পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আকস্মিক বন্যায় ৫ জনের মৃত্যু, নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে
নিজের তৈরি প্লেন সফলভাবে আকাশে উড়িয়ে প্রশংসায় ভাসছেন অঙ্কন
আকাশে উড়ছে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের স্কুলশিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান অঙ্কনের তৈরি প্লেন। যা দেখে খুশি সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা। এইদিকে প্লেনটি সফলভাবে আকাশে উড়িয়ে প্রশংসায় ভাসছেন অঙ্কন। সরকারি সহায়তা পেলে ভালো কিছু করা সম্ভব বলে জানায় সে।
এই খবর শোনার পর সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল।
জানা গেছে, সাকিব আল হাসান অঙ্কন (১৬) কোটচাঁদপুর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শওকত আলীর ছেলে। এই বছর অঙ্গন কোটচাঁদপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল গ্রুপ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে অঙ্কন বড়।
সে ছোটবেলা থেকেই মেকানিক্যাল কাজের দিকে বেশি মনোযোগী ছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ আজ তার তৈরি প্লেন আকাশে উড়ছে।
সাকিব আল হাসান অঙ্কন বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিকস কাজ করতে আমার ভালো লাগত। ছোট থেকেই অল্প অল্প টাকা জমিয়ে কাজের যন্ত্রাংশ কিনতাম।
এরপর ইউটিউবে ড্রোন দেখে তা তৈরি করতে মন চাইল। কিনতে শুরু করলাম ড্রোন তৈরির সরঞ্জাম। কাজ শুরু করলাম ড্রোন তৈরির। একে একে দুটি ড্রোন তৈরি করেছিলাম ২০২৪ সালে। এরপর সেই ড্রোন আকাশে উড়িয়ে সফলও হয়েছিলাম।
ওই ড্রোন তৈরি করতে সব মিলিয়ে আমার ৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। যার পুরো সাপোর্ট পেয়েছিলাম আমার বাবার কাছ থেকে।’
এরপর এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে মাথায় ছিল প্লেন তৈরি করতে হবে। সেটা নিয়ে মাঝে মধ্যে কাজও করতাম। এরপর পরীক্ষা শেষে গত ৪ মাস প্রতিদিন ৪-৬ ঘণ্টা কাজ করে প্লেনটি তৈরি করেছি। যা ইতোমধ্যে আমাদের গ্রামের স্কুল মাঠের আকাশ উড়িয়েছি। সেদিনই এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছিল। আজ দ্বিতীয়বারের মতো প্লেনটি উড়ানো হলো। প্লেনটি তৈরি করতে গিয়ে আমি বেশ কয়েকবার ব্যর্থও হয়েছি। তবে সর্বশেষ চ্যাটজিপিটির সহায়তা নিয়ে আমি সফল হয়েছি।
প্লেন তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে অঙ্কন বলেন, ড্রোন তৈরির আগের মটর প্লেন তৈরির কাজে লাগানো হয়। কন্ট্রোলের জন্য ব্যবহার করা হয় ড্রোনের ফ্লাই স্কাই, এফএস- (১৬,)। ব্যবহার করা হয়েছে ৪ টি সার্ভো মোটর, ককসিট, যা দিয়ে বডি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে ১৪ কেবি ব্লাস লেস মোটর, ৮ ইঞ্চি পপুলার, পিএসসি ২টা, রিসিভার আই-৬, ২২ এমপি আরের লিকো ব্যাটারি, হার্ডবোড, এসএসপাইপ, বার্বিজ জুতার হুইল, পিবিসি ট্যাব।
ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘প্লেন তৈরিতে আমার ড্রোনের থেকে কম খরচ হয়েছে। কারণ ড্রোন তৈরির সেই সব সরঞ্জাম খুলে আমি প্লেন তৈরির কাজে লাগিয়েছি।’
সাকিব আল হাসান বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমার যা ব্যয় হয়েছে, তার সব সহযোগিতা আমার বাবা করেছেন। তবে বড় আকারে বাণিজ্যিকভাবে যদি প্লেন বা ড্রোন তৈরি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে কাজটি করতে অনেক ব্যয়বহুল হবে। যা আমার ও আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।’ আর সরকারি সহায়তা পেলে ভালো কিছু করা সম্ভব বলে জানায় সে।
পল্লী চিকিৎসক শওকত আলী বলেন, ‘অঙ্কন ছোটবেলা থেকে মেকানিক্যাল কাজের দিকে বেশি মনোযোগী। সে অনুযায়ী এসএসসিতে অঙ্কন ভোকেশনাল বিভাগের ইলেকট্রিক্যাল নিয়ে লেখাপড়া করেছে। তবে সে লেখাপড়ার পাশাপাশি ওই সব কাজের পেছনে দিনের একটা সময় দিত।’
এরপর ২০২৪ সালের দিকে দেখতে পায় একটা ড্রোন বানিয়ে উড়াতে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ওই সময় একটু রাগও করেছিলাম। তবে সে তার কাজ বন্ধ করেনি। এসএসসি পরীক্ষা পর আবারও মনোনিবেশ করে তার কাজে। গত ১০-১২ দিন হল দেখতে পাই তার হাতে প্লেন। যা সে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার আকাশে উড়িয়ে সফলও হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমার ছেলে যা কিছু করেছে, তা নিজের প্রচেষ্টায় করেছে। আমি তেমন কোনো সহযোগিতা করতে পারেনি। আমি সামনের দিনে সরকারের সহায়তা কামনা করছি। যাতে করে সে ভালো কিছু করে সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারে।’
স্থানীয় ট্রাক্টর ড্রাইভার কলম হোসেন বলেন, আমি মাঠে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করছিলাম। হঠাৎ মাথার ওপর প্লেনের মত কিছু উড়ছে দেখতে পাই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেলাম বলরামপুর গ্রামের শওকত ডাক্তারের ছেলে অঙ্কন ওই প্লেন বানিয়েছে। প্লেন বানানোর কথা জানতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তার মেধা কাজে লাগিয়ে আর কী করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করা হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন