এমপি রানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন স্পিকার
আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা মামলায় আসামি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার সংসদের হাজিরা বইতে সাক্ষরের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। চিফ হুইপ বলেছেন, ‘এ বিষয়ে স্পিকার ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সোমবার সংসদের ৪ নম্বর লবির হাজিরা খাতায় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার স্বাক্ষর রয়েছে। তবে হাজিরা খাতায় সই করার পর তিনি সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আমানুর রহমান খান রানা টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য রানাকে গ্রেপ্তারের জন্য গত ৬ এপ্রিল টাঙ্গাইলের আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপরও তিন ধরা না পড়ায় ১৬ মে তার বাড়ির মালামাল বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। পুলিশ গতমাসে বাড়ির কিছু মালামাল বাজেয়াপ্ত করলেও তাকে আটক করতে পারেনি। আর বাড়িতে তেমন কোনো মালামালও পায়নি। এরইমধ্যে সোমবার সংসদ ভবনে গিয়ে তিনি সংসদ সদস্যদের হাজিরা খাতায় সই করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ এবং শাসক দল আওয়ামী লীগ।
সংসদ ভবনে সদস্যদের প্রবেশের জন্যে ৫টি পথ (লবি) রয়েছে। এরমধ্যে এক নম্বর লবি দিয়ে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করেন বিরোধী দলীয় নেতা, ২ ও ৪ নম্বর লবি দিয়ে প্রবেশ করেন সাধারণ সংসদ সদস্যরা, ৩ নম্বর লবি দিয়ে প্রবেশ করেন নারী সংসদ সদস্যরা এবং ৫ নম্বর লবি দিয়ে অধিবেশনে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা ও প্রথানমন্ত্রী।
জানা গেছে, সংসদ ভবনের মূল ফটক দিয়ে সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রবেশ করেন আমানুর রহমান খান রানা। সংসদ ভবনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও পলাতক আমানুর রহমান খান রানাকে কেউ বাধা দেননি। এরপর তিনি ৪ নম্বর লবিতে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে দ্রুত একই পথে সংসদ ভবন ত্যাগ করেন।
জনা গেছে, চলতি বাজেট অধিবেশনে হাজিরা দিতে না পারলে রানার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যেত। নিয়ম অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য যৌক্তিক কারণ ছাড়া সংসদে টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। রানা আত্মগোপনে থেকেই হাজিরা খাতায় সই করায় এখন তিনি পরবর্তী ৯০ কার্য দিবসের জন্য ‘ঝুঁকিমুক্ত’ হলেন।
এনিয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান নিজেকেই নিজে ছোট করেছেন। তিনি একটি মামলার আসামি। আইনসভার সদস্য হিসেবে তার উচিত্ ছিল আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিয়ে সংসদে আসা।’
আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে চিফ হুইপ বলেন, ‘এটা জাতীয় সংসদের স্পিকারের এখতিয়ার। তিনিই বিষয়টি দেখবেন। তিনি সংসদের অভিভাবক। চিফ হুইপ হিসেবে আমার তেমন কিছু করনীয় নেই। আর তিনি তো হঠাত্ এসে হাজিরা খাতায় সই করে চলে গেছেন। আমরা জানতাম না, দেখিও নাই। স্পিকারও জানতেন না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে চিফ হুইপ বলেন, ‘সংসদের ভেতরে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি লাগত। গেটে বা গেটের বাইরে আটক করা যেত। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংসদে পাঠানো হয়নি। যারা গেটে ছিলেন, তারা জানতেন না যে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।’
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ আরো বলেন, ‘সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার এই কাজে দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে আমি মনে করি না। এটা সংসদের ব্যাপার। তিনি একজন সংসদ সদস্য।’
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন