মতবিনিময় না করেই নিউইয়র্ক ছাড়লেন ড. ইউনূস, কমিউনিটিতে অসন্তোষ
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের পর পূর্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলেও এবার তার ব্যতয় ঘটেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জাতিসংঘের ৭৯ তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোন সংবাদ সম্মেলন বা মতবিনিময় না করেই দেশে ফিরে যান। একাধিকবার প্রেস কনফারেন্সের জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিষয়টিকে এড়িয়ে যান এবং এর কোন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন। এমন ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকরা।
ড. ইউনূস নিউইয়র্কে অবস্থানকালীন সময়ে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে সাংবাদিকরা ড. ইউনুসের সরাসরি সাক্ষাতে আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রেস সচিব বলেন, আমি তো প্রধান উপদেষ্টারই মুখপাত্র। আপনাদের যা বলার আমাকে বলুন। আর কোন কিছু জানার থাকলে আমাকে প্রশ্ন করুন। আমি আপনাদের কথাগুলো প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্ত পৌছে দিব। প্রধান উপদেষ্টা কেন সরাসরি সংবাদ সম্মেলন করতে হবে। প্রেস সচিব শফিকুল আলম যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট বাইডেন সরাসরি প্রেস মিট করেন কিনা এমন প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন। বাঙালীর আবেগ দিয়ে সব চলেনা, কিছু নিয়মকানুন আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্র তথা নিউইয়র্কের প্রবাসীদের অনন্য ভূমিকা ছিলো উল্লেখ করে অপর এক সাংবাদিক বলেন, নিউইয়র্কের রাজপথে নিয়মিত প্রবাসীদের কর্মসূচি ছিলো, তবুও আমরা কেন ড. ইউনুসের সাক্ষাৎ পাব না?
উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, শুধু নিউইয়র্ক প্রবাসীরা এ আন্দোলনে অবদান রাখেনি, পুরো বিশ্বের প্রবাসীরা অবদান রেখেছে। প্রধান উপদেষ্টা এখন কতজনের সাথে সাক্ষাৎ করবে। আমার মনে হয়না এ আয়োজনের দরকার আছে।
ড. ইউনুস সাংবাদিক ও প্রবাসীদের সাথে মতবিনিময় না করে দেশে ফিরে যাওয়া তার প্রেস সচিবের বক্তব্য বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রবাসীরা সরকারকে সমর্থন ও দেশ গঠনে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সরকারকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেও তাদের আশার জায়গায় ব্যাঘাত ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এছাড়াও বিগত আওয়ামী আমলে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে প্রতিবছর প্রেস কনফারেন্স করলেও আওয়ামীলীগ না করা সাংবাদিকদের ইনভাইট করতেন না। বিগত আমলে সরকার প্রধানের ইনভাইটেশন না পাওয়া প্রথিতযশা সাংবাদিকরা আশা করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান তাদের গুরুত্ব দিবেন। কিন্তু আশার সে প্রতিফলন না হওয়ায় সাংবাদিক কমিউনিটি বিষ্ময় প্রকাশ করে।
বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস ও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান নিউইয়র্কে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সাথে ‘সংবাদ সম্মেলন বা মতবিনিময়’ করতে পারতেন যা অতীত থেকে হয়ে আসছে।
এবিষয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল হক বলেন, বিগত সরকার দলীয় সাংবাদিকদের ইনভাইট করলেও অন্তত প্রতিবছর সরকার প্রধান নিউইয়র্কে প্রেস কনফারেন্স করতেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের কথা গুরুত্ব পেতো। প্রবাসীরা সরকারের প্রতি তাদের আশা আকাংখার কথা সরকারপ্রধানকে সরাসরি জানাতে পারতো। কিন্তু এবার সরকার প্রধানের প্রেস কনফারেন্স ছাড়াই দেশে ফিরে যাওয়াকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন প্রবাসী এই সাংবাদিক। একই বিষয়ে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ওয়াজেদ এ খান, খবর পত্রিকার সম্পাদক ফরিদ আলম এবং সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলাম ড. ইউনূসের সাথে প্রেস কনফারেন্সে মিলিত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রেস সচিব একই উত্তর দেন।
এদিকে নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় প্রবাসীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ মিশন আর ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজের ব্যানারে তার সংবর্ধনা আয়োজনের উদ্যোগ চলছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোন পক্ষই সংবর্ধনা আয়োজনের ব্যাপারে ঢাকা থেকে কোন গ্রীন সিগন্যাল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়।
কমিউনিটির কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির মতে বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বা সরাসরি কোন মতবিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব না হলেও কনস্যুলেটের সহায়তায় ভার্চুয়ালী প্রবাসীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজিত হলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের মতামত দেশের সরকার প্রধানের সাথে শেয়ার করতে পারতেন। কেননা, দেশের ‘জুলাই বিপ্লব’ সফল করতে প্রবাসীরাও অসামান্য অবদান রেখেছেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন