আপডেট :

        জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে রোববার থেকে সাইট ব্লক

        নিউইয়র্কে সিলেটিদের প্রতিবাদ: উন্নয়ন বঞ্চনায় ক্ষোভ

        নিউইয়র্কে ডমেস্টিক সহিংসতা রোধে নতুন বিশেষ ইউনিট

        জুলাই সনদ সই শেষ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনও অনিশ্চিত

        ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাইলফলক: ইইউ

        জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সং ঘ র্ষ: ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মা ম লা

        দেড় মাস পর আবার খুলছে সুপ্রিম কোর্ট

        ২৫ আনসার সদস্য আহত, ১০ জন সিএমএইচে ভর্তি

        রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারি: ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে পাকিস্তান

        সালমার তিন বিয়ে ও বিতর্ক: ফিরে দেখা জীবনের গল্প

        চায়ের দোকান থেকে বলিউড: ওম পুরির সিনেমার মতো জীবন

        বলিউড অভিনেত্রীর গর্ভপাতের পর কঠিন অভিজ্ঞতার বর্ণনা

        হোপের দাপটে বাংলাদেশের জয়ের আশা ঝুঁকিতে

        রিশাদের দাপটে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো জয়

        বর্ধিত মাশুল স্থগিতে ব্যবসায়ীদের আন্দোলন, ৭ দিনের আল্টিমেটাম

        পিআর নিয়ে টালবাহানা সহ্য করবে না জনগণ: চরমোনাই পীর

        গাজার যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর জন্য ৬টি বড় বিপদ ডেকে আনল

        পাকিস্তান-আফগানিস্তানে ৪৮ ঘণ্টার নতুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

        নাশকতার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা: সরকার

        বিমানবন্দর দ্রুত চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেন উপদেষ্টা

