বাঁইর বানিয়ে ৪ হাজার পরিবারের ভাগ্য বদল
নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার বাউশী ইউনিয়নে বাঁইর বানানোর কাজ করে ভাগ্য বদল করেছে সাত গ্রামের চার হাজার পরিবার। এক সময় মাছ বিক্রি ছিল তাদের একমাত্র পেশা। কালের আবর্তে মাছ দুর্লভ হয়ে উঠলে তারা বাঁইর তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের উদ্যোগ নেয়। এই বাঁইর তৈরির কাজ বর্তমানে এলকায় আলোচিত কুটির শিল্পে রূপ নিয়েছে। কারিগররা হয়ে উঠেছে স্বাবলম্বী।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ বাঁইর তৈরির কাজ করছে।
ভেটুয়াকান্দা গ্রামের আব্দুল হাই জাগো নিউজকে জানান, সবাই কোনো না কোনোভাবে এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। খোকন মিয়ার মেয়ে স্মৃতি হাই স্কুলে পড়ে। তার ভাষ্য, আমি বাবার কাছে টাকা চাই না। আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে জামা-কাপড়, বইপত্র কিনি।
ঠিক এভাবেই গ্রামের সবাই উপার্জন করেন। আর এই উপার্জনের টাকায় তারা সংসার চালান। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ জোগান। কেউ বা জমিও কেনেন।
বাঁইর হচ্ছে, মাছ ধরার এক প্রকার ফাঁদ। স্থানীয়ভাবে বাঁইর বলা হয়। বাঁইর তৈরির জন্য বাঁশ ও নায়লন সুতা ব্যবহার করা হয়।
জানা যায়, জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের ভেটুয়াকান্দা, শেখেরপাড়া, সুসং-ধোবাহালা, ময়মনসিংহ-ধোবাহালা, চানপুর, দেবীপুর ও সাধুয়ারকান্দাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের প্রায় চার হাজার পরিবারের ১৫ হাজার সদস্য বাঁইর তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন।
ভেটুয়াকান্দা গ্রামের সিরাজ আলী জাগো নিউজকে জানান, একদল লোক বাঁশ কেটে ফলি তৈরি করেন। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ নারীরা হাঁরা তৈরি করেন। আর এক দল বানা ও ডালা সেলাইয়ের কাজ করেন। অন্য এক দল লোক সবকিছু একত্র করে বাঁইর তৈরি করেন। প্রতি ১০০ পিস বানার মূল্য তিন হাজার টাকা, ১০০ পিস ডালার মূল্য এক হাজার ৫০০ টাকা, ১০০ পিস হারার মূল্য এক হাজার টাকা।
স্থানীয় জসিম উদ্দিন নামে এক কারিগর জাগো নিউজকে জানান, ৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ইঞ্চি প্রস্থের বাক্স আকৃতির প্রতিটি বাঁইর তৈরিতে নিজস্ব শ্রম মূল্য বাদে ১৫০ টাকা খরচ হয়। বিক্রয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
ভেটুয়াকান্দা গ্রামের আব্দুর রব, মিরাজ আলী জানান, নেত্রকোণার সব উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাঁইর কিনে নিয়ে যান। তবে এলাকায় সড়ক পথের উন্নতি হলে তাদের সুবিধা আরো বাড়বে বলেও জানান তারা।
বাউশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারেক হাবিব হবি জানান, পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে বাঁইর কারিগরদের অনেকেই এক প্রকার হতাশায় ভোগছেন। তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ প্রয়োজন।
এসব কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই শিল্পকে আরো সম্প্রসারিত করা হবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, জেলার বিসিক’র ভারপ্রাপ্ত উপ-ব্যবস্থাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।
শেয়ার করুন