অর্থের জোগানদাতা হিসেবে নতুন আরও অনেকের নাম সামনে আসছে
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে নতুন করে আরও অনেকের নাম আসছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুনুর রশিদ বলেন, এই হত্যাকান্ডে কিছু নাম আসছে, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এই খুনের ঘটনার অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ধীরগতিতে চলছে-এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন তদন্ত সংস্থাগুলো।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত যাতে বিলম্ব হয় এবং এর ফলে মামলার তথ্য-প্রমাণ বিনষ্ট হয় সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত মাফিয়া গ্রুপ। এই মাফিয়া গ্রুপ দুই দেশেই সক্রিয় রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, এই খুনের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত দুই দেশের মাফিয়ারা চেষ্টা করছেন। কারণ এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা মাংসের টুকরার ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হয় নাই। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে যাদের সঙ্গে এই এমপির বিরোধ ছিলো তারাই এই চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অনেকে এও বলছেন যে সীমান্ত এলাকায় স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে অনেক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। কিন্তু কোনটিরই বিচার হয় নাই।
অভিযোগ রয়েছে বর্তমান এবং সাবেক চারজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যও এই খুনের ঘটনার তদন্ত ধামাচাপা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে মামলার তদন্ত আলোর মুখ না দেখে। খুনের সঙ্গে জড়িত নতুন যাদের নাম আসছে তারাও প্রভাবশালী। কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় তারা থাকে। এই প্রভাবশালীদের কারণে অতীতে অনেক খুনের বিচার হয়নি, এই মামলার ভবিষ্যৎ সেদিকে যায় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ এই মাফিয়া চক্র আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। কারণ এদের পেছনে এনবিআরের কর্মকর্তা চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ মতিউর রহমানের মত অনেকেই রয়েছেন। বিমানবন্দর, স্থল বন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানীরা নির্বিঘ্নে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এজন্য মতিউর রহমানদের মত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের দিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার উপঢৌকন।
এ ব্যাপারে আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি তারিক হাসান বলেন, পশ্চিম বঙ্গের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমপি আনারের মেয়ের ডিএনএ টেস্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই টেস্ট করার ক্ষেত্রে কিছু আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
অপরাধ ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিএনএ টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমপি আনারের ঘটনাস্থল শনাক্ত হয়েছে। ওইখানেই তার ডিএনএ পরীক্ষা করা সম্ভব হত। কিন্তু তা করা হয়নি। পরবর্তীকালে গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সঞ্জীবা গার্ডেন ও আশপাশের এলাকা থেকে মাংস ও হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। এসব আলামত এমপি আনারের কিনা তা জরুরিভিত্তিতে এমপি আনারের মেয়ের সঙ্গে ডিএনএ টেস্ট করার দরকার ছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে শনাক্ত করতে হবে ভিকটিমের লাশ। এরপর তদন্ত এগিয়ে নেওয়া। যা ন্যায় বিচারের গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা না করে ডিএনএ টেস্ট নিয়ে একটা নাটকীয় কার্যক্রম চলছে। এতে আশংকা করা হচ্ছে ডিএনএ টেস্ট বিলম্বের কারণ হিসাবে স্বজনরা বলছেন প্রভাবশালী এমপি ও মাফিয়াদের রক্ষা করার জন্য এটা একটা কৌশল হতে পারে।
বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে স্থানান্তর : ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার আসামী কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৪ টার দিকে তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঝিনাইদহ কারাগারে আনা হয়। ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের ওসি জুয়েল আহমেদ জানান, তিনি শুনেছেন, মামলার আলামত বাবুর ফেলে দেওয়া মোবাইল গুলো উদ্ধারের জন্য তাকে ঝিনাইদহ আনা হয়েছে। বুধবার তাকে নিয়ে তার ফেলে দেওয়া মোবাইলসহ আলামত উদ্ধার অভিযান হতে পারে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। ঝিনাইদহ কারাগারের জেলার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার আসামী কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে আদালতের নির্দেশে ঝিনাইদহ কারাগারে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন