দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি হওয়া টিকিটে ৫ কোটি ডলারের জ্যাকপট
শেখ হাসিনার '৪০০ কোটি' টাকার পিয়ন জাহাঙ্গীর এখন নিউইয়র্কে!
বাংলাদেশের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল আলোচিত পিয়ন ও ৪০০ কোটি টাকার মালিক জাহাঙ্গীর আলম এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। প্রথমে ব্রুকলিনে আশ্রয় নিলেও এখন তিনি সীমান্ত শহর বাফেলোতে আছেন বলে জানা যায়। গত সপ্তাহে দেশের সম্পত্তি বিক্রি করার পাওয়ার অব এটর্নি সত্যায়িত করার জন্য নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট কার্যালয়ে এসেছিলেন।
কনস্যুলেটে জাহাঙ্গীরের অবস্থান চাউর হলে বিব্রত হয়ে পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে কনসাল জেনারেল বিষয়টি জানতে পেরে জাহাঙ্গীরের পাওয়ার অব এটর্নীর সেবা দিতে অসম্মতি জানান। পরে জাহাঙ্গীর কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে যান।
গত জুলাইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে দূর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার বাসার পিওন (জাহাঙ্গীর) ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিক্যাপ্টার ছাড়া সে চলেই না’। এমন বক্তব্য প্রচারের পরই দেশ ছাড়েন জাহাঙ্গীর। পরে তার আত্মীয়ের বরাতে নিউইয়র্কে তার অবস্থানের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে নিউইয়র্কে কোথায় আছেন সেটি কেউ নিশ্চিত হতে পারেননি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় ৪ মাস পর অবশেষে আলোচিত পিয়ন জাহাঙ্গীরের দেখা মিললো।
গত ৪ ডিসেম্বর বুধবার তার দেখা মিলে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসে। নীল-সাদা-হলুদ রংয়ের হুডি, ধূসর রংয়ের টুপি আর নীল রংয়ের জিন্স পড়ে এসেছিলোন ৪০০ কোটি টাকার আলোচিত এই পিওন। খয়েরি ফ্রেমের একটি চশমা ছিলো তাঁর চোখে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কনস্যূলাট অফিসের একজন অন্যতম উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিশেষ একটি ফোনে, তার কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়। যেহেতু অন্যতম উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার ফোন, কাজেই তার নির্দেশ বাস্তবায়নে বিশেষ দ্রুততা দেখান অফিসের লোকজন। জাহাঙ্গীর আলমের পাওয়ার অব এটর্নীর কাজ প্রায় শেষ ছিলো, শুধু বাকি ছিলো চূড়ান্ত স্বাক্ষরের।
কনস্যুলেটে সেবা নিতে যাওয়া লোকজন তাকে দেখে চিনে ফেলায় জাহাঙ্গীর নিজেকে আড়াল করতে কখনো টুপি দিয়ে আবার কখনো হুডি দিয়ে মুখ ঢাকবার চেষ্টা করেন। এ সময় অফিসের দায়িত্বরত কাউন্টারে কর্মকর্তার কাছে কাজের অগ্রগতি জানতে চান। ঠিক সে সময়ে সেবা নিতে যাওয়া একজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। কনস্যুলেটে জাহাঙ্গীরের অবস্থানের বিষয়টি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লে কনস্যুলেট অফিসে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নজরে আসে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার। চূড়ান্ত স্বাক্ষরের জন্য জাহাঙ্গীরের ফাইলটি তার কাছে নেওয়া হলে আলোচিত স্পর্শকাতর ঘটনা হওয়ায় তখন নাজমুল হুদা সেবা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। এরপরও বেশ কিছুসময় অপেক্ষারত অবস্থায় ছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, কনস্যুলেটে দায়িত্বরত ওই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পরামর্শে জাহাঙ্গীর অপেক্ষারত ছিলেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার আগ পর্যন্ত, জাহাঙ্গীর আলমের কনস্যুলেট অফিসে অবস্থানের বিষয়ে অবগত ছিলেন না কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা।
তথ্যমতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারের শেষের চার মেয়াদের প্রথম দুই মেয়াদের পুরোটা এবং তৃতীয় মেয়াদের প্রথম কিছুদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল এইড’ পদে কর্মরত ছিলেন জাহাঙ্গীর। তিনি ‘প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী’ পরিচয়ে তদবির, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম ছাড়াও গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়ে এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন যে, চাটখিল ও মাইজদীতে তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা।
তাঁর নির্দেশেই চলত পুলিশ ও প্রশাসনের সব রদবদল। এলাকায় গেলে তাঁর গাড়ির সামনে পেছনে থাকত পুলিশের গাড়ি। এমপি হতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বহর নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ করতেন। যাতায়াতে ব্যবহার করতেন হেলিকপ্টার। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েও সরে দাঁড়ান। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জাহাঙ্গীর বিপুল সম্পদ করেছেন। তাঁর সম্পদের মধ্যে রয়েছে– নোয়াখালীর চাটখিলে পৈতৃক ভিটায় চার তলা বাড়ি ও ৭০০ শতক জমি, খিলপাড়া পূর্ববাজারে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ, মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুরে স্ত্রীর নামে আট তলা বিলাসবহুল ভবন, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী টানেলের পাশে ১০০ বিঘা জমি এবং রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্ত্রীর নামে সাড়ে ৫ হাজার বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট, মিরপুরে সাত তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান রয়েছে তাঁর। ব্যাংকে তাঁর ডিপোজিট ছিল কয়েকশ কোটি টাকা। স্ত্রী-শাশুড়িসহ নামে-বেনামে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় জাহাঙ্গীর নিজ নামে আড়াই কোটি টাকা, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে সোয়া এক কোটি টাকা, এফডিআর সোয়া ১ কোটি টাকা, স্ত্রীর নামে বিলাসবহুল গাড়ি, বিভিন্ন কোম্পানিতে কোটি টাকার শেয়ার এবং একটি প্রতিষ্ঠানে ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে বলে দেখান। হলফনামায় বিভিন্ন খাত মিলিয়ে বছরে তাঁর প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয়ের কথা জানান। জাহাঙ্গীর তিনটি বিয়েও করেছেন বলে জানা যায়।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন