১৫ বছরেও শেষ হয়নি ডাঃ হুমায়ুন আজাদ হত্যার রায়
ঢাকায় বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের ফুটপাতে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে জঙ্গি হামলায় আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক হুমায়ুন আজাদ। পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান। এ ঘটনায় করা দুটি মামলায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত বছরের ১৩ এপ্রিল চার আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। তাদের মধ্যে দুই আসামি কারাগারে থাকলেও দু'জন এখনও পলাতক। আইনি মারপ্যাঁচ এড়িয়ে কবে রায় কার্যকর হবে- সেদিকে তাকিয়ে হুমায়ুন আজাদের পরিবার।
এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন হুমায়ুন আজাদের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উপপরিচালক মৌলি আজাদ। তিনি বলেন, 'আমরা রায় পেয়েছি। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি পলাতক। দু'জন কারাগারে থাকলেও তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। কবে এ আপিল শুনানি হবে; কবে রায় কার্যকর হবে- তা অনিশ্চিত।'
তিনি হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন। মৌলি আজাদ বলেন, তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল অধ্যাপক এবং লেখক ছিলেন। তাঁকে জঙ্গিরা যেখানে হামলা করেছিল, সেই সড়কটির নাম যেন তাঁর বাবার নামে করা হয়। এ জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
গত ১৩ এপ্রিল বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় দেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন। রায়ে চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তারা হলো- কারাগারে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা'য়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শূরা সদস্য মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগনে শহীদ। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক অপর দু'জন- নুর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জেএম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, দুই আসামি এখনও পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, ঢাকার আদালত থেকে রায়সহ মামলার নথি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) বিধি অনুযায়ী হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। মামলার পেপারবুক তৈরি হলে ক্রমানুসারে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসবে। ঢাকার আদালতের রায়টি ২০২২ সালের। হাইকোর্টে বর্তমানে ২০১৭ সালের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের ফুটপাতে হামলার শিকার হন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। লেখনীর কারণে আগে থেকেই তিনি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হুমকি পেয়ে আসছিলেন। তাঁকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। সবশেষ জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১২ আগস্ট মারা যান। পরে হত্যাচেষ্টা মামলাটি আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। একই ঘটনায় বিস্ম্ফোরক দ্রব্য আইনেও করা হয় পৃথক মামলা।
২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে হত্যা এবং বিস্ম্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। আসামিদের মধ্যে সালাউদ্দিন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফিজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আলোচিত এই মামলায় প্রথমে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আসামি করা হয়। পরে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন