আটককেন্দ্রে মেক্সিকান অভিবাসীর মৃত্যু, চলতি বছরে আইসিই হেফাজতে ১৪তম প্রাণহানি
বাংলাদেশকে স্বচ্ছতা বাড়ানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ করে না, বরং সীমিত কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয় বলে মনে করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এই দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের সরকারি কেনাকাটা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের নেওয়া সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি স্থগিত করেছে। এই প্রক্রিয়ায় কেনাকাটা-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে আরও কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।
ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট-২০২৫ বা আর্থিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদনটি শনিবার পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের আগের সরকারের সময় নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব ও প্রণীত বাজেট অনলাইনে সাধারণ জনগণের জন্য প্রকাশ করত। তবে বছরের শেষ হিসাব প্রতিবেদন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রকাশ করেনি। এছাড়া বাজেটের তথ্য সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিক মান অনুসারে হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাজেট নথি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রস্তুত করার চেষ্টা করা হয়। বাজেট ঘোষণার দিন যেসব নথিপত্র দেওয়া হয়, সেখানে নির্বাহী কার্যালয়ের ব্যয় আলাদাভাবে দেখানোসহ সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের চিত্র থাকে। তবে এখনও সরকারের সব দপ্তর অটোমেশন না হওয়ায় বছরের শেষে হিসাব প্রতিবেদন প্রকাশে কিছুটা দেরি হয়েছে। ধাপে ধাপে সব প্রতিষ্ঠান অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ কাজ সম্পূর্ণ হলে আরও আগে প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
নিরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা বিষয়ে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছে, সেটি পরিষ্কার নয়। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ের একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তবে এটা ঠিক যে, জনবল সংকটসহ নানা কারণে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশে কিছুটা দেরি হয়।
মার্কিন প্রতিবেদনে সরকারের দায়–দেনা প্রসঙ্গে বলা হয়, সরকারের ঋণের পরিমাণ কত, তা বাজেটে প্রকাশ করা হতো। বাজেট নথিতে সরকারের পরিকল্পিত ব্যয়, রাজস্ব আয়সহ প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে অর্জিত আয় দেখানো হতো। তবে তথ্য অসম্পূর্ণ থাকতো। বিশেষ করে নির্বাহী বিভাগের ব্যয় আলাদা করে দেখানো হতো না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বরাদ্দ ও আয় প্রকাশ করা হলেও রাজস্ব ও ব্যয়ের সম্পূর্ণ হিসাব পাওয়া যায়নি। সরকারি নিরীক্ষক সংস্থা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পুরো হিসাব যাচাই করতে পারেনি। যদিও কিছু সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মনে করছে, প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বতন্ত্র নয়।
বাজেট প্রণয়ন প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের সরকারের বাজেট কাঠামোতে পরিবর্তন আনেনি অন্তর্বর্তী সরকার। এ ক্ষেত্রে আগের কাঠামোই অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে সরকার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বাড়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে প্রশংসা করা হয় প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা আনতে আটটি পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে- বছরের হিসাব প্রতিবেদন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রকাশ, বাজেট নথি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রস্তুত, নির্বাহী কার্যালয়ের ব্যয় আলাদাভাবে দেখানো, বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করা। এছাড়া আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা নিশ্চিত, বাজেটের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, নিরীক্ষা প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ–সংক্রান্ত চুক্তির মূল তথ্য প্রকাশ করা।
শেয়ার করুন