নরওয়াকে পালশালার বাইরে গুলি বর্ষণের ঘটনায় দুইজন আহত, বন্দুকধারীকে খুঁজছে পুলিশ
যাদের ধরা হচ্ছে, তারা জঙ্গি কি না- সন্দেহ খালেদার
জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে যাদের ধরা হচ্ছে, তারা ‘আসলেই জঙ্গি কি না’ সেই প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘জঙ্গিদের জীবিত ধরা হচ্ছে না কেন?’
জঙ্গিদের ধরে তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য বের করার আগেই ‘মেরে ফেলার’ নেপথ্যে রহস্য আছে বলেও মনে করেন বিএনপি নেত্রী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। দলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এর আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে প্রথম জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। যশোরের উদীচী, সিপিবির মিটিংয়ে, রমনার বটমূলে, গোপালগঞ্জসহ অন্যত্র হামলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সব ঘটনায় কোনো জঙ্গি ধরা পড়েনি।
বিএনপি সরকারে আসার পর সেসব জঙ্গিদের ধরা হয়েছে- দাবি করে তিনি বলেন, ‘জেএমবিকে, হরকাতুল জিহাদকে নিষিদ্ধ করেছি। বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান এদের জীবিত ধরেছি। জীবিত ধরার কারণ তাদের কাছ থেকে সব তথ্য বের করা।’
‘কিন্তু এই সরকার কিছু দিন পরপর জঙ্গি ধোয়া তোলে। অমুক জায়গায় জঙ্গি আছে, এতজন জঙ্গি পাওয়া গেছে.. সত্যিকারের জঙ্গি কি না জানি না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘কিছু লোক তাদের ধরা থাকে। এরা দীর্ঘদিন না খেতে খেতে, রেখে রেখে দাড়ি-চুল এত বড় হয় যে, বিদঘুটে একটি চেহারা হয়ে যায়। তারপর তাদের জঙ্গি বলে সামনে নিয়ে আসে। আর পুলিশের গতানুগতিক কিছু আছে, অস্ত্রটস্ত্র সাজিয়ে নিয়ে এসে বলে এরা জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ। তারা এই করেছে, সেই করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু দিন পরে দেখা যায়, যাদের ধরা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে কি তথ্য পেয়েছে তা প্রকাশ হয় না। গুলি করে তাদের মেরে ফেলা হয়। কেন? এখানে তো আইন আছে, আদালত আছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আদালতে যা সাজা হয় তাই হবে। গুলি করে মারার রহস্য কী? রহস্য কিছু একটি আছে।’
দেশে বিচার বলতে কিছু নেই মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘যেখানে ন্যায়বিচার থাকে না, গণতন্ত্র বলতে কিছু থাকে না, সেখানে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আইনের শাসন সকলের জন্য সমান নয়। আওয়ামী লীগ হলে এক রকম আর বিএনপি ও সাধারণ মানুষ হলে আরেক রকম। আওয়ামী লীগের লোকেরা অপরাধ করলে, লুটপাট করলে, তারা অপরাধী হয় না। তাদের কিছুই বলা হয় না। অন্যদিকে বিএনপি, অন্য দল বা সাধারণ মানুষ হলে কিছু না করলেও তাদের সাজা ভোগ করতে হয়।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
‘যত চুক্তি দেখি সেগুলোর কোনোটাই দেশের স্বার্থে নয়। সমস্ত কিছু করা হচ্ছে, দেশের স্বার্থবিরোধী, জনগণের বিরোধী। কী সেই চুক্তি তা সবাই জানে না, আমরাও জানি না।’
রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে বলে নিজের দেওয়া বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘রামপাল প্রজেক্ট নিয়ে যেসব কথা বলেছি, তারা কোনো পয়েন্টের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। রামপাল প্রজেক্ট হওয়া উচিত নয়। তাহলে ওই অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এমনিতেই ওই এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এটা হলে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। বিদুৎকেন্দ্র এমন জায়গায় হবে যেখানে মানুষ ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।’
দেশের সম্প্রতি বন্যা পরিস্থিতির জন্য ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এর প্রতিবাদ করতে হবে।’
‘বন্ধু বলে এদের কিছু বলা যাবে না, তা হয় না। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আলোচনা হতে হবে। একজন বন্ধু আরেক বন্ধু সমমর্যাদার ভিত্তিতে সহায়তা করবে। তারা যদি মনে করে, তাদের মাথা উঁচু থাকবে, আর আমাদের নিচু থাকবে- সেটি বন্ধুত্ব হয় না। নিজেদের প্রাপ্যতা আদায় করে নেওয়া উচিত।’
এ সময় ফারাক্কা বাঁধের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি নেত্রী।
পদ্ধাসেতু প্রকল্পের খরচ বাড়ার জন্য এর নেপথ্যে ‘কমিশন বাণিজ্য’ রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘পদ্ধাসেতু প্রকল্পে খরচ বাড়ছে, আরো বাড়বে। আমরা দেখে যেতে পারবো কি না, জানি না। এই খরচ বাড়ার কারণ কমিশন। সেতুতে ভালো অত্যাধুনিক জিনিস দিচ্ছে বলে খরচ বাড়ছে না। প্রত্যেকটি কাজের জন্য কমিশন দিতে হচ্ছে। এই টাকা আবার দেশে থাকে তা নয়। টাকা চলে যায় দেশের বাইরে।’
খালেদা জিয়া বলেন, দেশ পরিচালনায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের দূরদর্শিতা ছিল বলেই তার সময়ে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছিল। উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিল্পায়ন, জনশক্তি রপ্তানি, পোশাক খাতের উন্নয়নসহ জিয়াউর রহমান সরকারের সময়ে নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
এ ছাড়া দর্শক সারিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ার করুন