ছাত্রী ধর্ষক পরিমলের যাবজ্জীবন

ছাত্রী ধর্ষক পরিমলের যাবজ্জীবন

সেই ধর্ষক হিন্দু শিক্ষক পরিমল

পুলিশকে আদালতের তিরস্কার


ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক
পরিমল জয়ধরকে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক সালেহ
উদ্দিন আহমদ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে যাবজ্জীবন সাজার অতিরিক্ত
৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে
আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া
হয়েছে। অর্থদণ্ডের টাকা ছাত্রী
পাবে বলে রায়ে উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে রায়ের আগে দেওয়া
বিচারকের পর্যবেক্ষণে তদন্তে
গাফিলতির জন্য দুই পুলিশ
কর্মকর্তাকে তিরস্কার করা হয়েছে।
বহুল আলোচিত এ ধর্ষণ মামলার রায়ে
আসামিপক্ষ ছাড়া সবাই সন্তুষ্টি
প্রকাশ করেছে। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ
আদালতে আপিল করা হবে বলে
জানিয়েছেন পরিমলের আইনজীবীসহ
পরিবার সদস্যরা।
ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের
আদেশে বলা হয়েছে, ‘ভয়-ভীতি
দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক
ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে
আসামি পরিমল জয়ধরকে নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯(১)
ধারার অধীনে ধর্ষণের অপরাধে
দোষী সাব্যস্ত করা গেল। ফৌজদারি
কার্যবিধির ৩৫ এ ধারার বিধান মতে
আসামির হাজতবাস মামলায় সাজার
মেয়াদ থেকে বাদ যাবে। অর্থদণ্ডের
টাকা ওই ছাত্রী প্রাপ্ত হবে। ঢাকা
জেলার কালেক্টরকে নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন আইনের ১৬ ধারার
বিধান অনুযায়ী ওই অর্থদণ্ডের টাকা
বিধি মোতাবেক আদায়পূর্বক আগামী
৯০ দিনের মধ্যে এ ট্রাইব্যুনালে জমা
দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।
আসামির বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা
ইস্যু করা হলো।’
পুলিশকে তিরস্কার : ট্রাইব্যুনালের
বিচারক রায় ঘোষণার আগে তাঁর
পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা উপস্থাপন
করেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষে
উপস্থাপিত ২৮ জন সাক্ষীর মৌখিক
সাক্ষ্য এবং ভিকটিমের ডাক্তারি
পরীক্ষার রিপোর্টসহ অন্যান্য
দালিলিক সাক্ষ্য পর্যালোচনা করা
হয়েছে। তাতে দেখা যায় যে আসামি
পরিমল জয়ধর তার কোচিং সেন্টারে
ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেছে বলে ওই
ছাত্রী ছাড়া আর কোনো সাক্ষী
নেই। তবে ২০১১ সালের ১১ জুলাই
ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আসামির
দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছামূলক ছিল।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস
এম শাহাদাৎ হোসেন এবং পুলিশ
পরিদর্শক মাহবুবে খোদা, বিশেষত এস
এম শাহাদাৎ হোসেন মামলার তদন্তে
চরম অদক্ষতা ও গাফিলতি
দেখিয়েছেন। পরিদর্শক পদমর্যাদার
এ দুজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার
তদন্তে এরূপ গাফিলতি কোনোভাবেই
গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁরা সঠিকভাবে
তদন্ত করলে ভিকটিমের অভিযোগ
সমর্থনের জন্য তা অধিকতর সহায়ক
হতো। তবে তাঁদের তদন্তের ওই
দুর্বলতার কারণে এ মামলার আনীত
অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত
হয়নি, তা বলা যায় না। রাষ্ট্রপক্ষের
উপস্থাপিত মৌখিক, দালিলিক,
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও সাক্ষ্য
পর্যালোচনায় আসামির বিরুদ্ধে
অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ
হয়েছে। তাই আসামিকে অপরাধে
দোষী সাব্যস্ত করে যথোপযুক্ত সাজা
প্রদান করা যেতে পারে।’
রায়ের প্রতিক্রিয়া : রাষ্ট্রপক্ষে
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি
ফোরকান মিয়া এ মামলাটি
পরিচালনা করেন। তাঁকে সহায়তা
করেন এপিপি রাজীব আহমেদ ও
মমতাজ বেগম। আসামিপক্ষে ছিলেন
অ্যাডভোকেট মাহফুজ মিয়া ও শাহীন
ব্যাপারী। রায় ঘোষণার পর
রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ
করে। অন্যদিকে আসামিপক্ষের
আইনজীবী মাহফুজ মিয়া বলেন,
‘আসামিকে নির্যাতন ও ভয় দেখিয়ে
স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। এ
রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল
করা হবে।’
রায় ঘোষণার পর উপস্থিত
সাংবাদিকরা পরিমলের প্রতিক্রিয়া
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মহামান্য
বিচারক আদেশ দিয়েছেন। আমি কী
বলতে পারি। আইনজীবীর সঙ্গে
পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ
করব।’ এরপর নানা কথা বলতে থাকলে
আইনজীবী তাঁকে চুপ থাকতে বলেন।
ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে
নেওয়ার সময় পরিমলকে কাঁদতে দেখা
গেছে।
আমার ছেলে নির্দোষ : ধর্ষণ
অভিযোগের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুল
থেকে চাকরিচ্যুত পরিমল জয়ধর
ঢাকায় বসবাস করতেন উত্তরা ৭ নম্বর
সেক্টরের ভাড়া বাসায়। তাঁর গ্রামের
বাড়ি গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়ার
লাটেঙ্গায়। বাবা ক্ষিতিশ জয়ধরসহ
পরিবারের অন্য সদস্যরা সেখানে
থাকেন। আমাদের গোপালগঞ্জ
প্রতিনিধি জানান, রায়ের বিরুদ্ধে
আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে পরিমলের
পরিবার সদস্যরা। ক্ষিতিশ জয়ধর
ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে
বলেছেন, ‘আমার ছেলে এত খারাপ
কাজ করতে পারে না। তাকে
ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এর সুবিচার
পাইনি। তাই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ
আদালতে আপিল করব।’
বিচারিক কার্যক্রম : আলোচিত ধর্ষণ
মামলাটি ২০১১ সালের ৫ জুলাই
বাড্ডা থানায় দায়ের হয়েছিল।
ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৩০ ধারায়
দায়ের করা এজাহারে ভিকারুননিসা
নূন স্কুলের শিক্ষক পরিমল জয়ধর,
অধ্যক্ষ হোসনে আরা এবং বসুন্ধরা
শাখার প্রধান লুৎফর রহমানকে
আসামি করেন। সে বছর ২৮ মে
ছাত্রীকে হাত বেঁধে, মুখে ওড়না
গুঁজে জোরপূর্বক পাশবিক নির্যাতন
করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ ছিল।
আসামি পরিমল মোবাইল ফোনে ছবি
তুলে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার
হুমকি দিয়ে ছাত্রীকে চুপ থাকতে
বাধ্য করেন এবং ফের ১৭ জুন ধর্ষণ
করেন। এ ঘটনা পরবর্তী সময়ে স্কুলের
অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের অবহিত করলেও
কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায়
শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে
ওঠে। একপর্যায়ে মামলা হয় এবং
পরিমল কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
৬ জুলাই কেরানীগঞ্জে এক
আত্মীয়ের বাসা থেকে র্যাব
পরিমলকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন
পরিমল ঢাকার মহানগর হাকিম
শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের কাছে
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায়
দোষ স্বীকার করে
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
১৭ জুলাই ছাত্রী জবানবন্দি দেয়
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শামীমা
পারভিনের কাছে। চলতি বছরের ১৪
আগস্ট বাড্ডা থানা পুলিশের
পরিদর্শক এস এম শাহাদাৎ হোসেন
মামলার চার্জশিট দাখিল করলে
বাদী আদালতে নারাজি আবেদন
করেন। আদালতের নির্দেশে অধিকতর
তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা
পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবে খোদা
২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর পরিমল
জয়ধরকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট
দেন। সে সময় এজাহারভুক্ত আসামি
অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম ও লুৎফর
রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন
করা হয়। ২০১২ সালের ৭ মার্চ এ দুজন
আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে একমাত্র
আসামি পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে
অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এ
মামলার বিচার চলাকালে
অভিযোগপত্রভুক্ত ৪০ জনের মধ্যে ২৮
জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১০
নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আদালত
দিন ধার্য করেন। সে মোতাবেক
গতকাল রায় ঘোষণা করা হয়।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত