দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি হওয়া টিকিটে ৫ কোটি ডলারের জ্যাকপট
আত্মগোপনে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক!
দুই সপ্তাহ ধরে আত্মগোপনে আছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া গউছ। আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্প্রতি দায়ের করা সম্পূরক অভিযোগপত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই তাঁরা পালিয়ে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে। দুই মেয়র আত্মগোপনে থাকায় প্রতিষ্ঠান দুটির সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।কিবরিয়া হত্যা মামলায় আরিফুল হক চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় ১৩ নভেম্বর। এটি দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পুলিশ সুপার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মেহেরুননেসা পারুল।সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ‘শুনেছি মেয়র ঢাকায় রয়েছেন।’ মেয়র ছুটিতে রয়েছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেয়র মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি নিয়ে থাকেন। তাই তাঁর ছুটি নেওয়া না-নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা থাকার কথা নয়।’ অপরদিকে, হবিগঞ্জ পৌরসভার সচিব নুরে আজম বিন আক্তার শরীফও জানান, তাঁদের মেয়র ঢাকায় আছেন। তবে কী কারণে আছেন তিনি তা জানেন না বলে দাবি করেন।গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে মুঠোফোনে কথা হয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ১৩ দিন ধরে অনুপস্থিত, এ তথ্য সঠিক নয়। শরীরের নিয়মিত চেকআপের অংশ হিসেবেই দুই দিন আগে ঢাকায় আসি। এখন সিলেটের উদ্দেশে রাস্তায় রয়েছি।’আরিফুল হক বলেন, ‘মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী আমার নাম সম্পূরক অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবদুল হান্নান তাঁর জবানবন্দিতে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন। ওই নামের স্থলে আমাকে জড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না।’এই অভিযোগের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মেহেরুননেসা পারুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাঁদের নামই সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। মুফতি হান্নান আরিফুল ইসলাম ও আরিফুল হক চৌধুরী উভয়ের নামই জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছিলেন।’ কার্যক্রমে অচলাবস্থা: সিলেটে সিটি করপোরেশনের মেয়রের স্বাক্ষরের অভাবে ইতিমধ্যে জমে গেছে শতাধিক ফাইল। করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ফাইল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে। মেয়রের স্বাক্ষর না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে অনুমোদন হওয়া সত্ত্বেও নগরের নির্মিতব্য অন্তত ১৫০টি ভবনের নকশা চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারছে না প্রকৌশল বিভাগ। এ ছাড়া করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারদের প্রাপ্য বরাদ্দকৃত টাকা ও জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ করা অন্তত ৩০ জন শ্রমিকের মজুরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।এদিকে, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া দুই সপ্তাহ ধরে অফিস করছেন না। বাসায়ও তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল পৌরসভায় যোগাযোগ করা হলে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, তাঁর অনুপস্থিতির কারণে পৌরসভার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি পৌরসভার বেশ কিছু উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলোর অনুমোদন আটকে আছে।নাম প্রত্যাহারের দাবি: সম্পূরক অভিযোগপত্র থেকে আরিফুল হক চৌধুরী ও গোলাম কিবরিয়ার নাম প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট ও হবিগঞ্জে পৃথক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে সিলেট ছাত্র ও যুবকল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে সিটি করপোরেশনের সম্মেলনকক্ষে এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আরিফুল হক চৌধুরীকে হেনস্তা করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পূরক অভিযোগপত্রে তাঁকে জড়ানো হয়েছে। গোলাম কিবরিয়া গউছের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে হবিগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত সোম ও মঙ্গলবার এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
শেয়ার করুন