রাজনীতিতে জড়িয়ে অনুতপ্ত জহিরুল হক রুবেল
রাজনীতিতে জড়িয়ে অনুতপ্ত বলে জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে পুলিশকে জানিয়েছেন রাজশাহীর শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা জহিরুল হক রুবেল। পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে থাকা রুবেল জিজ্ঞাসাবাদের বলেন, ‘রাজনীতিতে জড়িয়ে ভুল করেছি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে বাদাম বেঁচে খেলেও ভালো করতাম। এখন এমন বিপদে পড়তে হতো না।’ এরপর রুবেল শুধু কান্নাকাটি করছেন।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে যুবলীগ নেতা রুবেলকে ছাত্র জনতার মিছিলে দুইহাতে পিস্তল নিয়ে গুলিবর্ষণ করতে দেখা যায় ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওতে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন। তাদের মধ্যে সেদিন আহত শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম সবুজ ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলী রায়হান ৮ আগস্ট মারা যান।
এ বিষয়ে পৃথক মামলায় রুবেলকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়।
জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট রাতে কুমিল্লা থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। রাজশাহী আনার পর তাকে আলী রায়হান হত্যা মামলায় ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রিমান্ডের চতুর্থ দিনে রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হতাশা প্রকাশ করে রুবেল আরও বলেছেন, ‘রাজনীতি করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজশাহীর শীর্ষ নেতারা কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি। তবে তিনি ফেঁসে গেছেন।’
রুবেল দুই হাতে দুই পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলির কথা রিমান্ডের প্রথম দিনই স্বীকার করেছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতেও রুবেল প্রস্তুত আছেন বলে জানা গেছে।
রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আলী রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) তাজউদ্দিন এবং সাকিব আনজুম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফুল ইসলাম উপস্থিত থেকে ছাত্র-জনতার উপর হামলার খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করছেন।
এসআই তাজ উদ্দিন বলেন, ‘রুবেল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তবে অস্ত্র ও অর্থের উৎস এখনও জানা যায়নি। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সবাই অনুতপ্ত হয়। রুবেলও এখন অনুতপ্ত।’
সাকিব আনজুম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আলী রায়হান হত্যা মামলার রিমান্ড শেষে সন্ত্রাসী রুবেলকে আমিও রিমান্ডে চাইব।’
রাজশাহীর শীর্ষ সন্ত্রাসী রুবেলকে সবাই এক নামে চেনে। সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করা আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটোর বন্ধু তিনি। তার মাধ্যমে মেয়র লিটনের ‘ডানহাত’ হিসেবে কাজ করতেন রুবেল।
রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে রুবেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, জমি দখল, অস্ত্র লুট, মাদক পাচার ও বিস্ফোরক আইনে ছয়টি মামলা ছিল। ৫ আগস্টের পর দুটি হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। তিনি দুইবার রাসিকের ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
গত বছরের ২১ জুনের নির্বাচনে পরাজিত রুবেল কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে প্রস্রাব করার সিসিটিভি ফুটেজ তখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন