ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের বিচারে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি মন্ত্রীদের
ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ ও তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন জোট সরকারের মন্ত্রীরা।
রবিবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে এই দাবি তোলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, ‘দ্রুত একটি কমিশন গঠন করে এক এগারোর কুশীলবদের বিচার হওয়া উচিৎ।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এই সম্পাদকের স্বীকারোক্তি থেকে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে ১/১১ তে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। সে সময় এক/এগারোর নির্যাতনের শিকার রাজনীতিকরা এই সংসদেই সেই কুশীলবদের বিচার দাবি করছেন।’
মেনন অবিলম্বে এক/এগারোর কুশীলবদের বিচারে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান।
এরপরে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, এক এগারোর কুশীলবদের বিচার হওয়া উচিৎ। দ্রত একটি কমিশন গঠন করে এদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, কোনো দলের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্রের ফরমুলা শিখতে চাই না। আমরা কাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখবো? যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে তাদের কাছ থেকে?
নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। কোনো অন্তর্বর্তী নির্বাচন নয়, ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে। তার আগে কোনো মতেই নয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসা মানে হাওয়া ভবন থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। জনগণ আজ বুঝেছেন, বিএনপিকে ভোট দিলে উন্নয়নের গতি বন্ধ হয়ে যাবে। দেশ জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই আগামী নির্বাচনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হবে এবং আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মাহফুজ আনামের সমালোচনা করে বলেন, ভুল স্বীকার করলেই দোষ খণ্ডায় না। তিনি তার ভুল স্বীকার করলেন, কিন্তু তার পরে সম্পাদকরা তার পক্ষে বিবৃতি দিলেন।
ইনু আরো বলেন, সম্পাদকদের যেমন আমাদের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে, তেমনি আমাদেরও (এমপি) অধিকার রয়েছে তাদের সমালোচনা করার। এতে গণমাধ্যমের অধিকার খর্ব করা হয় না। স্বাধীনতা ধ্বংস করা হয় না।
নবম সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তদন্তে তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে তলবের উদ্যোগ নেওয়া মেনন বলেন, ‘এই সংসদে ওয়ান ইলেভেনের ঘটনার বিচারের দাবি উঠেছিল। কিন্তু তা হয়নি।’
‘গত সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে আমরা তদন্ত করে এই কুশীলবদের দায়-দায়িত্ব পেয়েছিলাম। সেই তদন্তে সমর নায়কদের সংসদের জবাবদিহিতায় হাজির করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তদন্তের সুপারিশে আমরা আইনি ব্যবস্থার কথা বললেও আজ পর্যন্ত তা হয়নি। সেই রিপোর্ট হিম ঘরে পড়ে আছে।’
তথাকথিত সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বামপন্থী এই নেতা বলেন, ‘সুশীল সমাজ বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন দেখে না। তারা বলছে উন্নয়নের কাষ্ঠে বলি হচ্ছে গণতন্ত্র। এরা উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়।’
মাহফুজ আনামকে ‘আত্মস্বীকৃত দোষী’ সাংবাদিক আখ্যা দিয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘মাহফুজ আনাম গংদের বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলার মানুষ আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আরো যারা এই দুষ্ট চক্রের সদস্য তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
‘এজন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। এ কমিশনের মধ্য দিয়ে এই সকল অপকর্মকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। এক/এগারোর কুশীলবরা যে চরিত্রেরই হোক, তারা যে পেশারই হোক না কেন- এই দুষ্ট চক্রকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
শেয়ার করুন