গাজা সংকটে অগ্রগতি, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ সম্পন্নের পথে
পূর্বধলা সরকারি কলেজের ফল বিপর্যয়, সমালোচনার ঝড়
নেত্রকোনার পূর্বধলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করলেও এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী এবার ফেল করেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন কলেজটির সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার এইচএসসিতে সারা দেশে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ থাকলে পূর্বধলা সরকারি কলেজে পাসের হার ৫০.৪৩ শতাংশ।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৪১ জন। এদের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাশ করেছে ৩২ জন, মানবিকে ৪২২ জন ও বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ জন। মোট পাশ করেছে ৪৬৯ জন। জিপিএ পেয়েছে ১১ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪ জন ও মানবিকে ৭জন ।
তুলনামূলকভাবে মানবিক বিভাগ থেকে ৫০% ছাত্র-ছাত্রী কৃতকার্য হলেও শোচনীয় ফলাফল ছিল বিজ্ঞান বিভাগের। বিজ্ঞান বিভাগে মোট পরিক্ষার্থী ছিল ৪৩ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১৫জন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পূর্বধলা সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একটি আধুনিক বিজ্ঞানাগার ও পর্যাপ্ত মেধাবী শিক্ষকসহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও কেন ফল বিপর্যয়।
পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জত না হওয়ায় ফেসবুকে ইকবাল কবির পিয়াস, আল আমিন শেখ, তাইজুল ইসলাম, বেলায়েত হোসাইনসহ স্থানীয় অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাসি দিয়েছেন
তারা স্ট্যাটাসে লিখেন, কলেজটি সরকারি করার পর থেকেই রেজাল্ট গোল্লায় গেছে। বেতনের স্কেল বাড়লো, শিক্ষার মান কমলো। রেজাল্টের বেহাল দশার দায় এড়াতে পারবে না কোন শিক্ষক। কলেজের রেজাল্ট খাইয়া দিছে রাজধলা বিলে, রতন স্যারের ২০২৪ এর অবদান খাইয়া দিলো ছাত্র/ছাত্রীদের সুন্দর জীবনটাকে।
স্থানীয় অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেজাল্ট বিপর্যের অন্যতম কারণ শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ও খেয়াল খুশী মতো প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া। অনেক শিক্ষক বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে থাকেন। বলাকা কমিউটার ট্রেন ও লোকাল ট্রেনই হলো তাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ট্রেনের সাথে তাল মিলিয়েই তারা কলেজে আসা যাওয়া করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় প্রতিনিধি হুমায়ুন তাজওয়ার পল্লব জানান, পূর্বধলা ডিগ্রি কলেজ সরকারি হওয়ার পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিবারই খারাপ রেজাল্ট। এ দায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এড়াতে পারেন না। এলাকাবাসী এবং অবিভাবকবৃন্দ এটা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলা, নিয়মিত ক্লাসের অভাব এবং শিক্ষকদের কলেজে অনুপস্থিতি । ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ৬ দফা দাবি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেনে নেওয়ার পরেও সেগুলোর বাস্তবায়নে অবহেলার কারণে আবারও এই খারাপ রেজাল্ট।
পূর্বধলাবাসী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন,পূর্বধলার সকলের দাবি, এই ৬ দফা বাস্তবায়ন করে কলেজের সুশৃঙ্খল পরিবেশ এবং ভালো ফলাফলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হোক।
পূর্বধলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সাইদুর রহমান তালুকদার ইত্তেফাককে জানান, আমরা আর ফল বিপর্যয় দেখতে চাইনা। অতি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান চাই। আমরা আর সমালোচনার পাত্র হতে চাইনা। কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকরা যদি নিজেরাই লজ্জিত না হয় তাহলে আমরাই কেন লজ্জিত হবো?
পূর্বধলা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারোল হক রতন বলেন, এ বছর শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানেই রেজাল্ট খারাপ হয়নি। সারা ময়মনসিংহ বিভাগেই এ অবস্থা। তা ছাড়া এবছর ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা কর্মীদের সুপারিশে ঢালাওভাবে ফেল করা শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় । আগামী থেকে তা আর হতে দেব না।
ফলাফল বিপর্যের আরেকটি কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র পরিবর্তন ফল বিপর্যয়ের একটি অন্যতম কারণ। যেমন রাবেয়া আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় আমাদের কলেজে। আর আমাদের শিক্ষার্থী তাদের কলেজে। রাবেয়া আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আমাদের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে আমাদের পরিক্ষার্থীদের অনেক অসুবিধার সন্মর্খীন হতে হয়।
অপর দিকে কলেজে শিক্ষকরা খেয়াল খুশী মতো প্রতিষ্ঠানে আসার ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, একজন শিক্ষকের ক্লাসের রুটিন হলো বেলা ২টায়। সে দুইটায়ই আসবে। তাকে সকাল ৯টা থেকে কলেজে বসিয়ে রাখলে ছাত্রদের লাভ কি ?
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক বলেন, সরকারি কলেজ আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। এটি পরিচালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক আজহারুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন