তাত্ত্বিক ও গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের তৈরি করবো’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রথম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। তিনি বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হয়ে অ্যাকাডেমিক অঙ্গনে রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের নানান দিক এবং শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
পড়াশোনা শেষে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। কেমন আছেন?
মামুন চৌধুরী: আমি বেশ ভালো আছি। নতুনত্বের একটি নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
জার্নালিজমের শিক্ষার্থী হিসেবে তো আপনার আরও অন্যান্য পেশায় যাওয়ার সুযোগ ছিল। শিক্ষকতা পেশা বেছে নিলেন কেন?
মামুন চৌধুরী: আমার বাবা এবং নানা দুজনেই শিক্ষক। ফলে শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহ বেশ আগে থেকেই। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের আড্ডায় শিক্ষকতার স্বপ্ন তারা বুনে দিত। এছাড়াও সিনিয়ররা প্রায়ই ‘তোমার সাথে শিক্ষকতা যায়’ বলে এক ধরনের সাহস তৈরি করে দিয়েছেন। আস্তে আস্তে পড়ায়, ধ্যানে এটা নিজের মধ্যে শিক্ষকতার আশা ধারণ করতে শুরু করি।
এক সময় এই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন; এখন শিক্ষক। এই অনুভূতিটা কেমন?
মামুন চৌধুরী: এটা অনন্য। সবাই নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে চায়। আমি হতে পেরেছি এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার, বিভাগ আমার; ফলে আপন জায়গায় ফিরে এসেছি।
শিক্ষক হওয়ার জার্নিটা কেমন ছিল? কীভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন?
মামুন চৌধুরী: অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ভালো করার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে আমি কনটেন্ট ধরে পড়াশুনা করতাম। মূল টেক্সট পড়ার প্রতি জোর দিয়েছি। এটা নিতান্ত আনন্দ কিংবা কৌতূহল থেকে। তারপর বন্ধুদের সাথে এসব শেয়ার করতাম, ফলে পড়ার সময়ই আমাকে বোঝাতে হবে এই মনোভাব নিয়ে যেকোনো বিষয়কে আত্মস্থ করতাম।
অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাহিরে অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না?
মামুন চৌধুরী: ডিবেটিং ক্লাব, সাংবাদিক সংগঠন, বইভব, ফিল্ম ক্লাব, শিশু সংগঠনসহ বেশকিছু কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এগুলো সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগাযোগের কৌশল শিখিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোনো বিশেষ স্মৃতি আছে? যেটা আপনাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছিল/ ভিন্ন রকম কোনো মুহূর্ত..
মামুন চৌধুরী: ভাইস চ্যান্সেলর স্কলারশিপ পাওয়াটা একটা বড় অনুপ্রেরণা ছিল। এই মুহূর্তে আর মনে পড়ছে না।
আপনার শিক্ষা জীবন থেকে এই পথে আসার পেছনে কোন মানুষগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি?
মামুন চৌধুরী: আমার বাবা-মা দুজনেরই বিশেষ অবদান আছে। বাবা তো নিজের চাইতে আমার খোঁজ বেশি রাখতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় আমাকে গাইড করেছেন। আর তিনি যেহেতু শিক্ষক ছিলেন, তিনি সহজেই বুঝতেন একজন ছাত্রকে কিভাবে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। তাই তিনি আমার স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা তো নতুন করে আমাকে গড়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে আমি আলাদা আলাদা জগৎ সম্পর্কে জেনেছি। সিনিয়র ভাইদের পরামর্শ, কড়া শাসনও আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বিশেষত বন্ধুদের কথা বলতে হয়। তারা বিশেষভাবে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। সবকিছুই করেছেন। এমন দুর্লভ বন্ধু আমি পেয়েছি এজন্য আমি ধন্য।
শিক্ষক হিসেবে আপনার বিভাগ এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে কোথায় দেখতে চান?
মামুন চৌধুরী: আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাই। গবেষণায়, অ্যাকাডেমিক নৈপুণ্য, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে একটি শ্রেষ্ঠতম স্থান হবে। আর সাংবাদিকতা বিভাগ তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় জায়গায় বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ তৈরি করবে। অলরেডি আমাদের বেশকিছু প্রজেক্ট দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এটা আমাদেরকে নতুন নতুন পরীক্ষণ চালাতে উৎসাহিত করবে।
বিভাগের শিক্ষার্থীদের মান-উন্নয়নে আপনার কোনো কর্মপরিকল্পনা রয়েছে কি?
মামুন চৌধুরী: ব্যবহারিক কাজ, তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং গবেষণায় আরও সময় দিয়ে শিক্ষার্থীদের তৈরি করবো। এ জন্য এসব কাজে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করবো, পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরও বৃহৎ আকারে যোগসূত্র তৈরি করার চেষ্টা করবো।
পাঠ্যক্রম উন্নয়নে কোন কোন বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখা উচিত বলে মনে করেন?
মামুন চৌধুরী: সামাজিক চাহিদার প্রতি নজর রেখে বিশ্বব্যাপী দক্ষতা এবং গবেষণা উন্নয়নের জন্য পাঠ্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই পাঠ্যক্রম তৈরির সময় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় চাহিদা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সফলভাবে শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হলে অংশীজনদের থেকে একটি ব্যাপক ও বোধগম্য পদ্ধতি এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বজায় রেখে র্যাঙ্কিং এগিয়ে নিতে আপনার পরামর্শ কী?
মামুন চৌধুরী: বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অর্জনে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, প্রতিষ্ঠান, সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করা এবং এসব প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা আবশ্যক। একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন অর্জন এবং খ্যাতি প্রচার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন নামি-দামি প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নে তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো প্রয়োজন। এতে সকল অংশীজন আগ্রহের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহযোগী হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আপডেট রাখা এবং নিজেদের সামগ্রিক কার্যক্রমকে ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক এবং বার্ষিক মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়নে যে-সব সমস্যা উঠে আসবে তা সমাধানে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকবে।
দেশ ও জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রকৃত ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
মামুন চৌধুরী: গবেষণা, শিক্ষাদান এবং জনসেবা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যগত ভূমিকা। তবে অংশীজনেরা এসব উচ্চশিক্ষা এবং ঐতিহ্যগত ভূমিকার পাশাপাশি আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত সামাজিক প্রভাব-প্রবণতা আশা করে। বলা বাহুল্য, দেশ ও জাতিগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষত, একটি মেধা ও মননশীল জাতি তৈরির প্রধান ক্ষেত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে এবং ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মতবাদের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বিভাগের নবীনদের প্রতি আপনার যদি কোনো পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা থাকে...
মামুন চৌধুরী: প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য সকল যোগ্যতা, দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আগামীতে এর কোনো বিকল্প নেই। পড়াশুনার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে কিছু স্কিল তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। সফট স্কিলসমূহ আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারলে চাকুরির বাজারে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। প্রায় সবার কাছেই সার্টিফিকেট আছে। কিন্তু আমার কাছে অতিরিক্ত কি আছে এটাই দেখার বিষয়।
সুত্রঃ ইত্তেফাক
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন