সাইট ব্লক

        নিউইয়র্কে সিলেটিদের প্রতিবাদ: উন্নয়ন বঞ্চনায় ক্ষোভ

        নিউইয়র্কে ডমেস্টিক সহিংসতা রোধে নতুন বিশেষ ইউনিট

        জুলাই সনদ সই শেষ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনও অনিশ্চিত

        ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাইলফলক: ইইউ

        জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সং ঘ র্ষ: ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মা ম লা

        দেড় মাস পর আবার খুলছে সুপ্রিম কোর্ট

        ২৫ আনসার সদস্য আহত, ১০ জন সিএমএইচে ভর্তি

        রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারি: ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে পাকিস্তান

        সালমার তিন বিয়ে ও বিতর্ক: ফিরে দেখা জীবনের গল্প

        চায়ের দোকান থেকে বলিউড: ওম পুরির সিনেমার মতো জীবন

        বলিউড অভিনেত্রীর গর্ভপাতের পর কঠিন অভিজ্ঞতার বর্ণনা

        হোপের দাপটে বাংলাদেশের জয়ের আশা ঝুঁকিতে

        রিশাদের দাপটে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো জয়

        বর্ধিত মাশুল স্থগিতে ব্যবসায়ীদের আন্দোলন, ৭ দিনের আল্টিমেটাম

        পিআর নিয়ে টালবাহানা সহ্য করবে না জনগণ: চরমোনাই পীর

        গাজার যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর জন্য ৬টি বড় বিপদ ডেকে আনল

        পাকিস্তান-আফগানিস্তানে ৪৮ ঘণ্টার নতুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

        নাশকতার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা: সরকার

        বিমানবন্দর দ্রুত চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেন উপদেষ্টা

হানিফের বক্তব্যে সমালোচনা

হানিফের বক্তব্যে সমালোচনা

দীপনের পিতাকে নিয়ে হানিফের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা বিএনপির

‘নিহত প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের
বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক তাঁর
সন্তানের হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী।
এ কারণেই তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান
না’- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
মাহাবুব-উল-আলম হানিফের এমন বক্তব্যে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে
সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে এ ধরনের
বক্তব্যে মর্মাহত হয়েছেন। আবার অনেকে
‘বিনয়ের সঙ্গে এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার
করার জন্য’ আওয়ামী লীগের নেতার প্রতি
আহ্বান জানিয়েছেন।
মাহাবুব-উল-আলম হানিফ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে
শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয়
তলায় জাগৃতি প্রকাশনী সংস্থার কার্যালয়
থেকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফয়সল
আরেফিন দীপনকে গুরুতর আহত অবস্থায়
উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা তাঁকে নির্মমভাবে
কুপিয়ে কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে চলে
যায়। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে
চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ফয়সল আরেফিন দীপনের প্রকাশনা সংস্থা
থেকেই নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই
প্রকাশিত হয়েছিল।
শোক বিহ্বল নিহত দীপনের বাবা আবুল
কাসেম ফজলুল হক ছেলের লাশের পাশে
দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
এখানে আমি বিচার চাই না। জানি, বিচার
চেয়ে কোনো প্রতিকার হবে না।’
দীপনের বাবার এ বক্তব্য গণমাধ্যমে যথেষ্ট
গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়।
আর আজ রোববার এর প্রতিক্রিয়ায় হানিফ
বলেন, ‘একজন ছেলেহারা বাবা তাঁর সন্তান
হত্যার বিচার চান না। এই প্রথম বাংলাদেশে
এ রকম একটা ঘটনা দেখলাম। আমার মনে হয়,
পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি যে, কোনো
বাবা তাঁর ছেলের হত্যার বিচার চান না।
আমার মনে হয়, এর কারণ একটাই, ছেলেহারা
বাবা অধ্যাপক সাহেব হয়তো ওই রাজনৈতিক
মতাদর্শে বিশ্বাসী, যারা এই হত্যাকাণ্ডের
সঙ্গে সম্পৃক্ত। উনি তাঁর দলের লোকজনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাননি
বলেই হয়তো এ কথা বলেছেন। এটা অত্যন্ত
দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমিও একজন বাবা।
বাবা হিসেবে আমি তাঁর এই বক্তব্যের জন্য
লজ্জিত।’
হানিফের এ বক্তব্য ইলেকট্রনিক ও অনলাইন
মিডিয়ায় প্রকাশের পর সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা শুরু
হয়। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ
এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে
স্ট্যাটাস দেন। সেখান থেকে কিছু মন্তব্য
এখানে তোলা ধরা হলো।
চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
বলেছেন, ‘এই এমন এক নিদান কাল যখন
কারো কারো গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের সাথে
না মিললে, এমনকি সন্তানহারা বাবাকেও
প্রকারান্তরে খুনের সহযোগী বানিয়ে ফেলা
যায়।’
‘এগুলো না বলে দয়া করে অপরাধীদের ধরেন,
বিচার করেন। এই পর্যন্ত যতগুলো অপরাধ
হয়েছে, সেগুলোর বিচার করেন। এই
উত্তেজনা প্রশমনের কার্যকর ব্যবস্থা করেন।
পাশাপাশি সমাজের যেসব সুতোয় টান
লেগেছে সেগুলো ঠিক করেন।’ যোগ করেন
জনপ্রিয় এ নির্মাতা।
টিভি উপস্থাপক অঞ্জন রায় এ ধরনের বক্তব্য
প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন,
‘বিনীতভাবেই অনুরোধ করতে চাই মাহাবুব-
উল-আলম হানিফকে, আপনার বক্তব্যটি
প্রত্যাহার করুন। আর সোচ্চার হোন শুধু দীপন
নয়, উগ্রবাদীদের হাতে সংঘটিত সকল
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
একই কথা বলেছেন সাংবাদিক প্রণব সাহা।
চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক জাহিদ
নেওয়াজ খান লিখেছেন, ‘মাহাবুবুল আলম
হানিফ যদি আদৌ দর্শন শব্দের অর্থ বুঝে
থাকেন তাহলে তার জীবনের দর্শন হয়তো
তাই: ক্ষমতা মানেই টাকা আর সেই ক্ষমতা
আর টাকার জন্য নিজের সন্তানকেও
কোরবানি করা যায়।’
একাত্তর টেলিভিশনের সংবাদ প্রধান সৈয়দ
ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন, ‘মাহবুব উল আলম
হানিফ, বুঝতে পারছি, যা বলেছেন তা-ই
আপনার মূল্যবোধ..’
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজুলল
বারী বলেছেন, ‘একি কথা বললেন
প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বিতাড়িত
আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফ!
দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল
হক যিনি সারা জীবন ধর্মনিরপেক্ষ
রাজনীতির প্রবক্তা, তিনি ধর্মান্ধ খুনিদের
পক্ষের লোক? অভিজিৎ রায়ের বাবা
অধ্যাপক অজয় রায় কি পুত্রহত্যার বিচার
পেয়েছেন? কেন আজ চুপ মেরে গেছেন চির
প্রতিবাদী এক কণ্ঠস্বর অজয় রায়? এসব
দেখেশুনেই কি এমন বক্তব্য দেননি অধ্যাপক
আবুল কাসেম ফজলুল হক স্যার? একজন
শোকার্ত পিতাকে এভাবে আক্রমণ না করলে
কি চলত না হানিফ সাহেব? ক্ষমতার কারণে
গত কয়েক বছরে তো আপনি টাকার কুমির
হয়েছেন। আর অজয় রায়ের পর আবুল কাসেম
ফজলুল হক হয়েছেন সন্তানহারা। উনি তো
আপনাদের কাছে টাকা-চেক কিছু চাননি।
সন্তানহারা এক পিতাকে নিরীহ নিজের
অসহায়ত্বের কথাও বলতে দেবেন না?’
অনলাইনে  সংক্রান্ত প্রতিবেদন
প্রকাশ হলে ফেসবুক ঝড় ওঠে সমালোচনার। ফেসবুক ফ্যান পেজে শরীফ
মোহাম্মদ তাহসিন নামে একজন মন্তব্য
করেছেন, ‘উল্টা-পাল্টা কথা বলা
রাজনীতিবিদদের নেশা-পেশা দুটোই।
সরকারের ওপর জনগণের আস্থা হারিয়ে
ফেলে কী বিচার চাইবে? কার কাছে বিচার
চাইবে? বিচার তো হয় না। যেটা হয়, সেটা
হচ্ছে, লঘু পাপে গুরু দণ্ড। দুর্বলের বিচার হয়,
সবলের হয় না।’
দুর্বা রায় নামের একজন লিখেছেন, ‘হানিফ
সাহেব... আপনি রাজনীতিবিদ হতে পারেন
কিন্তু আপনি শিক্ষাবিদ নন... আর
রাজনীতিবিদের চেয়ে শিক্ষাবিদের
বিবেক, হৃদয়, মহত্ব অনেক বেশি... আমি হলফ
করে বলতে পারি যে স্যারের কথা পুরো
জাতি শ্রদ্ধার সাথে অবনত চিত্তে সমর্থন
করে- শুধু আপনারা ছাড়া...।’
মোহাম্মদ ফারুক লিখেছেন, ‘দীপনের বাবা
বুঝে গেছেন ছেলে হত্যার বিচার
কোনোদিন-ই পাবেন না।’
আল আমিন ইসলাম অমি মন্তব্য করেছেন, ‘উনি
(দীপনের বাবা) জানেন যে, সাগর রুনি
হত্যার বিচার হয়নি, এটাও হবে না। আর তদন্ত
হলেও লোক দেখানো। তাই কষ্টে চাননি
বিচার। আপনি (হানিফ) কী বুঝবেন সন্তান
হারানোর কষ্ট।’
মো. হেলাল চৌধুরী বলেছেন, ‘এই পর্যন্ত
এতগুলো মানুষ খুন হলো, তোমার সরকার কি
আদৌ প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করতে
পেরেছে?’
কমল হাসান লিখেছেন, ‘রাজনীতির জন্য এই
হতভাগ্য পিতাকেও ছাড়লেন না। এমনই যদি
হয় আমাদের রাজনীতিবিদদের মানসিকতা,
তবে ওনারা আমাদের জন্য, দেশের জন্য কী
করবেন?’
দীপাঙ্কর কুণ্ডু মন্তব্য করেছেন,
‘হত্যাকারীদের সাথে দীপনের আদর্শিক
মিল থাকলে তো খুন হতো না। হত্যাকারীদের
গ্রেপ্তারের কোনো অগ্রগতি সরকার
দেখাতে পারেনি ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে
গেলেও।’
জার্মান প্রবাসী ফারজানা কবীর খান
লিখেছেন, ‘হানিফের বক্তব্য স্পষ্ট করে
দেয়- কারা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত!! কেন
খুনিদের ধরার পরও ছেড়ে দেওয়া হয়। খুনিকে
স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেওয়ার পর কেন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুনির নাম প্রকাশ করে
না। জেনে রেখ- সত্য কখনো চাপা থাকে না।’




অন্যদিকে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত প্রকাশক
ও লেখক ফয়সল আরেফিন দীপনের পিতার
মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম
হানিফের বক্তব্যকে ‘অশালীন’ উল্লেখ
করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন
বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান
রিপন।
সোমবার দুপুর বিএনপির নয়াপল্টনস্থ
প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে
রিপন বলেন, ‘অবনতিশীল আইন
শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতিতে গত পরশু
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সহ-সভাপতি ও
পুস্তক প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এর
হত্যাকাণ্ডের পর-তার পিতা ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারনিউমারি
প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক ‘আমি
বিচার চাই না’ প্রতিক্রিয়া জানানোর
পর শাসকদলের অন্যতম শীর্ষ নেতা
মাহবুবুল আলম হানিফের মন্তব্যে গোটা
জাতি স্তম্ভিত, বিস্মিত।
রিপন বলেন, ‘কোন পরিস্থিতিতে
পুত্রহারা পিতা, স্বামীহারা স্ত্রী এমন
মন্তব্য করতে পারেন-তা বোঝার জন্য যে
সংবেদনশীল মন থাকতে হয়-তা আজ
শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে লোপ পেয়েছে।
তাদের বক্তব্য বিবৃতি শুধু রাজনৈতিক
শিষ্টাচার বহির্ভূতই নয়,সামাজিক
শিষ্টাচারেরও পরিপন্থী। নিহত দীপনের
অধ্যাপক পিতাকে ‘হত্যকারীদের আদর্শে
বিশ্বাসী’ বলে শাসকদলের পক্ষে মন্তব্য
করায় পুত্রশোকে বিহ্বল-কাতর মানুষটির
প্রতি যে নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করা হয়েছে-
তার নিন্দা জানানোর ভাষাও আমাদের
নেই।’


শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত