ফুটেজে 'এক অনুসরণকারী' আরো শুদ্ধস্বরে হামলাকারীদের স্কেচ হচ্ছে
রাজধানীর শাহবাগের আজিজ
সুপারমার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর
কার্যালয়ে ফয়সল আরেফিন দীপনকে
কুপিয়ে হত্যা এবং লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর
প্রকাশনীতে মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ
তিনজনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার ছয় দিন পরও
হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি
তদন্তকারীরা। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ
দেখে দীপন হত্যাকাণ্ডে এবার এক যুবককে
ঘিরে তদন্ত করছে সংশ্লিষ্টরা। এখন
তাকেসহ সহযোগীদের শনাক্ত করার কাজ
চলছে। আর শুদ্ধস্বরের ঘটনায়
হামলাকারীদের স্কেচ তৈরি করছেন তদন্ত
কর্মকর্তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দীপন তাঁর
কার্যালয়ে যাওয়ার সময় আজিজ
সুপারমার্কেটের ফটকের কাছে তাঁকে
অনুসরণ করছিল ওই যুবক। সে দীপনের দিকে
'তির্যক' দৃষ্টিতে তাকায় এবং মোবাইল
ফোনে কথা বলে। দীপন গাড়ি থেকে নামার
পর তাঁর গাড়ির নম্বরটিও দেখছিল ওই যুবক।
ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে ওই যুবক
আরো পাঁচজনের সঙ্গে চলে যায়, যাদের
মধ্যে চারজন মার্কেট থেকে বের হয়।
তাদের দুজন একটু পেছন থেকে আসে, যাদের
কাছে ব্যাগ ছিল। এই ছয়জন ছাড়াও ফুটেজে
দুজনের সন্দেহজনক হাঁটাচলা দেখা গেছে।
তারা দীপন হত্যার পর আজিজ
সুপারমার্কেটের ডান পাশ দিয়ে পরীবাগের
রাস্তায় চলে যায়।
আজিজ মার্কেটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী
ওই ফুটেজে সন্দেহভাজনদের দেখেছেন।
তাঁরাও বলছেন, এই যুবকরা তাঁদের কাছে
অচেনা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা
জানিয়েছেন, দীপন হত্যার পর জব্দ করা
ফুটেজের ওই 'ফলোয়ারকে' (অনুসরণকারী)
ঘিরেই তদন্ত করছেন তাঁরা। প্রযুক্তির
সহায়তায় তার এবং তার সহযোগীদের
শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। গতকালও
আজিজ মার্কেটে গিয়ে চলাচলের পথগুলো
পর্যবেক্ষণ করেছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে
হামলার ঘটনায়ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
অনুয়ায়ী, হামলাকারীদের চেহারা বের
করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। এ জন্য
স্কেচ আঁকা হচ্ছে।
ডিবির উপকমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) ও
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মাশরুকুর
রহমান খালেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন,
'আমরা সিসি ক্যামেরায় কয়েকজন
সন্দেহভাজনকে নিয়ে কাজ করছি।
পাশাপাশি অন্যান্য প্রযুক্তিতেও কাজ
চলছে। এতে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি ও
ছবি থেকে আমরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা
করছি।' তিনি জানান, গতকাল তাঁরা আজিজ
সুপারমার্কেটে ঘুরে পথঘাট দেখেছেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি
বলেন, 'এখন আমরা মূলত হামলাকারীদের
শনাক্ত করতে চাইছি।'
তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা পরিচয়
প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'সিসি
ক্যামেরায় শত শত মানুষ দেখা গেছে। তবে
এখানে একজন ফলোয়ার দেখা গেছে যে
দীপনের দিকে তির্যক বা বাঁকা দৃষ্টিতে
তাকাচ্ছিল। এটি সন্দেহজনক। ব্যবসায়ীদের
সন্দেহ যৌক্তিক। ওই যুবকের সঙ্গে
কয়েকজন বের হয়েছে, তারা একই সঙ্গের
বলেই মনে হচ্ছে।'
আজিজ সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ী ও শ্রাবণ
প্রকাশনীর কর্ণধার রবিন আহসান গতকাল
কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ফুটেজে
একজনকে দেখেই সন্দেহ করেছি। তার পরনে
ছিল শার্ট ও জিনস প্যান্ট। ওই যুবক দীপন
গাড়ি থেকে নামার সময় তাঁর গাড়ির কাছে
ছিল। পরে গাড়ির নম্বর দেখে এবং মোবাইল
ফোনে কথা বলে। সময়টা দুপুর সোয়া ২টার
মতো। এরপর চার যুবককে দেখা যায়। পেছনে
পেছনে আরো দুই যুবক, যাদের কাছে ব্যাগ।
তারা সবাই মার্কেট থেকে বের হয়ে
যাচ্ছিল।' তিনি আরো বলেন, 'ফুটেজগুলো
থেকে এই ছয়জনকে সন্দেহ হওয়ার কারণে
আমরা ডিবিকে বলেছি, তারা মার্কেটের
লোক নয়।'
সূত্র জানায়, গত শনিবার ঘটনার দিন দুপুর ২টা
১০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
স্টিকারযুক্ত একটি প্রাইভেট কারে আজিজ
সুপার মার্কেটে যান দীপন। ভবনের ডান
দিকের পার্কিংয়ে গাড়ি থেকে নেমে
তিনি মার্কেটে প্রবেশ করেন। এরপর
দীপনের প্রাইভেট কারের আশপাশে
সন্দেহভাজন ওই যুবকসহ চারজনকে ঘোরাঘুরি
করতে দেখা যায়। প্রধান সন্দেহভাজন যুবক
গাড়ির নম্বর লিখছিল এবং মোবাইলে কথা
বলছিল। এর কিছু সময় পর আনুমানিক ৩টার
দিকে ছয়জন প্রায় একই সঙ্গে মার্কেট
থেকে বের হয়। তাদের বয়স ২০-২৫ বছরের
মধ্যে হবে। সন্দেহভাজন যুবকরা আজিজ
সুপারমার্কেট থেকে বের হয়ে পরীবাগের
রাস্তা ধরে চলে যায় বলে নিশ্চিত হয়েছেন
তদন্তকারীরা। গতকাল সরেজমিনে ঘুরে
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন
তাঁরা। একই সঙ্গে দীপনের বাবা অধ্যাপক
আবুল কাসেম ফজলুল হকের সঙ্গে কথা
বলেছেন তদন্ত তদারকি কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দুপুর ২টা ৪১ মিনিটে
দীপন অন্তরে রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার
খান। এরপর অফিসে গিয়েই খুন হন।
পরিবারের লোকজনও বলছেন, ৩টা থেকেই
দীপনকে তাঁরা ফোনে পাচ্ছিলেন না। এতে
ধারণা করা হচ্ছে, ৩টার দিকেই তিনি খুন
হয়েছেন। আর এ কারণেই ৩টায় বা এর কিছু
সময় পর মার্কেট থেকে বের হয়ে যাওয়া
লোকজনকে সন্দেহের আওতায় এনেছেন
তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা
দীপনের পরনের কাপড়, চশমা, স্যান্ডেল ও
রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
আর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে
হামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা
জানান, তিন হামলাকারীকে আহত ব্যক্তিরা
ছাড়াও বেশ কয়েকজন মানুষ দেখেছেন।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এখন খুনিদের স্কেচ
তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁদের
যোগাযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই
হামলায় অংশগ্রহণকারী তিনজন ঢাকার
বাইরের বলে তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
খুলেছে আজিজ সুপার মার্কেট : টানা তিন
দিন শোক পালন শেষে বুধবার ব্যবসায়ীরা এ
মার্কেট খুলেছে। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা
থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মার্কেটের সামনে
প্রতীকী অনশন পালন করা হবে বলে জানায়
ব্যবসায়ীরা।
শেয়ার করুন