সেই এমপি লিটনের হেলিকপ্টার শো
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দেরি
হেলিকপ্টারে চেপে আড়াই ঘণ্টা পর
গতকাল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পতাকা
উত্তোলন অনুষ্ঠানে এমপি লিটন। ছবি :
কালের কণ্ঠ
শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি করে
হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি দেশব্যাপী
আলোচিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ
সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন আবারও চরম
সমালোচনার জন্ম দিলেন। বিজয় দিবসে
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য ঢাকা
থেকে গতকাল বুধবার হেলিকপ্টারে
সুন্দরগঞ্জে আসেন তিনি। অনুষ্ঠান শুরুর
নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর তাঁর
হেলিকপ্টারটি সুন্দরগঞ্জে পৌঁছানোর
কারণে অনুষ্ঠানের সূচিও পিছিয়ে দিতে
বাধ্য হয় স্থানীয় প্রশাসন। দুর্ভোগে
পড়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিতে
আসা শিশু-কিশোররা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে
সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে স্থানীয়
মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ এমপি
লিটনের হাতে সংবর্ধনা নেননি। ঘটনাটি
এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
প্রশাসনের মধ্যেও এ নিয়ে দেখা দেয়
অসন্তোষ। নিয়মানুযায়ী উপজেলা
চেয়ারম্যানের জাতীয় পতাকা
উত্তোলনের কথা। কিন্তু এমপি লিটনের
আগ্রহের কারণে তিনি তা করতে পারেননি।
তবে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টিকে এখানকার
রেওয়াজ বলে এড়িয়ে যায়।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, আগের দিন
থেকেই (১৫ ডিসেম্বর) এমপি লিটন
হেলিকপ্টারে সুন্দরগঞ্জে আসবেন
এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে
সর্বস্তরে মিশ্র ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা
দেয়। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ আহত
হওয়ার ঘটনায় এমপি লিটনের বিরুদ্ধে গড়ে
ওঠা আন্দোলনের রেশ কাটতে না
কাটতেই তাঁর এমন আগমন নিয়ে নিজ
দলের ভেতরেই নানা প্রশ্ন ওঠে। সাধারণ
মানুষও ঘটনাটিকে ভালো চোখে
দেখেনি। তা ছাড়া তিনি এখনো মামলার জামিন
পাওয়া আসামি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা
প্রশাসনের আয়োজনে ১৬ ডিসেম্বর
সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চ
বিদ্যালয় মাঠে মহান বিজয় দিবসের
অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে
মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হয়
কর্মসূচি। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ছিল শহীদ
মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ। প্রশাসনের সূচি
অনুযায়ী সকাল ৯টায় পতাকা উত্তোলনের
সময় নির্ধারিত থাকলেও এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম
লিটন আড়াই ঘণ্টা পর হেলিকপ্টারযোগে
সুন্দরগঞ্জে আসেন সাড়ে ১১টায়। তারপর
আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয়
জাতীয় পতাকা।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের
আহ্বায়ক গোলাম কবির মুকুল জানান, এমপির
হাতে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায়
দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ঠিক এ
সময় হেলিকপ্টার ভ্রমণ নতুন করে
আলোচনার সূত্রপাত করল। একটি দরিদ্র
এলাকায় কোনো জনপ্রতিনিধির এভাবে
আগমন কেউ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে
পারেনি।
এমপি লিটনবিরোধী আন্দোলনের
অন্যতম নেতা পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল
মামুন বলেন, এমপি যেকোনো বাহনেই
আসুন না কেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু তাঁর
এই বিলম্বের কারণে কোমলমতি শিশু-
কিশোরদের দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়
করিয়ে রাখার বিষয়টি অমানবিক।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সূত্রে জানা
গেছে, এমপির সঙ্গে প্রশাসনের
সমন্বয়হীনতার কারণে তাঁর কাছ থেকে
অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা গ্রহণ
করেননি। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমদাদুল হক
বাবলু বলেন, ‘যে এমপি মুক্তিযোদ্ধাদের
রাজাকার ও ডাকাত বলে গালি দেন, তাঁর হাতে
সংবর্ধনা গ্রহণ অবমাননাকর। তাই আমরা তাঁর
হাতে সংবর্ধনা নিইনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই
মিলটন বলেন, ‘কুয়াশার কারণে এমপিকে
বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিলম্বে আসে।
এমপি মহোদয়ের জন্য অপেক্ষা করে
আড়াই ঘণ্টা পর পতাকা উত্তোলনসহ অন্যান্য
কর্মসূচি পালন করা হয়।’ তিনি বলেন, জাতীয়
অনুষ্ঠানগুলোতে সংসদ সদস্যের উপস্থিত
থাকার বিষয়টি এ এলাকার একটি রেওয়াজ। এ
ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও সংসদ
সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সঙ্গে
যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর
একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করে, স্ত্রীর
অসুস্থতার কারণে আগের দিন এমপি এলাকায়
আসতে পারেননি। বাধ্য হয়ে পরদিন তাঁকে
হেলিকপ্টারে আসতে হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের অপর একটি সূত্র
জানায়, বিজয় দিবসের কর্মসূচি শেষ করে
এমপি লিটন ওই হেলিকপ্টারেই বিকেল
সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা
দেন।
শেয়ার করুন