গাজা যুদ্ধ: ইইউ-এর ভূমিকা প্রকাশ্যে, দায়িত্ববিমুখতার নতুন অজুহাত উঠে আসছে
তারা সাংবাদিক দেখলো, দেখলো না অপরাধী : প্রধানমন্ত্রী
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও যায়যায়দিন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশিষ্টজনদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা সাংবাদিক দেখলো, দেখলো না অপরাধী।
তিনি আরো বলেন, অপরাধীকে গ্রেপ্তার করলেও অপরাধ হয় এখন। যদি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করলেই অপরাধ হয়, তাহলে এদেশে বিচার কী করে হবে? তাহলে দেশে কোনো হত্যার বিচার কী করে হবে?
সোমবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে ধরায় এখন যেমন সমালোচনা হচ্ছে ঠিক একই কাজ হয়েছিল ৭৫ সালে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে, খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে।
বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে তাদের মূল লক্ষ্য থাকে অর্থ লোপাট। আর সে অর্থ তাদের এত পরিমাণে রয়েছে যে, তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে ভাড়া করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তেই সেটা ধরা পড়েছে। সেখানে যাদের সাজা হয়েছে, আদালতে তাদের দেওয়া বয়ান থেকেই এসেছে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম।
শেখ হাসিনা এসময় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রমাণিত একটি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গিয়েও আমাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। ষড়যন্ত্রও হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে, আর সমালোচনারও শিকার আমরা।
তাহলে আমাদের কি কোনো অধিকার নেই? আওয়ামী লীগের কেউ মারা গেলে তার বিচারের অধিকার কি নেই? ষড়যন্ত্র করলে তাদের কিছু করা যাবে না? সবার মানবাধিকার আছে, আমাদের কোনো মানবাধিকার নেই। শুধু আওয়ামী লীগের মানবাধিকার নেই, আক্ষেপের সুরে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যায় ও ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সাংবাদিকদের মায়াকান্না দেখছি, যারা মায়াকান্না করছেন, তাদের তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেখানে অন্যায় দেখি সেখানেই বিচার করি। আমাদের লক্ষ্য ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের কাজ হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্রে বিএনপি লিপ্ত বলে মন্তব্য করে হাসিনা বলেন, যারা এখন বড় বড় কথা বলছে, তারা কীভাবে তাজা মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারলো। এখন যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেইবা কী করে?
নোংরামি-পর্ন চিন্তা মুক্তচিন্তা নয়
মুক্তচিন্তার নামে গুটিকয়েক লোক ধর্মকে নিয়ে নোংরা-জঘন্য ও পর্ন লিখছে বলে এসময় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ ধরনের নোংরামি-পর্ন চিন্তা মুক্তচিন্তা নয়।
এবারো জোর দিয়ে তিনি বলেন, মুক্তচিন্তা যদি পর্ন চিন্তা হয়, নোংরা, জঘন্য চিন্তা হয়, তবে এটি মুক্তচিন্তা নয়। বিরোধিতা করে মানুষের ধর্ম-বিশ্বাসে আঘাত কাম্য নয়। বর্তমানে মুক্তচিন্তার নামে হচ্ছে নোংরা চিন্তা। আমি বিশ্বাস করি, যার যার ধর্ম তার তার। কাউকে আঘাত করে লিখলেই মুক্তচিন্তা হয়ে যায় না। যারা এসব লিখছেন, তারা রুচিবোধ রেখে লিখুক, তবে তো কোনো সমস্যাই নেই।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। তিনি বলেন, যারা ইসলাম কায়েমের নামে, মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছেন, তারা কোন অধিকারে হত্যা করছেন! আল্লাহ বলেছেন, শেষ বিচারের কথা, তারা হত্যা করে বিচার করার কে! আমরা কোনো ষড়যন্ত্র এদেশে মানবো না। এদেশ শান্তির হবে। সেটাই আমরা প্রতিষ্ঠা করবো।
শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, হাজার কথা বলেও এতিমের টাকা মেরে খাওয়া লোকদের বিচার বিনষ্ট করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেমন হচ্ছে, তেমনিভাবে তাদেরও হবে। জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এখানে কোনো বাধা আমরা মানবো না।
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা সভায় বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম, এ কে এম রহমত উল্লাহ, আবুল হাসনাত, শাহে আলম মুরাদ, সাদেক খান প্রমুখ। সভায় সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
News Desk
শেয়ার করুন