শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের বিধান না রাখলে মানুষ জীবন দিয়ে তা করবে
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভুইয়া বলেছেন, সংবিধানে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা না রাখলে প্রতি ১৫ বছর পর পর মানুষকে জীবন দিয়ে সরকার পরিবর্তন করতে হবে। সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে প্রয়োজন। যাতে করে জনগণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকার পরিবর্তন করতে পারেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানিতে অংশ নিয়ে হাইকোর্টে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে বুধবার (৬ নভেম্বর) এ শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এই মামলায় ইন্টারভেনর হিসাবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি ও জামায়াতের কৌসুলিরা।
শুনানিতে রিটকারী পক্ষের কৌসুলি শরীফ ভুইয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধিনীর ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যর্থ নির্বাচন হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। এই ব্যর্থ নির্বাচনের ফলে দেড় হাজারের অধিক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। অঙ্গহানি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। কাজেই সংবিধান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তার ফলাফল কি হতে পারে সেটা ভেবে দেখাও গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই পঞ্চদশ সংশোধনী আনার ফল হচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির ঘটনা।
তিনি বলেন, সংসদ জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী সংবিধানে পরিবর্তন আনবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সংবিধানের বিরাট একটা অংশকে সংশোধনের অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ সংসদকে সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ড. শরীফ বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের পূর্বে একটা বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল তৎকালীন সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার ক্ষেত্রে সেই কমিটির সিদ্ধান্ত রাতারাতি বদলে ফেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থাৎ এক ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে এই সংশোধনীতে। আর সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় পাস হয়েছে এই সংশোধনী। এ কারণে এটা বাতিলযোগ্য। শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, এটা কোন পক্ষের মামলা নয়। এখন এটা পুরো বাংলাদেশের জনগণের মামলা।
শুনানির পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিটকারী ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার পরিবর্তনের কাজটি ব্যালটের মাধ্যমে হতে পারত। কিন্তু সেই কাজটিই আজ দেড় হাজারের অধিক মানুষকে জীবন দিয়ে করতে হয়েছে। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর ধারাবাহিকতা মাত্র। এই দুটি সংশোধনীর পরিণতি কি হয়েছে সেটা দেশের জনগণ দেখেছে। পঞ্চদশ সংশোধনী একটি সরকারকে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম. হাফিজউদ্দিন খান, শিক্ষার্থী জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। ওই রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রশ্নে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন