দুবাই থেকে আসা ইমিরেটস কার্গো বিমান হংকংয়ে সাগরে পড়ল, ২ নিহত
দেশে জুলাই মাসে ক্রসফায়ারে নিহত ২০
জুলাই মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। জুলাই মাসে জঙ্গি হামলা ও ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নিহত ও আহত, শিশুধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার জুলাই মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
জুলাই মাসে দেশের অপরাধচিত্র তুলে ধরে বলা হয়- ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয় ২০ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত ১৮ জন এবং র্যাবের হাতে নিহত হয় ২ জন।
জুলাই মাসে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও ঝিনাইদহে জঙ্গি হামলা হয়। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গি নিহতের ঘটনা ঘটে। নাশকতায় জঙ্গিসহ মোট ৪৩ নিহত হয়। এর মধ্যে জঙ্গিদের হাতে ১৭ জন বিদেশি ও ৩ জন পুলিশ নিহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মোট ১৬ জন জঙ্গি নিহত হয়।
সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ১৩ জন। আহত হয়েছেন ৬০৭ জন। সামাজিক সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুমিল্লায় কবরস্থানের গাছ কাটা নিযে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমিজমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
জুলাই মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৮ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ১২ জন ও ১০ জন নারী। ৫ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে। সৈয়দপুরে জোড় করে অপহরণের পর বাড়িতে তিনদিন আটকে রেখে এক নারীকে ধর্ষণ করে এক ভণ্ডপীর। নারায়ণগঞ্জে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে সৎ পিতা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় জুলাই মাসে নিহত হয় ৭ জন এবং আহত হয় ৫৪ জন। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক কারণে আহত হয় ৫৪৯ জন ও নিহত হন ৬ জন।
জুলাই মাসে ১৭ শিশুকে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের শিকার হয় আরো ৮ জন। ময়মনসিংহে পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যা করা হয় এক কিশোরকে। নওগাঁয় আরাফাত হোসেন নামে এক শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরীয়তপুরে প্রতিবেশি এক নারীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ছয় মাসের এক শিশু নিহত হয়। নারায়ণগঞ্জের একটি তুলা কারখানায় একজন শিশু শ্রমিককে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
এ মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৮ জন। এদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী। বছরের প্রথম সাত মাসে মোট ২৪৯ জন আত্মহত্যা করে, সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ৭৮ জন ও সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে ৪ জন।
জুন মাসে দেশে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন ১১৭ জন ও আহত হয় ৮৭ জন। ১৫ জুলাই টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায় নার্গিস বেগম নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৫ জুলাই ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২১ জুলাই রাজধানীতে প্রকাশ্যে এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে- মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরস্কার, সামাজিক সংগঠন ও স্কুল-কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন