জলাতঙ্কের টিকা নেই রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে
রাজবাড়ীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে দীর্ঘ ২৪ দিন ধরে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের র্যাভিস ভ্যাকসিন ও টিকা প্রদানের সিরিঞ্জ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে হাসপাতালের বিনামূল্যের টিকা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। হাসপাতালে বিনা মূল্যের সরকারি ভ্যাকসিন না পেয়ে বাধ্য হয়েই বাহিরের ফার্মেসী থেকে উচ্চমূল্যে টিকা ও সিরিঞ্জ কিনে টিকা নিচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু জেলা সদর হাসপাতালেই নয়, জেলার আরও ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ। সরকারি সরবরাহকৃত ভ্যাকসিন না থাকায় গত ২৪ দিনে শুধু জেলা সদর হাসপাতালেই ২৭৯০ জন রোগী ফার্মেসী থেকে জলাতঙ্কে টিকা কিনে হাসপাতালে এসে সেবা নিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ চালুর করার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সদর হাসপাতালের র্যাভিস টিকাদান কেন্দ্রে খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ দিনে হাসপাতালে এসে ১৯৪০ জন রোগী ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এছাড়া গত ৭ নভেম্বর এক দিনেই ১১৯ জনসহ চলতি মাসে ৮৫০ জন রোগী এ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সব মিলিয়ে গত ২৪ দিনে শুধু জেলা সদর হাসপাতালেই ২৭৯০ জন রোগী এসে সরকারি ভ্যাকসিন না পেয়ে বাইরের ফার্মেসী থেকে কিনে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালের জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কুকুর ও বিড়ালের কামড় বা আঁচড় দেওয়া রোগীরা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন হাসপাতালে। কিন্তু ভ্যাকসিন সেবা প্রদানকারী কক্ষের দরজায় ও দেয়ালে ‘১৩/১০/২৪ তাং হতে বিড়াল, কুকুরের ভেকসিন সাপ্লাই নেই’ উল্লেখ করে একটি নোটিস সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেবাদানকারী নার্সরা রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনতে বলছেন। তবে কুকুরের তুলনায় বিড়ালে কামড়ানো বা আঁচরের রোগী বেশি।
রাজবাড়ী মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন শেখ বলেন, গত পরশু দিন আমাকে বিড়ালে কামড় দিয়েছে। আমি সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসককে দেখালে তিনি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষে ভ্যাকসিন নিতে গেলে তারা বলেন, ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই। বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। পরে চারজনের গ্রুপ করে বাইরে থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন ও ৪০ টাকা দিয়ে চারটি সিরিঞ্জ কিনে এনে তাদের থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে গ্রহণ করি।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী আক্ষেপ করে বলেন, গরীব মানুষের পক্ষে ৫০০ টাকা দিয়ে টিকা কিনে দেওয়াও কষ্টের। হাসপাতালে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা শুনে এসেছিলেন তারা। কিন্ত এসে দেখেন ফ্রি ভ্যাকসিন নেই। পরে বাধ্য হয়েই বাইরে থেকে টিকা কিনে আনতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি ভ্যাকসিন ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীরা এ ভ্যাকসিন না দিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। এতে করে জলাতঙ্ক ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনাও দেখছেন স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে জড়িতরা।
এদিকে হাসপাতালের জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ইনচার্জ সিনিয়র নার্স রওশন আরা আক্তার বলেন, প্রতিদিন গড়ে কুকুর ও বিড়ালে কামড়ানো প্রায় ১০০ জন রোগী হাসপাতালে এসে টিকা নিচ্ছেন। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় রোগীরা ব্যক্তিগত ভাবে টিকা কিনে নিয়ে আসলে সেবা প্রদান করছি।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, হাসপাতালে সরবরাহের থেকে আমাদের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সাপ্লাই না থাকায় সাময়িকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিটন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই বেশ কিছুদিন যাবৎ। আমরা ঢাকায় চাহিদা জানিয়েছি। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে। দ্রুতই সরকারি ভ্যাকসিন সরবরাহ হলে যথারীতি বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন