আপডেট :

        গাজা যুদ্ধ: ইইউ-এর ভূমিকা প্রকাশ্যে, দায়িত্ববিমুখতার নতুন অজুহাত উঠে আসছে

        ২৯ বছরের অপেক্ষা শেষ: সালমান শাহ হত্যা মামলায় পুলিশের প্রথম পদক্ষেপ ইস্কাটন ফ্ল্যাটে

        এমন ওপেনিং দেখা যায়নি অনেকদিন: তবু বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ২৯৯-এ আটকে যায়

        উপদেষ্টা পরিষদ: ২ আইন চূড়ান্ত, ৩টির নীতিগত অনুমোদন

        ট্রাম্পের এশিয়ান ট্যুর শুরু: শি’র সঙ্গে 'ফ্যান্টাস্টিক ডিল' এর প্রত্যাশা বাড়ল

        সরকারি স্থবিরতায় আগামী মাসে ক্যালফ্রেশ সহায়তা বিলম্বিত হতে পারে: নিউজম

        সরকারি স্থবিরতায় খাদ্যসংকট মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা নিউজমের

        একই সফটবল দলের চার সদস্যের মরদেহ উদ্ধার, সন্দেহজনক ওভারডোজে মৃত্যু

        যুক্তরাষ্ট্রে পারিবারিক স্বাস্থ্যবিমার গড় খরচ প্রায় ২৭,০০০ ডলারে পৌঁছেছে

        ডাকাতি করতে গিয়ে নিজেই বিপদে, রেসলারের হাতে মার খেয়ে গ্রেপ্তার

        হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইং ভেঙে নতুন বলরুম নির্মাণের ঘোষণা ট্রাম্পের

        প্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় হামলা, নিহত ৩

        লস এঞ্জেলেসে অভিবাসন অভিযানে গুলিবিদ্ধ টিকটক নির্মাতা ও মার্কিন মার্শাল

        দীপিকা-রণবীরের বেবি দুয়া: মায়ের চোখ নিয়ে ইন্টারনেটে ভাইরাল হচ্ছে ছবি

        সরকারে দলীয় কেউ থাকলে সরিয়ে দিতে হবে: রিজভী

        গ্রিন টি না কি লাল চা, কোনটিতে উপকার বেশি

        থাইল্যান্ড সীমান্তে স্টারলিংকের অবৈধ ব্যবহার: মিয়ানমার স্ক্যাম সেন্টারের নতুন শক্তি।

        নিউইয়র্কের পেন স্টেশনে নবজাতক ফেলে যাওয়া মা গ্রেপ্তার

        অভিষেকে ৫ উইকেট ‘বুড়ো’ আফ্রিদির

        উবার ও লিফট চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক ইউনিয়ন আলোচনার আইন পাশ করলো ক্যালিফোর্নিয়া

পুড়ছে সুন্দরবন, পুড়ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

পুড়ছে সুন্দরবন, পুড়ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

১৪ বছরে ২০ বার

আগুনে পুড়ছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন। বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ এই বনটির গহীন অরণ্যে গত ১৪ বছরে ২০ বার আগুন লেগেছে। সর্বশেষ আজ বুধবার চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্পের আব্দুল্লারছিলায় প্রায় ১০ একর জায়গা আগুনে পুড়েছে। একই এলাকায় মাত্র ১৭ দিন আগে (২৭ মার্চ) আগুনে পুড়ে যায় শিকদারেরছিলার গহীণ অরণ্য। এদিকে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও সুন্দরবনকে রক্ষায় নেওয়া হয়নি কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ। এমন কী বন বিভাগের নেই কোনো নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও। ফলে শুধুমাত্র বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় লাগা এসব আগুনে পুড়েছে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ।

আজকের (বুধবার) আগুন লাগার ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফায়ার সার্ভিসের মোরেলগঞ্জ স্টেশনের লিডার মো. গোলাম মোস্তফা বিকেল ৪টায় এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট ও শরণখোলার ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।’ আগুনে সুন্দরবনের প্রায় ১০ একর জায়গা পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

১৪ বছরে ২০ বার আগুন

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে গত ১৪ বছরে ২০ বার আগুনে পুড়েছে। ২০০২ সালের ২২ মার্চ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড কটকা অভয়ারণ্য প্রায় ১৫ দিন ধরে আগুনে জ্বলে। এর মধ্য দিয়ে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে আগুনের সূত্রপাত হয়। বন বিভাগের হিসাব মতে, এই একটি মাত্র অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ৬ একর বনভূমি।

এরপর ২০০৪ সালে ২৫ ও ২৭ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের নাংলির মাদ্রাসার ছিলায় ও আড়িয়ার খাল এলাকায় বনের ভিতর দুই দফা অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল একই রেঞ্জের আমরবুনিয়া এলাকায় অপর একটি অগ্নিকাণ্ডে আড়াই একর এলাকার বন পুড়ে যায়। ৫ দিন পর ১৩ এপ্রিল একই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তুলাতলা এলাকায় আগুনে পুড়ে যায় সাড়ে ৪ একর বন।

২০০৬ সালের ১৯ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের তেরাবেকা এলাকায় সৃষ্ট দাবালনলে পুড়ে যায় প্রায় দেড় একর বনভূমি। ওই বছরের একই এলাকার ১২ এপ্রিল আমরবুনিয়া এলাকায় বন আগুনে পুড়ে যায়। একই দিন ওই এলাকার কলমতেজেতি পুড়ে যায় দেড় একর বনভূমি। ১ মে চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের নাংলীর ডালিয়া বিলের বন আগুনে পুড়ে যায়। তার আগে ৩ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নম্বার কম্পামেনেটর আড়াই একর বন পুড়ে যায়।

এরপর ২০০৭ সালের ১৫ জানুয়ারি শরণখোলা রেঞ্জের ডুমুরিয়া ক্যাম্পের সাড়ে ৫ একর বন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওই বছরের ১৯ মার্চ ও ২৮ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলীর পচাকুড়ালিয়া এরাকায় দুই দফা আগুনে ১০ একর বন পুড়ে যায়।

২০১০ সালের ২০ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৭ নম্বার কম্পামেন্টের ৫ একর বন পুড়ে যায়। পরের বছর ২০১১ সালের মার্চ মাসে তিন দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ১ মার্চ নাংলি এলাকার ২৫ নম্বর কম্পামেন্টে প্রথম দফা অগ্নিকাণ্ডে দুই একর এলাকার বনসম্পদ পুড়ে ছাই হয়। টানা ৩ দিন পর এ আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ৮ মার্চ আড়িয়ার বেড় নদী থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটর ভিতরে আবার আগুন লাগে। এ আগুন নেভাতে না নেভাতেই ৯ মার্চ ভোলা নদী থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে গহীন বনে হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। বনবিভাগ দমকল বাহিনী এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় ৪ দিনের মাথায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ৩ দফা এ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দশ একর এলাকার বনসম্পদ পুড়ে যায়।

২০১৪ সালের ২১ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ৬৫ ছিলায় আগুনে সাড়ে ৩ একর বন পুড়ে যায়। এতে ভস্মীভূত হয় কোটি-কোটি টাকার, সুন্দরী, বাইন, আমুর, গেওয়াও বলাসহ অন্যান্য বৃক্ষরাজি ও লতাপাতা।

চলতি বছরের গত ২৭ মার্চ বিকালে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলির শিকদারেরছিলায় এলাকায় আগুন লাগে। সুন্দরবন বিভাগের মতে, এতে পুড়ে যায় ১০ একর বনভূমি।

সর্বশেষ (১৩ এপ্রিল) বুধবার সকালে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্পের আব্দুল্লারছিলার আগুন আবার আগুন লাগে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোড়লগঞ্জ স্টেশন লিডার মো. গোলাম মোস্তফা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের হিসাব মতে, ইতোমধ্যে প্রায় ১০ একর জায়গা পুড়ে গেছে।

প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত কমিটির ভূমিকা

প্রতিটি আগুন লাগার পর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে এসব আগুন লাগিয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের নাম-পরিচয় উঠে আসে না এসব তদন্ত প্রতিবেদনে। সুন্দরবন বিভাগের প্রতিটি তদন্ত রিপোর্টে জেলে-মৌয়ার বা বনজীবীদের বিড়ি-সিগারেট বা ফেলে দেওয়া মশাল থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে বার বার উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের দায়ী করা হয়। ফলে আগুন লাগানোর এসব দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা সবসময় থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে গোটা সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জের মধ্যে কেন শুধুমাত্র চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে— এ নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেকের। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তবে সুন্দরবনসহ উপকূলের খোঁজ-খবর রাখেন এমন একাধিক সূত্র মতে, দু’-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক শ্রেণির অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রভাবশালীরা সুন্দরবনের খাল-বিল কথিত ইজারার মাধ্যমে মাছ চাষের জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত