শিশু হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড চান প্রধানমন্ত্রী
শিশু হত্যাকারীদের সমাজের সবচেয়ে ঘৃণিত জীব অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশু হত্যায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশু হত্যাকারীদের ধিক্কার জানাই। আশা করি আদালত এই ঘৃণিত জীবদের বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেবে, যাতে ভবিষতে এ ধরনের অপরাধ কেউ করার সাহস না পায়।
সোমবার রাতে দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্য ও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি দেশে শিশু হত্যা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে চার শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের লাশ নিখোজেঁর পাঁচদিন পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বালুর স্তুপের নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশিষ্টজনেরা শিশু হত্যা বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘাতকদের বিচার দাবি করেন।
এরই মাঝে আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রী সংসদে আদালতের কাছে এসব ঘাতকদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুণ্ড প্রার্থনা করেন।
এই একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা অতীতের যে কোনো সময়কে হার মানিয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, চলতি মাসের ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৭ দিনেই অন্তত ১৪ শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত মাসে এই সংখ্যা ছিল ২৯। আর গত দেড় মাসে হত্যা করা হয়েছে ৪৫ শিশুকে।
সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির ভাষণকে সমর্থন করে স্পিকারে উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় স্পিকার হঠাৎ দেশে শিশু হত্যা বেড়ে গেছে, এই জিঘাংসা কেন? ছোট্ট শিশু ওদের কী অপরাধ? সামান্য পারিবারিক বিরোধের জের ধরে শিশুকে হত্যা করা হলো। এরা মানুষ না। এ ধরনের বিকৃত মানুষের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করি।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এলাকার কাছে যদি কেউ শিশু হত্যা করে তাদের ধরিয়ে দিন। আর যদি কেউ পালিয়ে যায়, তাকেও ধরিয়ে দিতে সাহায্য করুন।
সম্প্রতি গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে গ্যাসের চুলা ব্যবহারকারীদের একটি দেয়াশলাইয়ের কাঠির জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে না রাখার আহ্বান জানান।
তাদের ষড়যন্ত্রের এখনো শেষ নেই
দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকা ও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের ষড়যন্ত্রের এখনো শেষ নেই। তাদের উদ্দেশ্য, যদি কোনোমতে গণতন্ত্রকে একটু ধরাশায়ী করা যায় আর অগণতান্ত্রিক পন্থায় কিছু এলে তাদের কপাল খুলবে। কিন্তু বাংলাদেশে তা হবে না।’
‘ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এবং বাংলা দৈনিক প্রথম আলো পড়েন না’, বলেও তিনি জানান।
‘বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই ভুলের খেসারত দেশের জনগণ কেন দেবে। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদেরই দিতে হবে।’
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুটো পত্রিকায় ২০টি বছর ধরেই আমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। ভাল কিছু লিখলেও শেষে দিকে আমাকে খোঁচা দেবে। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাস হারাব। তবে পড়বো কেন?’
তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত আসে। আমিতো বিরোধী দলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো।’
আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিএফআইয়ের বিগ্রেডিয়ার বারী ও আমিনের হাত থেকে ওই সময় কেউই রেহাই পায়নি। ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্যতা ছিল তা কী প্রথম আলোর মতিয়ার রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামরা দিতে পারবেন?’
তিনি বলেন, ‘এই দুটি পত্রিকা হয় ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে নতুবা মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকলে অসত্য সংবাদ ছাপাবে কেন? বিগ্রেডিয়ার আমিন ও বারীর চোখের আলো হয়ে ছিলেন ওই দুটি পত্রিকা।’
কী মধু আছে এমডি পদে
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন। একজন সম্পাদক লোক যোগাতে নেমেছিল। কিন্তু কেউ আসেনি।’
‘ওই ভদ্রলোককে আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়েছিলাম,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকের এমডি পদে ওই ব্যাক্তি আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত ছিলেন। আইন লংঘন করলেন, মামলায় হারলেন- আর সব দোষ শেখ হাসিনার ওপর।’
পদ্মসেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ড. ইউনুসকে দায়ি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমডি পদ হারানোর ক্ষোভ পড়লো পদ্মা সেতুর ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন।নোবেল পুরস্কার পেয়েও একটি এমডির পদ ছাড়তে পারেন না। ওখানে কী মধু আছে। এতো বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তবে মর্যাদাটা কোথায় থাকলো?’
সংসদে বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে
বর্তমান সংসদকে অধিক কার্যকর দাবি করে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সংসদ অধিবেশন দেশের জনগণ দেখতে পারেন। বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন তাদের সংসদে খিস্তিখেউড়, নোংরা ও অসভ্য বক্তব্য, গালিগালাজ, হুমকি-ধমকিতে কোনো ভদ্রলোক দেখতে বা শুনতে পারতো না। এখন সেই অবস্থা নেই।’
‘দেশের জনগণ এখন সংসদের কার্যবিবরণী কান পেতে শুনতে পারছেন। বিরোধী দল সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার পাশাপাশি ভাল কাজের প্রশংসা করছে। সংসদে বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেয়ার করুন